পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেটে নিজের বড় মেয়ের বাড়ি থেকে কুলাউড়া আসার জন্য দুপুরে ঘর থেকে বের হন মনোয়ারা পারভীন (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। কিন্তু স্টেশনে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে সিলেট থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়। পারাবত ট্রেন সময়মতো ধরতে না পারায় তারা রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। আর এই যাত্রাই কাল হলো তার জন্য।
কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় বড়ছড়া ব্রীজের উপর ট্রেনটি দুর্ঘটনার শিকার হলে তিনি মারা যান। এ সময় তার সহযাত্রী নিজের দ্বিতীয় মেয়ে কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা পারভীন প্রাণপণ চেষ্টা করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি। নিজ চোখের সামনে মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মেয়ে রুকশানা।
গত রোববার রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। মনোয়ারা পারভীন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ঠিকাদার মো. আব্দুল বারীর স্ত্রী।
জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে পারাবাত ট্রেনে মনোয়ারা পারভীন তার দ্বিতীয় মেয়ে রুকশানা পারভীনকে সাথে নিয়ে তার বড় মেয়ে ইশরাত আরা মুন্নির সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রোববার নিহত মনোয়ারার একমাত্র ছেলে সিলেট শাহজালাল সিটি কলেজের ছাত্র শাহরি আহমদ দীপু সিলেট থেকে তার মা ও বোন রুকশানাকে একটি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে সিলেট স্টেশনে পাঠায়। বিকেলে পারাবত ট্রেনে কুলাউড়ায় ফেরার কথা ছিলো। পারাবত ট্রেন সময়মতো ধরতে না পারায় তারা রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। এরপর ট্রেন কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় আসার পর দুর্ঘটনার শিকার হলে ট্রেনের বগি উল্টে পড়ে যায়।
এ সময় নিহত মনোয়ারার মেয়ে রুকশানা তার মাকে উদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। সাথে সাথে তার বাবাকে ফোন দেয়, বাবা আম্মা মারা গেছেন, গাড়ি থেকে উনাকে বের করতে পারছি না। খবর পেয়ে মনোয়ারার স্বামী কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল বারী ঘটনাস্থলে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে পাননি। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
মনোয়ারার স্বামী আব্দুল বারী তার লাশ শনাক্ত করে কুলাউড়ার টিটিডিসি এলাকায় বাসায় নিয়ে আসেন। লাশ বাসায় আনার পর শোকের মাতম শুরু হয়। তাকে এক নজর দেখার জন্য বাসায় সহস্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে। সোমবার বিকেলে মো. আব্দুল বারীর গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রামে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত মনোয়ারা পারভীনের মেয়ে রুকশানা পারভীন বলেন, আম্মুকে বাঁচানোর কতো চেষ্টা করেছি। অনেক চেষ্টা করেও আমার আম্মুকে বাঁচাতে পারলাম না। আম্মু যখন ট্রেনের নিচে আটকা পড়ল, তখন কতজনের হাতে–পায়ে ধরে বলেছি, হেল্প মি, হেল্প মি। সহযোগিতা না করে সবাই সেলফি তোলা আর ফেসবুক লাইভ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। তামাশা শুরু করলো। কেউ আমাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলো না। আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গে কথা বলতে চাই না। প্লিজ, আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমার চোখের সামনে আমার আম্মু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো।
নিখোঁজ ২ যাত্রীর খোঁজ এখনো পাননি স্বজনরা
ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় গত রোববার রাতে দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার পর থেকে দুই যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সন্ধান পেতে হাসপাতাল ও দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যাচ্ছেন স্বজনরা।
নিখোঁজদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের পিরগাঁও বালিয়াকান্দি গ্রামের দুলাল আহমদ (৩৫) ও দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি গ্রামের আবুল কালাম (৩৬)। এদিন রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচালে ট্রেন দুর্ঘটনার পর তাদের আর খোঁজ মেলেনি। সোমবার বিকেলে তাদের সন্ধানে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু হাসপাতালে তাদের পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ দু’জনের স্বজনরা জানান, দুলাল ও কালাম ওইদিন উপবনে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত তারা ঢাকায় পৌঁছায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। ওসমানী হাসপাতাল ছাড়া মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া কোনো হাসপাতালে রয়েছে কিনা তারও সন্ধান করছেন স্বজনরা।
হাসপাতালে দুলাল আহমদের খোঁজ করতে আসা বাবা রশিদ আলী জানান, তার ছেলে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাননি। অপরদিকে কালামের চাচাতো ভাই আব্দুল আলী জানান, কালাম ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে। ঢাকা থেকে কালামের স্ত্রী ফোন করে জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত তিনি সেখানে পৌঁছাননি।
এছাড়াও সোমবার রাতে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকজন অভিভাবক তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান করেছেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।