পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বগুড়ার ব্যাংক পাড়ায় মূর্তমান এক আতঙ্কের নাম জহুরুল হক মোমিন পরিবার। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি জহুরুল হক মোমিন, মোমিনের স্ত্রী শিরিন আখতার ঝুনু, ভাই এনামুল হক বাবু এবং বাবুর স্ত্রী আইরিন হক রুমা। বগুড়ার ব্যাংক পাড়ায় পরিবারটি এখন আতঙ্কের খড়গ নিয়ে আসন গেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা নিজেদের অসহায়ত্বই প্রকাশ করে যাচ্ছেন। পরিবারের প্রধান জহুরুল হক মোমিন অবশ্য ব্যাংকের মামলায় জেল খেটে এখন জামিনে আছেন। অপরদিকে ২০১২ সাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে ছিলেন মোমিনের স্ত্রী শিরিন। গত বছরের ১১ জুন মধ্যরাতে তিনিও বগুড়ার জলেশ্বরীতলা এলাকা থেকে শপিং করার সময় গ্রেফতার হন। তবে গ্রেফতারের মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যেই জামিনে ছাড়া পান। বিশেষ ক্ষমতা বলেই ওই দম্পত্তি আইনের অলিগলি দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য নিয়ে দেখা যায়, শুধু জহুরুল হক মোমিনের নামেই অর্থঋণ আদালতে ৮টি মামলা রয়েছে। আট মামলায় এই দম্পতির কাছে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি পাবে বিভিন্ন ব্যাংক। আর পুরো পরিবার মিলে ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। মোমিনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অর্থঋণ আদালতে ৮টি মামলায় ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে রায়ও দেয়া হয়। সেখানে তাকে পৃথকভাবে প্রতিটি মামলায় ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং জরিমানা করা হয়। যথাক্রমে ২৩৬/২০০৯ নং মামলায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, ৮৮/২০০৯ নং মামলায় ২১ কোটি ৯৪ লাখ, ৮৯/২০০৯ নং মামলায় ৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ৪১৫/২০০৯ নং মামলায় ১০ কোটি টাকা, ৫১৮/২০০৯ নং মামলায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ১২১/২০০৯ নং মামলায় ৫১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ১২২/২০০৯ নং মামলায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৪১৬/২০০৯ নং মামলায় ৩ কোটি টাকা সাজাপ্রাপ্ত হয়।
এছাড়াও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখা থেকে রিমা ফ্লাওয়ার মিলের নামে জহুরুল হক মোমিন ১২ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার, এনামুল হক বাবুর স্ত্রী আইরিন হক রুমার কাছে ব্যাংকের বর্তমান পাওনা ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এছাড়াও এ শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি চক্র ৪১ কোটি টাকা উত্তোলন করে। সেই মামলাটি এখন দুদক পরিচালনা করছে। ওই মামলায় জহুরুল হক মোমিন ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার এবং তার আপন ভাই এনামুল হক বাবু ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫ হাজার আত্মসাৎ করেছে। সে মামলায় দুই ভাই বর্তমানে ওয়ারেন্টের আসামি।
ইসলামী ব্যাংকের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, শিরিন আখতার ঝুনু তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান শিরিন ট্রেডিং এ্যান্ড কোম্পানির নামে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখা থেকে বিভিন্ন সময় ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। ব্যাংক বিভিন্ন ভাবে তার সাথে কথা বলেও টাকা আদায় করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের ২ আগস্ট বগুড়া জেলা অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে ব্যাংক। তৎকালীন ব্যাংকের বগুড়া শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা রেজাউল করিম মামলার বাদী হন। ওই মামলায় আদালত ২০১২ সালের ১৬ জুলাই ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৬ টাকা পরিশোধ এবং তাকে গ্রেফতারের আদেশ দেন।
অপরদিকে শিরিনের স্বামী জহুরুল হক মোমিন ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখা, প্রাইম ব্যাংক, এসআইবিএল ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক তাদের বন্ধক সম্পত্তি দখল করেছে। ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখা মোমিনের বিরুদ্ধেও মামলা করে। সেই মামলায় মোমিন ইতোমধ্যে জেলও খেটেছেন।
ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান তৌহিদ রেজা জানান, মাহিন ফুড-এর মালিক জহুরুল হক মোমিনের কাছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে লিমিটেড এর বর্তমানে মোট পাওনা ৩১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯০ টাকা। টাকা পেতে এনআই ধারায় মোমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো। ওই মামলায় রায় হলেও কার্যকর হয়নি এখনো। তিনি জানান, পরে সার্টিফিকেট শাখায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলো। তখন আদালতে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে টাকা ফেরতের মুচলেকা দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের কাছে তার দেয়া ওয়াদা এখন পর্যন্ত রক্ষা করেননি। উল্টো সে ওই মামলার বিপরীতে হাইকোর্টে রিট করে সময় ক্ষেপন করছেন। ইতোমধ্যে সে আদালতে রিট করেই ১০ বছর পার করেছে। আদালত যতবার ব্যাংকের পক্ষে রায় দেন ততোবার তিনি রিট করেন। মোমিনের করা সর্বশেষ আপিলও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
ইতোমধ্যেই ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিম্ন আদালত ব্যাংককে বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে সে আবারো আপিল করে। সেই আপিলও আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। মোমিনের স্ত্রী শিরিন আখতার ঝুনুর কাছে বর্তমানে ব্যাংক পায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালে ১১ জুন মোমিনের স্ত্রী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তখনও সে আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নিয়েছেন। পরবর্তীতে অর্ধেক টাকা পরিশোধের কথা বললেও এখনো কোন টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করেননি। পরিবারটি বরাবরেই আদালত এবং আইনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে।
অপরদিকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখা সূত্রে জানা যায়, রিমা ফ্লাওয়ার মিলের মালিক জহুরুল হক মোমিনের কাছে ব্যাংক ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার এবং তার আপন ভাই নিলয় এন্টারপ্রাইজ এর মালিক এনামুল হক বাবু ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫ হাজার ব্যাংক থেকে জালিয়াতির করে টাকা উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও ব্যাংক তাদের কাছে আরো ১৬ কোটি কাটা পাবে। ফলে মামলা করা হয়েছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। ওই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও ওই দুই ভাই গ্রেফতার হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের টাকাও আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে এই দম্পতির সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠতে পারছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা তারা ঋণ নিয়ে নিজেদের অঢেল সম্পত্তি করেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের সহজ কিস্তির সুযোগ করে দেয়ার প্রস্তাব দিলেও তারা কথা শোনননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।