পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বৈষম্যর কথা তুলে ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, দেশের নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। সেই তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বিত্তশালীরা। এ সময় আলোচক বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দরিদ্র ও ধনীদের মধ্যে এই যে বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমানোর ব্যাপারে এই বাজেটে কিছুই বলা নেই। এর জবাবে অপর আলোচক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈষম্য থাকেই, এখনও আছে। অবশ্য আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ‘ব্যবসায়ী বান্ধব, ব্যবসা বান্ধব নয়’ বলে মত দেন অর্থনীতিবীদ ও বিশ্লেষকরা। সেন্টার ফর পলিসি ডয়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট সংলাপ গতকাল রাজধানীর লেক শোর হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এ সময় অর্থনীতিবীদ ও বিশ্লেষকরা বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানোরসহ প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ সূচক উন্নতির তেমন আলোচনা নেই। যা আছে তাতে বড় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবে ঠিকই কিন্তু ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হবে না। এসময় তারা বাজেটের বরাদ্দকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তাবায়নকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে অর্থবছর শেষে বাজেট মূল্যায়নে ইতিবাচক কি অর্জিত হয়েছে তাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তারা। এর জবাবে সংলাপের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা মানেই ব্যবসার সুবিধা। দুটি একই কথা। কারণ ব্যবসার ঘারে ব্যবসায়ীই বসে আছেন। ব্যবসা হর্স (ঘোড়া), আর ব্যবসায়ী রাইডার (চালক)।
ড. অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বাজেট নিয়ে যত আলোচনা হয়, সেখানে শুধু বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বরাদ্দের অর্থ খরচ করার পর কি ফল পাওয়া গেল-তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এ দেশে ব্যাপক দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে-এটা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সঙ্গে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক বৈষম্য। এটি নিয়ে আলোচনা কম হয়। ভর্তুকি দিচ্ছি, করে ছাড় দিচ্ছি, ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিচ্ছি-এই ধরনের সুবিধার কারণেই সমাজে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, প্রত্যেক সরকারই নির্বিাচিত হওয়ার পর তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ভুলে যায়, এ সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বাজেটে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের তেমন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা।
সংলাপে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংলাপ পরিচালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এবারের বাজেটে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের জরুরি সংস্কারের বিষয়টি বাজেটে জোরালোভাবে উঠে আসেনি। এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার সংক্রান্ত সংস্কারের উদ্যোগও তেমন নেই। এসব সংস্কার ছাড়া বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থনীতির প্রভু হচ্ছে বাজার। এই ‘বাজার প্রভু’র চাহিদা অনুযায়ী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুই মাঠ নিয়ে খেললে দুই রকম খেলাই হবে, এক রকম নয়। আমরা হাওরবাওড়সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাজেট তৈরি করি, বরাদ্দ দিই। তারাই বলেন, দশ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। আর আপনারা লেকশোর হোটেল, প্রেসক্লাব ও অফিসে চা খেতে খেতে আলোচনা করেন। মাঠের ভিন্নতার কারণে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের সমালোচনা করে এম এ মান্নান বলেন, আপনারাই বইয়ে পড়ান, উন্নয়নের পথে বৈষম্য তৈরি হয়। কিন্তু এই ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাজেটের মাধ্যমে বিশাল সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। অবকাঠামো যেগুলো বানাচ্ছি গ্রামাঞ্চলে স্কুল, ব্রিজ, কালভার্টস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্য দূর করব। তবে বৈষম্য পুরোপুরি নিরসন হবেনা। সব দেশেই বৈষম্য রয়েছে। এমন কোনো সমাজ নেই যেখানে বৈষম্য নেই। বর্তমান সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূর করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাই বলুন না কেন, সবকিছুর মূলে দারিদ্র্যতা। সেগুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুতায়ন, স্বাক্ষরতা এবং সামান্য হলেও স্বাস্থ্যসেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া। পরিকল্পনামন্ত্রী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দক্ষতা বিষয়ে বলেন, আমরা এখন বিবিএস এর দিকে বিশেষ নজর দিয়েছি। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিবিএস এর তথ্য নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবেনা কারো।
পরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ‘বাজার চাহিদা’র বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (পরিকল্পনামন্ত্রী) বলেছেন, বাজার হচ্ছে অর্থনীতির প্রভু। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বজনতোষণ পুঁজিবাদ ‘বাজার’ নয়। এক্ষেত্রে যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারাই প্রভু। তারা সব জায়গায় আছে, সংসদে আছেন, ব্যবসায় আছেন, রাজনীতিতে আছেন। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছেন। এই চক্রের মধ্যেই বসে আছে ওরা।
অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. অধ্যাপক এম সাইদুজ্জামান বলেন, উন্নয়ন বাজেটে যে সমস্ত প্রকল্প নেয়া হয় তা বছর শেষে পুরো বাস্তাবয়ন করা হয়না কোন বছরই। এদিকে মনো যোগ দেয়া দরকার। এবারের বাজেট প্রস্তাব বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেট ব্যবসায়ী বন্ধব, ব্যবসা বন্ধব নয়, এই উক্তিটি খুবই সত্য। এদিকেও নজর দিতে হবে। এটিকে উপেক্ষা করলে চলবেনা।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনপি সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক বরকত ই খুদা প্রমুখ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান প্রমূখ। উপস্থিত ছিলে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।