Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রসার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর : এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিংয়ে সরাসরি যোগাযোগ প্রক্রিয়া

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বাংলাদেশ ও চীনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরকে ঘিরে বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারের এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জোরদারের আশাবাদ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো বাড়বে এতে সন্দেহ নেই।

সফরকালে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ-শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে চীন সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এটি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে। ‘পূর্বমুখী অর্থনৈতিক ক‚টনীতি’র আলোকে চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা।

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন অগ্রণী। গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, শিল্পায়ন-বিনিয়োগ, যোগাযোগ খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে করবে আরও গতিশীল। দীর্ঘদিন আগেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশের ওপর দিয়ে সরাসরি সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরের মধ্যদিয়ে। যার সুফল ভোগ করবে দেশের জনগণ।

জাতিসংঘের বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাড-এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার সমপরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এরমধ্যে চীনের বিনিয়োগ ১০৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশে গত একবছরে চীনই একক বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসার হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দর-শিপিং, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ-শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি কৌশল বিনিময়, সার্ভিস খাত, কৃষি-খামার, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, পর্যটন ও মানবদক্ষতা উন্নয়নে দেশ এগিয়ে যাবে।

অর্থনীতির জন্য খুলবে সমৃদ্ধি দ্বার। দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান ‘নিউক্লিয়াসে’ পরিণত হবে চট্টগ্রাম। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশে প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। যার এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বিগত ১৪ অক্টোবর’১৬ইং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল, আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক জোনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ী জ্বালানিকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পজোনে চীনের বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন কাজ শুরু করেছে।

হিউয়েন সাং, ফা হিয়েন এবং আরো অনেক পরিব্রাজক, বণিক চট্টগ্রাম বন্দরে সওদাগরী জাহাজবহর ভিড়িয়ে হাজার বছর অতীতকালে চীন-বাংলাদেশ যোগাযোগ সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করেন। চীন বর্তমান বিশ্বে উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় ধারাবাহিক সহযোগী। সর্বাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জয় করে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে বিশ্বজোড়া ব্যাপক বাজার চাহিদাকে চীন নিজের আয়ত্তে রেখে চলেছে।

চীনের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ভৌগোলিকভাবে সহজ। কিন্তু বাস্তবে কঠিন। চট্টগ্রামের পূর্বদিকে ৬শ’ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে চীনের সুপ্রাচীন প্রদেশ ইউনানের রাজধানী ও বাণিজ্যিক নগরী কুনমিং। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের কিছু এলাকার ওপর দিয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত আন্তঃদেশীয় মহাসড়কটি নির্মিত হলে সরাসরি বাংলাদেশের শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রফতানি হবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুনদুম হয়ে মিয়ানমার দিয়ে চীনে রেলপথ বিস্তৃত হলে বিশাল রফতানি বাজার খুলে যাবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপক অংশে।

পরিবহন খরচ অনেক হ্রাস পাবে। বর্তমানে এ অঞ্চলে শিপিং পরিবহনে পণ্য রফতানিতে দীর্ঘ ঘুরপথে ১৫ থেকে ২২ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ কারণে রফতানিকারকগণ উৎসাহ পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, চীনের সাথে ঐতিহাসিক ‘সিল্ক-রুট’ ছিল চীনের সাথে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম। এটি পুনরুজ্জীবিত করা হলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে।

চীনে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হস্ত ও কুটির শিল্প, তৈরিপোশাক, ওষুধ ও পেটেন্ট দ্রব্য, সৌখিন ও গৃহস্থালী পণ্যসামগ্রীসহ অনেক ধরনের পণ্যের বাজার চাহিদা রয়েছে। আর চীনা শিল্পোদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশে সুলভ শ্রম, স্থান সংকুলান সুবিধাসহ বিনিয়োগ বান্ধব সুযোগ গ্রহণ করে হালকা প্রকৌশল, সংযোজন খাতসহ শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর (রি-লোকেট) করতে প্রবল আগ্রহী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ