Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চিঠি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

তিন মাসেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এত বেশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলছে খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় খেলাপির সংখ্যা ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ অতিমাত্রায় বাড়ার কারণ চিহ্নিতকরণ এবং তা থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটি আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্য ও বিশেষায়িত ছয় ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। গত রোববার এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রাপ্ত ঋণ হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকসমূহের ঋণখেলাপির সংখ্যা এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০১৯ এর মার্চ প্রান্তিকে উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকসমূহকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য সীমায় কমিয়ে আনার জন্য কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা প্রদার করা স্বত্তেও এ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রত্যেকটি ব্যাংকে। যা মোটেই কাম্য নয়। এছাড়া দেখা গেছে গত তিন বছরে খেলাপি ঋণের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে গত তিন বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এসে এর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ তিন বছরের মধ্যে নতুন করে ৫৮ হাজার ৪৩৬ ব্যক্তি ঋণখেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে দেয়া ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে জনগণের আমানত গ্রহণ করলেও তার সুরক্ষা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ মাস শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।

আলোচিত সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি নয় ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ৩৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দুই হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ তিনটি শ্রেণিতে বিভাজন করা হয়। একটি নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতিজনক মান। মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণ আদায় হবে না বলে ধারণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। এ ছাড়া নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। এতে কমছে মুনাফা। ফলে খেলাপির কারণে মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে গত শনিবার দেশের ৩০০ শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকা সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই তালিকা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এদের ঋণ খেলাপির পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ঋণ খেলাপিরা সরকারি ও বেসরকারি খাতের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, এসব ঋণ খেলাপির কাছে পাওনার পরিমাণ ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা আর শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ