পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ৮২ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৮ দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে পাঁচগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ। এতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়নের অন্তত ১৫ গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে বেশকিছু কাঁচা ঘর। ভেসে গেছে অনেকের পুকুর ও খামারের মাছ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্যদিকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করেছে জেলার নিম্নাঞ্চলে। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ধরলার পানির তোড়ে সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে ধরলা নদীতে প্রায় দুই ফুট পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের কুলাঘাট-শিবেরকুটি সড়কের ১২০ ফিট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ।
জানা গেছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২৪ ঘন্টায় ৪১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় ৪১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া, বড়পাড়া, বিলপাড়, নবীনগর, সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর, সুরমা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভঁ‚ইয়া জানান, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে বিকেলে ৩টায় ৭ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদ সীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর। ৭ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করলেই বিপদ সীমা ধরা হয়। তিনি আরও জানান, শনিবার পর্যন্ত একই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়াও জেলার ১১ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাঁচগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁও, ধারাপাড়া, শিংকাটা, নয়াচৈতাপাড়া, রামনাথপুর, নংক্লাই, কৃষ্টপুর, রায়পুর, নতুন বাজার, বারমারা, খারনৈ ইউনিয়নের সুন্দরীঘাট, বাউশাম, ভাষাণকুড়া ও লেংগুরা ইউনিয়নের চৈতা, লেংগুরা বাজার, ফুলবাড়ী, ঝিকাতলা ও শিবপুর গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া কলমাকান্দা-পাঁচগাঁও পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরই মধ্যে খারনৈর সুন্দরীঘাট-বাউশাম কাঁচা রাস্তার দুই পাশের মাটি ধসে গেছে। দেবে গেছে বাউশা বাজার সেতু। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিংকাটা গ্রামের নুরুল ইসলান ও চৈতা গ্রামের ঈসমাইল মিয়া বলেন, বাড়ির ভেতরে পানি প্রবেশ করায় আমরা রান্না করতে পারছি না। নকলাই গ্রামের বাসিন্দা মাহালার মারটিং রংরিং বলেন, বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় আমার বসতঘরটি ভেঙে গেছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এ বিষয়ে রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন বলেন, আমার এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে আমি ও আমার ইউনিয়নের মেম্বাররা একটি প্রশিক্ষণে আছি। এলাকায় যেতে পারছি না।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ে পাহাড়ে অতিবৃষ্টি হলে কলমাকান্দার নিচু অঞ্চলে পানি ঢুকে যায়। আবার কয়েক ঘণ্টা পর পানি নেমে যায়। পুনরায় বৃষ্টি না হলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে।
এদিকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে দুধকুমারসহ অন্য নদ-নদীর পানিও। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা দেখা দেবে। এরই মধ্যে নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামের ধরলা পাড়ের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, দুদিন থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা চরযাত্রাপুরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। দু-একদিনের মধ্যেই চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়বে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় নদ ব্রহ্মপুত্রে যেহেতু পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, সেহেতু বন্যা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন বন্যা মোকামেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমাদের লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাটে ধরলার পানির তোড়ে সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, ধরলা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাড়তে শুরু করে। পানির চাপে একপর্যায়ে কুলাঘাট-শিবেরকুটি পাকা সড়কের ১২০ ফুট ভেঙে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি ও বোয়ালমারী গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ। চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়রা নৌকায় চড়ে উপজেলা ও জেলা সদরে যোগাযোগ করছেন। এছাড়া সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পানি ঢুকে ভেসে গেছে জলাশয়ের কয়েক লাখ টাকার মাছ। বিপাকে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা। আর স্থানীয় লোকজনকে টাকা খরচ করে পাড়ি দিতে হচ্ছে ভাঙনকবলিত এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটির নিচে শুধু বালি থাকায় এবং এর ভেতর নদীর পানি প্রবেশ করায় ভেঙে গেছে। সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় এখন চলাচল করতে ব্যবহার করতে হচ্ছে ভেলা অথবা নৌকা। তবে নৌকায় পারাপার হতে দিতে হচ্ছে জনপ্রতি ১০ টাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই গ্রামের মানুষ। মৎস্যজীবীরা জানান, সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় নদীর পানি জলাশয়ে ঢুকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মাছ নদীতে চলে গেছে। সরকার ক্ষতিপূরণ না দিলে তারা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন না।
সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকার লোকজনদের চলাচলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বজলে করিম জানান, সড়কটি দীর্ঘদিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় অবহেলায় ছিল এটি। এর নিচে শুধু বালির স্তর থাকায় নদীর পানি সহজেই রিং স্ল্যাপের মাধ্যমে সড়কটির ভেতরে প্রবেশ করায় তা ভেঙে যায়। জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে এলাকাবাসীর যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।