পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিকই বলেছেন- এই কবিতার মত হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কীর্তি। ঠিক তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রাজবাড়ীটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কালের সাক্ষী রাজবাড়ি সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছেন।
এই প্রাসাদোপম অট্টালিকাটি নির্মিত হয় ১৮৯৩ সালে। নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঘনশ্যাম কুন্ডুর বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী। আর সম্পন্ন করেন তারই ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। মুসলিম শাসন আমলে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামে একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তার বাড়ি মেদিনীসাগর গ্রামে। জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনেন।
ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বৃটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার সময়ে রাজবাড়ির কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের শেষ করা রাজবাড়ির দোতলা ভবনে লতাপাতার নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি আছে।
এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো এই অট্টালিকাটির দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের বিলুপ্তপ্রায় নিদর্শনগুলো প্রাচীনত্বের বিবেচনায় খুব মূল্যবান নয়। তদুপরি এ অঞ্চলের একটি আকর্ষণীয় স্থাপত্য কীর্তি হিসেবে এখনো মানুষকে কাছে টানে। জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বৃটিশ সরকার কর্তৃক রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সে সময়ে বৃটিশ সরকার তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই সামন্ত প্রভুদের বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করে খুশি করত। জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীকে এই একই উদ্দেশে রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
যতটুকু জানা যায় তা হচ্ছে এই উপাধি প্রদানের ক্ষেত্রে সম্ভবত আরো একটি বিষয় কাজ করেছিলো। আর সেটি হচ্ছে তার বিদ্যানুরাগ ও শিল্প সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপারে আগ্রহ। রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণ যেমন আকর্ষণীয় স্থাপত্য শৈলীর প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন তেমনি তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাজর্ষির এই অনুরাগ শুধু তার ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে তা নয়। গোটা হরিপুরবাসীর মানসিক ঐশ্বর্যের উজ্জ্বল দিকটিকেও তুলে ধরে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার এই ধারায় যে আলোকিত জীবনের আকাঙ্খা সেদিন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিলো তা আজো অনেকটাই বহমান রয়েছে এই হরিপুরে।
ভবনটির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে। রাজবাড়িতে ছিল একটি বড় পাঠাগার যার অস্তিত্ব এখন নেই। রাজবাড়িটির যে সিংহদরজা ছিল তাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে। ১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হলে হরিপুর রাজবাড়িও দু’টি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। রাঘবেন্দ্র ও জগেন্দ্র নারায়ণ রায় কর্তৃক নির্মিত রাজবাড়িটি বড় তরফের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরী ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী ১৯০৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন যার নাম ছোট তরফ।
এই রাজবাড়ীর সংস্কার খুব জরুরি সে কথা জানালেন আশিতে পা রাখা স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুল হক। তিনি বলেন প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে বাড়িটি দেখতে। যদি সংস্কার করা যায় তাহলে হয়তো এটা দর্শনার্থীদের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা যাবে। আর সংস্কার ছাড়া এভাবেই থাকলে একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাজবাড়ী সংস্কার করা সম্পর্কে হরিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এম. জে. আরিফ বেগ ইনকিলাবকে জানান, প্রত্মতত্ত¡ বিভাগ থেকে বাড়িটি পরিদর্শ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হয়। যদি সরকারিভাবে অনুদান পাওয়া যায় তাহলে খুব দ্রæত এর সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। প্রশাসনও চেষ্টা করছে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার।
হরিপুর উপজেলার সর্বস্তরের লোকজনও চায় রাজবাড়ীটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক। এই জন্য স্থানীয়রা সরকারের সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারিভাবে উদ্যেগ না নিলে কালের স্বাক্ষী হিসেবে রাজবাড়ীটি একদিন লোকচক্ষুর অগোচরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।