পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পরিকল্পনা করা হয় আগের রাতেই। ‘০০৭’ নামে ফেসবুক মেসেঞ্জারের একটি গ্রুপে এ পরিকল্পনা করা হয়। ওই গ্রুপেই কে কখন কী অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই পরদিন সকালে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এদিকে, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তে গাফলতি পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই মেসেঞ্জারের কথপোকথনের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ঘাতক রিফাত ফরায়েজী আগের দিন রাত ৮টার দিকে মেসেঞ্জার ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেয়। এ সময় ওই গ্রুপের মোহাম্মদ ও সাগর নামের দু’জন জানতে চান- তাদের কোথায় ও কখন থাকতে হবে? জবাবে রিফাত তাদের বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল ৯টায় থাকতে বলে।
স্ক্রিনশটে আরও দেখা যায়, রিফাত গ্রুপে ‘দা’ এর একটি ছবি দিয়ে বলেন, পারলে এইটা নিয়া থাইকো। তখন মোহাম্মদ নামীয় ব্যক্তি ‘দা’ নিয়ে হাজির থাকবে বলে জবাব দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এই গ্রুপের নাম রাখা হয়েছে ০০৭। মেসেঞ্জারের গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে হত্যাকান্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড। জানা গেছে ‘বন্ড’ অংশটি নিজের নামের সঙ্গে নয়ন নিজেই জুড়ে দিয়েছে। আর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরায়েজী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কেবল মেসেঞ্জারে নয়, বাস্তবেও ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করে নয়ন। দীর্ঘদিন ধরে বরগুনার কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজি স্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছে তারা। তাদের সংকেত ছিল ০০৭। এই সংকেত নয়নের মোটরসাইকেল ও বাড়ির দেয়ালেও আঁকা আছে।
স্থানীয়রা অভিযোগে বলেন, নয়নের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি পলিটকেনিক কলেজের শিক্ষার্থীদের মেসগুলোতে নিয়মিত হানা দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনতাইসহ জোর করে টাকা আদায় করত। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ধানসিঁড়ি এলাকায় ঘুরতে যাওয়া মানুষদের কাছ থেকেও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। বরগুনা পলিটকেনিকের কয়েকজন ছাত্র জানান, ০০৭ বন্ড বাহিনীর দাপটে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গ্রুপের সদস্যরা টাকা আদায় ছাড়াও কারো সঙ্গে মেয়ে থাকলে জিম্মি করে মারধর করে সর্বোস্ব হাতিয়ে নিত।
স্থানীয়রা বলেন, ২০১৭ সালে রাকিব নামের এক কিশোর ও গত বছর ক্রোক এলাকার ফারুক পিয়াদার ছেলে জীবনকে কুপিয়ে জখমসহ বেশকিছু সহিংস ঘটনার সঙ্গে এই ০০৭ গ্রুপটি জড়িত। তাদের সব অপরাধে নয়ন সরাসরি অংশ না নিলেও তার নির্দেশনায় রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে গ্রুপের সদস্যরা অপকর্ম করতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাদক ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নয়ন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। তার বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গত বছর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার প্রতিপক্ষের লোকের এই গ্রুপটিকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় এনেছিল। তখন নয়নসহ গ্রুপের সদস্যরা তার ওপর হামলা করলেও তিনি ওই ঘটনার বিচার এখনো পাননি।
স্থানীয় কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম নান্না বলেন, গ্রুপটির কুকীর্তির কথা এলাকার সবাই জানে। ছাত্রদের মেস থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছাত্ররা বিচার চাইলে নয়ন আমার ওপরে হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তৎকালীন পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
তদন্তে গাফিলতি হলে কেউ ছাড় পাবে না
এদিকে, বরগুনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দেশের সর্বস্তরে ভাইরাল হওয়া বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের তিন দিন অতিবাহিত হলেও প্রধান আসামিরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিহত রিফাতের পরিবারের সদস্যরা। ফুঁসে উঠতেছে বরগুনাবাসী। পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তে কারো গাফলতি পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে তিনি আরো বলেন, এ মামলায় ইতোমধ্যে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের ধরার জন্য একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আসামিরা যাতে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সর্বত্র সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইজিপি সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে একটি মহল নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সাথে সন্ত্রাসী নয়নের একটি ছবি ফেজবুকে পোষ্ট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পায়তারা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে মিন্নির বক্তব্য হচ্ছে, ওটা একটা অনুষ্ঠানের ছবি। নয়নের সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। বরং বিয়ের আগে ও পরে নয়ন তাকে ডিস্টার্ব করত। যা পরিবারের সদস্যরা জানত।
তিনি আরো বলেন, রিফাত শরীফের সাথে পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমার বিয়ে হয়েছে। রিফাত আমার স্বামী, তাকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা করার প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। আমার চোখের সামনে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, এর চেয়ে নির্মম বেদনা আর কি হতে পারে। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং এখন পর্যন্ত মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।