পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে/ মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন/ মানুষ হইতে হবে এই যার পণ’ (কুসুম কুমারী দাশ)। এই মূহুর্তে কবির এই পংক্তি যার জন্য যুতসই উদাহরণ তিনি হলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
লোটাস কামাল হিসেবে তিনি সর্বাধিক পরিচিত। কথায় নয় কাজের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন কবিতার ‘সেই ছেলে’ তিনিই। ‘মুখে হাসি বুকে বল’ আর ‘মানুষ হওয়ার পণ’ নিয়ে ‘তেজে ভরা মনে’ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নের দত্তপুর গ্রামের অভাবী পরিবারের সেই ছোট্ট ছেলে মুস্তফা কামাল এখন আহীরুহ। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে গতকাল জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১শ ৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই বাজেট সুচিন্তিত এবং স্মাট বাজেট হিসেবে পরিচিত। দেশের এই সোনার ছেলে মুস্তফা কামাল ১৯৭০ সালে চার্টার্ড একাউন্টেন্সি পরীক্ষায় তদানীন্তর পাকিস্তানে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভের রেকর্ড গড়েন। প্রচÐ মেধাবী মুস্তফা কামাল নিজের যোগ্যেতায় সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপড়ে উঠেছেন। দুঃখ কষ্ট এবং পরিশ্রম করে বড় হলেও পদ-পদবি, ক্ষমতার লোভ তাকে কখনো স্পর্শ করেনি। দেশের জন্য তিনি নিবেদিতপ্রাণ। দেশের স্বার্থে একচুলও ছাড় দিতে রাজী নন। ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় / জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়’ (সুকান্ত ভট্টচার্য)।
কবির এই দেশপ্রেমের মতোই মাথা উচু করে ২০১৫ সালে আইসিসি প্রেসিডেন্টের লোভনীয় পদ ত্যাগ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
গোটা জাতি গতকাল তাকিয়ে ছিল মুস্তফা কামালের জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা শোনার জন্য। টিভি রেডিওতে এক যোগে প্রচারিত হয়েছে বাজেট বক্তৃতা। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এই বাজেট দেশের ৪৮তম বাজেট। প্রায় সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সময় পরীক্ষার ফি দু’চাশ টাকাও জোগাড় করতে পারতেন না। প্রতিবেশিরা তাকে সহায়তায় তিনি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেন।
আমাদের সোনার ছেলে আ হ ম মুস্তফা কামালের বাল্যকাল ছিল অভাব-অনটনের। তার শিক্ষা জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাবা তার ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার সময় ফরম-ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যখন ঢাকা আসেন সে সময়ও কখনো কখনো পকেটে ট্রেন ভাড়াও থাকতো না। টানা দুই দিন ধরে কখনো হেঁটে, কখনো এ্যাডভেঞ্চারের মতো ট্রেনের চেকারকে ফাঁকি দিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতেন। অভাব অনটনের সংসারে জন্ম নেয়ায় পড়াশোনার চালাতে গিয়ে অন্যের বাসায় লজিং থেকেছেন। সেই অভাবগ্রস্থ ছেলেটি সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশের বাজেট ঘোষণা করলেন।
৭২ বছর বয়সী আ হ ম মুস্তফা কামালের সোনার ছেলে হয়ে উঠার কাহিনী নাটক-সিনেমার গল্পের মতোই। তিনি হতে পারেন উপন্যাসের নায়ক। গরীর ঘরের প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র মুস্তফা কামাল প্রাইমারি শিক্ষা নেন কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নের দত্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অতপর বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ হতে এইচএসসি, ১৯৬৪-’৬৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্যিক কলেজ হতে বি.কম (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭-’৬৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান ও আইন বিভাগে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের (পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান) চার্টার্ড একাউনটেন্সী পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পাকিস্তানের চার্টার্ড একাউন্টেন্সী পরীক্ষায় তিনিই একমাত্র বাঙ্গালী যিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।
মেধাবী ছাত্র হলেও রাজনীতির হাতের খড়ি ছাত্রজীবনেই। কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ’৭০ এর নির্বাচনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ব্যবসায়িক ভাবে সফল মোস্তফা কামাল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৯ সদর দক্ষিণ (যা বর্তমানে কুমিল্লা-১০ সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট) আসনে এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি পাবলিক একাউন্টস কমিটির সদস্য, বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, যাকাত বোর্ডের সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। মূলত ২০০৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তভুক্ত আছেন। ২০০৬ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুস্তফা কামাল ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি হন। ১৯১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনের এমপি হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে চতুর্থবারের মত এমপি হন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি গতকাল প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন।
মুস্তফা কামালের একজন সফল ক্রীড়া সংগঠন। শুধু রাজনীতি, একাউন্টিং, পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই থাকেননি। তিনি দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৩০ বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। এ সময়ে দেশের ক্রিকেট খেলার উন্নয়নে বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে প্রশংসনীয় অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সংগঠক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন; আইসিসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে যেমন তার ভূমিকা রয়েছে; তেমনি বাংলাদেশ ও আন্তজাতিক ক্রিকেটে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। তিনি ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্বকালে ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার আয়োজনের গৌরব অর্জন করে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার আয়োজক দেশ হওয়া কম গৌরবের নয়। সে সময় তার নেতৃত্ব সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। ক্রিড়া সংগঠকের দীর্ঘ জীবনে তিনি আইসিসি’র সহ-সভাপতি, অডিট কমিটির সভাপতি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল একজন সফল ব্যবসায়ী। তার দু’টি কন্যার মধ্যে বড় মেয়ে কাশফী কামাল বিদেশে থাকেন। ছোট মেয়ে নাফিসা কামাল বাবার মতোই ক্রীড়ানুরাগী ও কুমিল¬া ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপার্সন।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এবারের বাজেট হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২১’তম বাজেট। আর সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ সোনার ছেলে মুস্তফা কামালের বাজেট কতটকু ভূমিকা রাখতে পারবেন সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকই। শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর কণ্ঠে ‘সোনা সোনা সোনা, লোকে বলে সোনা, সোনা নয় তত খাঁটি/ বলো যত খাঁটি, তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি, রে আমার জন্মভূমির মাটি’ (আব্দুল লতিফ)। মাটির মতোই খাঁটি সেনার ছেলে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল দেশকে এগিয়ে নেবেন মানুষ সে প্রত্যাশাই করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।