Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিতে সমন্বয়হীনতা

সম্প্রসারণ, মৃত্তিকা ও উন্নয়ন কার্যক্রম গতানুগতিক

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কৃষি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং কর্মবীর কৃষকের স্বার্থে দেশে মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ, বীজবর্ধন খামার, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, হর্টিকালচার এবং বিএডিসিসহ অসংখ্য বিভাগ রয়েছে। উদ্দেশ্য স্বল্প জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে বেশ আবাদ ও উৎপাদন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না যথাযথভাবে। এর অন্যতম কারণ কৃষির বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব।

কৃষি তথ্য সার্ভিস খামারবাড়ীর পরিচালকের দফতর সূত্রের দাবি, কৃষকদের সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষায় দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে মাঝে মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানদান করা হচ্ছে। কিন্তু সারাদেশে একযোগে কি এমন কর্মসূচি মাঠে পৌছাচ্ছে-এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

কৃষকরা কৃষিপণ্যের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন কিনা সেটি দেখার ব্যাপারেও কৃষি সম্পর্কিত বিভাগগুলোর মধ্যে কোনরূপ যোগাযোগ নেই। কৃষি সেক্টরের যত দফতর, অধিদফতর ও বিভাগ রয়েছে তারা যদি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয় তাহলে বাংলাদেশের সামগ্রিক কৃষি ঈর্ষনীয় পর্যায়ে পৌছে যেত-এই মন্তব্য কৃষি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কৃষি আরো এগিয়ে যাবে, যদি সকল বিভগের মধ্যে সমন্বয় করা যায়। মাটির স্বাস্থের অবস্থা কী, কৃষি পণ্য উৎপাদন কোথায় কিভাবে হচ্ছে, উৎপাদন ভালো তবে কৃষক কৃষিপণ্যের দাম পাচ্ছে কিনা- এসব খোঁজ রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যতœবান হওয়া উচিত। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ড. আখতারুজ্জামান জানান, এক বিভাগ আরেক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কাজেরও সুবিধা হয়। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থও সংরক্ষণ হতো।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গবেষণাগারে নিত্যনতুন জাত, প্রযুক্তি ও কলাকৌশল আবিস্কার হয় ঠিকই। অথচ ফল যায় না মাঠে। বড়জোর প্রদর্শনী প্লটে। অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শালকোনা গ্রামের কৃষক বাবুল আকতার ও মো. আলমসহ অনেক কৃষকের অভিযোগ মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নেমে সমস্যার সমাধান এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার ফল পৌছে দিলে কৃষক আরো এগিয়ে যেতেন।

কৃষকের কথা, সরকার তো কমবেশী আমাদের জন্য ভালো ভালো উদ্যোগ নেয়, কখন কি ফসল উৎপাদন হবে, কিভাবে হবে, কোন জমিতে কোন ফসল উপযোগী- এসব জ্ঞান দেওয়ার জন্য কৃষি শিক্ষার ব্যবস্থা করে। কৃষি গবেষণার ফল মাঠে পৌছানোর নির্দেশ দেয়। অনেকস্থানে কৃষি তথ্যকেন্দ্রও স্থাপন করেছে। কিন্তু এর সুফল কৃষকরা পান না।

কৃষকের ঘরে ঘরে সার, প্রযুক্তি নিয়মানুযায়ী পৌছাচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই। অভিযোগ, সারের ডিলার কিন্তু গোডাউন নেই। সার কালোবাজারে বিক্রি করে ভিন্ন পেশার লোক পকেটভারি করছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ্য যে, যশোর সদর উপজেলায় একশ্রেণির সার ডিলারের দুর্নীতি ওপেনসিক্রেট। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার প্রত্যায়পত্র নিয়ে এখানে প্রভাবশালী অনেক ডিলার আছেন যারা কখনোই সার কৃষকের কাছে বিক্রি করেন না। বছরের পর বছর বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন দেখিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে। তদন্ত হয় না কখনো।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্র জানায়, যশোরসহ সারাদেশে ১০টি কৃষি অঞ্চলে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে বেশ আগে। দাবি করা হয় কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের যাবতীয় সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে কৃষক ন্যুনতম সুবিধা পাচ্ছেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ