পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রকাশনা শিল্প সচল রাখতে এবং উন্নত মানের ছাপার জন্য বিদেশী কালি আমদানি অপরিহার্য। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই কালি আমদানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে এই শিল্পকে। অভিযোগ রয়েছে দেশে কিছু কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত নিম্নমানের কালির একচেটিয়া বাজার সৃষ্ট করতেই এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছে। উন্নত মানের কালি আমদানিতে শুল্ক বসিয়ে তারা নিম্নমানের কালির একচেটিয়া বাজার চায়। সেই ফাঁদে পা দিয়েই কার্যত: কালির ওপর আমদানি কর বসানোর প্রস্তাবনা করা হয়েছে। অংশীজনদের বক্তব্য এ ধরণের সিদ্ধান্ত একদিকে দেশের ছাপাখানা শিল্পের ছাপার মান নিম্নমুখি করবে; অন্যদিকে দেশিয় কালি উৎপাদনের নামে নিম্নমানের কালি অধিকমূল্যে ক্রেতাদের ক্রয়ে বাধ্য করা হবে। জানতে চাইলে এক প্রিন্টিং ব্যবসায়ী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয়ভাবে কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার দোহাই দিয়ে দেশের মূদ্রণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। এ ধরণের পদক্ষেপ হবে গুটি কয়েক ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় আত্মঘাতি পদক্ষেপ।
দেশের মুদ্রণ শিল্পে ছাপার মান এখনো আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। আর আন্তর্জাতিক ছাপার মান নির্ভর করে উন্নত মানের কালি ব্যবহারের উপর। একই সঙ্গে ছাপার মান অনেকাংশেই নির্ভর করে কালো কালির মানের উপর। যা দেশে উৎপাদিত কালির দ্বারা কোনভাবেই স¤ভব নয়। এই কালির পুরোটাই আমদানি করতে হয়। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে কালো কালির দাম রঙ্গিন কালির প্রায় অর্ধেক থাকা সত্তে¡ও ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী রঙ্গিন কালির সমমূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আমদানী মূল্য যা-ই উল্লেখ থাকুক না কেন কালো কালিসহ সর্বপ্রকার প্রিন্টের কালির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ ডলার এসেসাবল ভেল্যু নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করার বিধান চালু করা হয়। এতে বিদেশ থেকে কালো কালি আমদানি সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বাণিজ্যিক আমদানীকারকরা একটি বড় ধরনের হোচট খায় এবং বাণিজ্যিক আমদানীকারকরা বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হয়। বাধ্য হয়েই বাণিজ্যিক আমদানীকারকরা কিছুটা মূল্য বৃদ্ধি করে দীর্ঘদিন তারা তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। সেই সুযোগে স্থানীয় ২/১টি নিম্নমানের কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত নিম্ন মানের কালি বাজারজাত করে ফায়দা লুটে আসছিল দিনের পর দিন। ফলশ্রুতিতে ছাপার মান দিন দিন হতে থাকে নিম্ন মানের।
এদিকে সরকারের রাজস্ব খাতে সর্বশেষ ও বিপদজনক আঘাত হচ্ছে ২০১৯-২০২০ সালের কাস্টমস্ ú্জ্ঞাপন, এসআরও ২০১৯ (বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, মে ৩০, ২০১৯, পৃষ্ঠা-১৬৬১৫ )। এতে কেজি প্রতি সব ধরনের কালির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৫০ ডলার এসেসাবল ভেল্যু ধরে ধরে শুল্কায়ন করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রতি কেজি কালির আমদানি মূল্যে পূর্বের তুলনায় প্রায় ৮০ টাকা বেশী মূল্য যুক্ত হবে। তাতে বাণিজ্যিক আমদানীকারকরা লাখ লাখ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার কারনে তারা তাদের কালি আমদানী বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দেবেন। সরকার এক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবেন। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে নিম্নমানের কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র মূল্যে অথবা বিনাশুল্কে পন্যের কাঁচামাল আমদানী করে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত করবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কালিতে ৩ দশমিক ৫০ ডলারে শুল্কারোপের কথা বলা হয়েছে। এটা হলে প্রকাশনা শিল্প আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে নিয়োজিত লোকবলের তুলনায় কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লোকবল খুবই নগন্য। এছাড়া কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যায় মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে লাখ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে ব্যবহৃত কালি সম্পূর্ন অটোমোশনে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। যে কারণে শ্রমিক সংখ্যাও কম। একারনে সংবাদপত্র ও বাণিজ্যিক মুদ্রণ শিল্পে লক্ষাধিক কর্মচারী ও শিল্প আর্থিক হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার অজুহাত দেখানোর কোন প্রয়োজন হয় না।
সূত্র মতে, ২০১৬ সালের পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানীকৃত ওয়েব অফসেট ইন্ক (রঙ্গীন) প্রতি কেজির মূল্য ছিল ২ ডলারের নীচে। এবং কালো কালির মূল্য ছিল ১ ডলারের নীচে। এলসি-তে ঘোষিত মূল্য অনুযায়ীই শুল্কায়ন হতো সবসময়।
আর তাই সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে কালি আমদানী খাত ও বানিজ্যিক আমদানীকারকদের উৎসাহিত করতে রঙ্গীন কালির এসেসাবল ভেল্যু ২ ডলারের নীচে এবং কালো কালির এসেসাবল ভেল্যু ১ ডলারের নীচে নির্ধারন করার দাবি জানিয়েছে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে মুদ্রন শিল্প ও সংবাদপত্রের অস্তিত্ব রক্ষায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তাদের মতে, এই শিল্পের কার্যক্রম ওয়েব অফসেট এবং সীট ফিড অফসেট এই দুই ভাগে বিভক্ত। দুই ক্ষেত্রেই যে ধরনের মেটেরিয়ালস বা ফিনিশড গুডস প্রয়োজন হয় তার পুরোটাই আমদানী নির্ভর। সেই আমদানীর সামান্য পরিমান আসে চীন ও মালয়েশিয়া থেকে। আর সিংহভাগই আমদানী করা হয় ভারত থেকে। এমন কি এর কোন কাঁচামাল দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত হয় না।
সূত্র মতে, মুদ্রণ শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কালি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়েব অফসেট ইন্ক এবং সীট ফিড ইন্ক। ওয়েব অফসেট ইন্ক সাধারণত সংবাদপত্রে ব্যবহৃত হয়। একই সঙ্গে টেক্সবুক বোর্ডের বিশাল পরিমাণ বই ছাপাতেও ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে সীট ফিড অপসেট ইন্ক বিভিন্ন উন্নতমানের প্রকাশনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দামের দিক দিয়ে বিশ্বের সর্বত্রই ওয়েব অফসেট ইন্ক এর চেয়ে সিট ফিড অপসেট ইন্ক এর মূল্য সবসময়ই বেশী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় প্রকার কালির একই দাম নির্ধারণ করায় সরকার প্রচুর পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ ওয়েব অফসেট ইন্ক - সিট ফিড অপসেট ইন্ক এর তুলনায় কম ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। বিশ্ব বাজারে বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশেরও কেজি প্রতি মূল্য ৩ দশমিক ৫০ ডলার এর নিচে।
আমদানিযোগ্য উভয় প্রকার কালির মধ্যে ওয়েব অফসেট ইন্ক এর ক্ষেত্রে সাধারণত ৪ রংয়ের কালি ব্যবহৃত হয় এবং সিট ফিড অপসেট ইন্ক এর ক্ষেত্রেও ৪ ও ৪ এর অধিক রংয়ের কালি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি কালো ও বাকিগুলো রঙিন। কালো কালির মূল্য সর্বদাই রঙ্গীন কািলর তুলনায় প্রায় অর্ধেকের চেয়েও কম হয়ে থাকে।
এদিকে বানিজ্যিক আমদানীকারকরা তাদের পন্যের শুল্কায়ন বেশী হওয়ার কারনে আমদানীর পরিমান কমিয়ে দেয়। আর এ কারনেই সরকার প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদনকারীরা তাদের কাঁচামাল আমদানীর ক্ষেত্রে নামমাত্র শুল্ক প্রদান করায় সরকার এদিক থেকেও রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা নামমাত্র দেশীয় পন্য হিসেবে প্রচার পাচ্ছে। অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে তার সবই বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। উভয় দিক থেকে শুল্ক প্রাপ্তী কম হওয়ার ফলে সরকার প্রতিবছর বিশাল অংকের রাজস্ব আয় হারাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয়ভাবে কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার দোহাই দিয়ে এবং বানিজ্যিক আমদানীকারকদের নিরুৎসাহিত করতে পন্যের শুল্কায়িত মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে শুধুমাত্র গুটি কয়েক ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে এই প্রজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি আত্মঘাতি পদক্ষেপ। তাতে সরকার কালি আমদানির ক্ষেত্রে পুরোপুরি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত নিম্নমানের কালি ব্যবহারের ফলে ছাপার মান কোন ভাবেই আর্ন্তজাতিক মানের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না কোনদিন এটা নিশ্চিত। এই অসম শুল্কায়ন নীতিমালার কারনে অনেকেই অবৈধভাবে বোন্ডেড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অতিমুনাফা লাভের জন্য আমদানী করতে উৎসাহিত হবে। যার ফলে সরকারের আরও অনেক বেশী পরিমান রাজস্ব হারানোর সম্ভবনা রয়েছে। বাস্তবদিক হলো যখনই কোন পন্যের অসম শুল্ক নির্ধারনের ক্ষেত্র তৈরি হয় তখনই কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা পাওয়ার লোভে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করার জন্য উৎসাহিত হয়। যেমন- বোন্ডেড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানী করে অবৈধভাবে লোকাল মার্কেটেই তা বাজারজাত করার সুযোগ নিবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।