Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ডিজিটাল অর্থনীতি

অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের সাফল্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং পেশা ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রেখেই এখান সৃষ্টি হয়েছে প্রচুর অর্থ আয়ের সুযোগ। ঘরে বসে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় রোজগারে পৃথিবীর ১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এথস দ্বিতীয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ট্যাক্স প্রিপারেশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ বহু কাজ অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়েই হচ্ছে। দ্রুতগতিতে বাংলাদেশে ডিজিটাল রুপ লাভ করায় শহরে ইন্টারনেট সুবিধা, সরকারি-বেসরকারি প্রচারণায় এই খাত ধীরে ধীরে সবার কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠায় এই সাফল্য। এর মাধ্যমেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়ের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করেছে। ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তিতে তৈরি হবে এই ‘নতুন বাংলাদেশ’। আয় হবে প্রচূর বৈদেশিক মূদ্রা।

সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণের দেশ হিসেবে। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের অর্ধ শিক্ষিত-অশিক্ষিত প্রায় এক কোটি জনশক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকসহ নানান পেশায় কাজ করছেন। রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে তাদের রোজগার তথা রেমিটেন্সে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। শুধু কায়িক শ্রমশক্তি নয়; কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অনলাইন শ্রমশক্তিও বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে। অনলাইনের মধ্যেমে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা সারাবিশ্বে ক্রমান্বয়ে সেলস ও মার্কেটিং সেবায় পারদর্শী হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় ধরণের অবদান রাখতে শুরু করেছে ইন্টারনেট ভিক্তিক আয় করা এই ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, আউটসোর্সিং-এর মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক খাতে ধীরে ধীরে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানেও অনন্য অবদান রাখছে এই ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোও বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, আমরা ডিজিটাল অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। এ সেক্টরে (আউটসোর্সিং) আরো ভাল করার জন্য মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগামীতে এই আউটসোসিং আরো বাড়বে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে দুর্দান্ত অবদান রাখতে শুরু করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো; যেখানে প্রশ্নাতীতভাবে এশিয়া এগিয়ে রয়েছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনলাইন শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হচ্ছে ভারত। যাদের বিশ্ব চাহিদার প্রায় ২৪ শতাংশ গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সার ওয়ার্কার আছে। এর পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের; অনলাইন শ্রমশক্তিতে যাদের (বাংলাদেশ) অবদান হচ্ছে ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যাদের ফ্রিল্যান্সার হচ্ছে ১২ শতাংশ। এ ছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সার ওয়ার্কার কাজ করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে যথাক্রমে পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, কানাডা, মিশর, জার্মানী, রাশিয়া, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ইতালি, স্পেন, শ্রীলংকা, সার্বিয়া, আয়ারল্যান্ড ও মেসিডোনিয়া। অনলাইন ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় বাংলাদেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতোই।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ট্যাক্স প্রিপারেশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ বহু কাজ অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং-এর আওতাভূক্ত। এ ধরনের কাজের সুবিধা অনেক। বিশেষ করে গ্রাহক ও কাজের পরিসর অনেক মুক্ত। বিশ্ব বাজারে কাজ করা যায়, কাজের স্থান নিয়েও ভোগান্তি নেই। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ফ্রিল্যান্সারদের ঢাকার মতো জনবহুল শহরের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম (যানজট) ঠেলে অফিস যেতে হয় না। এতে করে নতুন চাকরি বাজার তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে অনেক সুযোগ। এশিয়াতেই এখন আউটসোর্সিংয়ের বাজার সবচেয়ে বড়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় খরচ ও ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অনেক উন্নত দেশও এখন বাংলাদেশের মতো আইটি আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন কর্মী সরবরাহে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে নিয়মিত কাজ করছে ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার। আর মোট নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার। বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সররা ১০ কোটি ডলার আয় করে থাকেন। একেক দেশ একেক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই পেশা নিয়ে কাজ করছে। যেমন ভারতীয় ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। আর বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত সেলস ও মার্কেটিং সেবায় পারদর্শী।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী মনের মতো (পছন্দের) চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে আছেন। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে খুব সহজেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এতে করে তারা শুধু নিজের জীবিকাই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও আনতে সমর্থ হবে যা ‘নতুন বাংলাদেশ’র অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষিত নারীকে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তাদের জন্যও এই ফ্রিল্যান্সিং দারুণ সুযোগ। ঘরে বসেই কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের নারীরা এখন তাদের প্রথাগত সাংসারিক দায়িত্বের গন্ডি পেরিয়ে ফ্রিল্যান্স কাজকে ক্যারিয়ার সংকটের সমাধান হিসেবে দেখছে। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন পুরুষের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। আর নারীদের অংশগ্রহণে এই সেক্টর আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

তথ্য-প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিতে সরকার প্রতি জেলায় আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে শ্রমব্যয় কম থাকায় বিশ্বের আউটসোর্সিং বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে এখনও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এমন সফটওয়্যারে কাজ করতে যেখানে মনোযোগ খুবই জরুরি। সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজের ক্ষতি হয়। এছাড়া ইন্টারনেট সেবার মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্যও অনেক বেশি। প্রত্যান্ত অঞ্চলে থাকা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। ব্রব্যান্ড সুবিধা থাকলেও অনেক সময় তা ধীরগতির হয়। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে টাকার সহজ লেনদেনের ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহজ কোনও উপায় নেই। আর নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এখনও তা যথেষ্ট নয়। তবে এসব সীমাবদ্ধতার বাইরে সম্ভাবনার জায়গাও কম নেই। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যাদের বিশাল একটি তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশেরই বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই বিশাল তরুণ ও শক্তিশালী জনসম্পদ এখনও এই ফ্রিল্যান্স বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে পুরোপুরি অবগত নয়। বিগত বছরগুলো ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হলেও এখনও বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণদের এটা নিয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এই সুযোগ যেন তারা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে সেজন্য প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেকার তরুণদেরকে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এতে করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন আরও বাস্তব হতে শুরু করবে। জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ডিজিটাল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে বাংলাদেশ।



 

Show all comments
  • Faruk Ahmed ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৪৪ এএম says : 0
    শুভ কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Tariqul Islam ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম says : 0
    খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
    Total Reply(0) Reply
  • Jasmine Akter ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৪৬ এএম says : 0
    ডিজিটাল বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply
  • Nurhossain Rashed ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৪৬ এএম says : 0
    বি এসসি পাস করে বেকার বসে অাছি কেউ চাকুরী দেয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Islam ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৪৬ এএম says : 0
    ডিজিটাল ব্যাংক ডাকাতি, আম জনতা থেকে ব্যাংকের মালিক
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী। আশা করি সফলতা পাব
    Total Reply(0) Reply
  • সোয়েব আহমেদ ২২ জুন, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
    ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি বিপ্লব ঘটাবে
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২২ জুন, ২০১৯, ৭:৩৮ এএম says : 0
    BANGLADESHI SHIKHA BEBOSTAY ENGLISH KE ARO PRADAINNO DEWA WCHITH, BIDESH EO AMRA BANGLADESHI RA ENGLISH ER KARONE ONEK SHOMOSHAY PORI, KONO CORSE KORTE GELE , ENGLISH ER KARONE PARI NA ! AMADER ASHEPASHER SHOB DESHER MANUSH E ENGLISH E AMADER CHEA BHALO, EVEN NOW NEPAL ER STUDENT RAO ENGLISH E TUKHAR
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ