Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুনিদের গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম


বরগুনায় প্রকাশ্য সড়কে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শিগগির গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানান। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ হয়েছে। পদ্মা সেতুর এ অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন সেতুমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ঘটনায় অলরেডি একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছে। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাতকে (২৩) কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। এ সময় তার স্ত্রী বাধা দিয়েও তাদের আটকাতে পারেননি। তাকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বুধবার রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করার পর তাদের মধ্যে চন্দন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে এটা একটা নৃশংস ঘটনা, একটা মর্মান্তিক ঘটনা। আমি যতটা পুলিশ সোর্সে জানতে পেরেছি এবং আমাদের মিডিয়ায়ও খবর এসেছেÑ বিষয়টি অনেকটা ব্যক্তিগত সম্পর্কের... প্রেমঘটিত একটা বিষয়। সেখান থেকে ব্যক্তিগত বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটেছে খুব নগ্নভাবে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের একজন ইউপি সদস্যকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এটা কী বলা যায়? এগুলো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। রূপগঞ্জের ঘটনার শিকার রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও ঘটনাটা তো রাজনৈতিক কারণে হয়নি। দেশে বিরোধী দল আছে কিন্তু তারা এমন কোনো পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে পারেনি। যেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। বরং তারা নিজেরা নিজেদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত। তাদের দলীয় অফিসে তালা দিচ্ছে তাদেরই লোকেরা। এটাকে যদি অবনতি বলেন তবে অবনতি হতে পারে।

পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যার বিচার হলে ঘটনা কি কোনো পুনরাবৃত্তি হতো- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যার একটা রায় তো হয়েছে। কিভাবে বলেন, বিচার হয়নি। বিচার কার্যক্রম চলছে। অনেকের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, যাবজ্জীবন হয়েছে। সরকারের নমনীয় অবস্থানের কোনো প্রমাণ এখানে নেই। বিচারটা নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে যাবে। তারপর আপিল বিভাগে যাবে, সবকিছু মিলিয়ে তো এটা একটা বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এখানে সরকার তো কোনো ছাড় দেবে না।

পদ্মা সেতুর অগ্রগতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ১৩তম স্প্যান বসানোর পর ১৪তম স্প্যান বসানোর প্রক্রিয়া আছে। তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য স্প্যানটি বসানো যায়নি। তবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেকোনো সময় ১৪তম স্প্যান বসবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে এখন আর কোনো বাধা নেই। মাটির অবস্থা খারাপ থাকায় আমরা এক সময় খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু সে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে, এখন পদ্মা সেতুর কাজ যথারীতি চলছে এবং আমি অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে পদ্মা নদীর ওপর হচ্ছে দ্বিতল পদ্মা সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সাহস ও সক্ষমতার সঙ্গে আন্দোলন করে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি আনতে পারলে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। দলীয় প্রধানের জামিনে ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ বিএনপি তুলেছে তা নিয়ে কাদের বলেন, আমি বারবার বলেছি, এখানে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, কোনো প্রকার বাধা ও হস্তক্ষেপ আগেও করেনি এখনও করবে না।

বুধবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইনশাল্লাহ মুক্তি হবে। আমি গত সপ্তাহে বলেছিলাম, এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে দু’টির জামিন হয়েছে। আরো দু’টি জামিনের অপেক্ষায় আছি। আমি আশা করছি, তিনি খুব শিগগিরই আবার আমাদের মাঝে জামিনের মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসবেন এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যদি তাদের সাহস থাকে, সক্ষমতা থাকে আন্দোলন করে মুক্তি নিয়ে আসুক আমাদের কোনো আপত্তি নেই, যেভাবে আনুক। বেগম জিয়াকে নিয়ে তারা আন্দোলন করুক না। অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে, মুক্তি নিয়ে কোনো আন্দোলন আজ পর্যন্ত করতে পারেনি।

কাদের বলেন, ৫০০ লোক নিয়ে একটি মিছিলও বিএনপি বের করতে পারেনি। এটা কি তাদের দুর্বলতা না? তাদের আন্দোলন করার সাহস বা সক্ষমতা কোনোটাই নেই। তারা তাদের বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুক। একদিকে তারা নির্বাচনে ব্যর্থ অন্যদিকে আন্দোলনেও ব্যর্থ। বাংলাদেশে এরকম ব্যর্থ বিরোধী দল ইতিহাসে আমার জানামতে এর আগে কখনো দেখিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ