Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্য

পর্যটকদের সাথে প্রতারণা

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পর্যটকসহ যাত্রীদের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের বাস শ্রমিকদের প্রতারণা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা লোকাল বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্য ক্রমে বেড়েই চলছে।

বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে পর্যটকদের কুয়াকাটার কথা বলে বাসে উঠিয়ে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে পথিমধ্যে। অচেনা অজানা এ পথে পর্যটকসহ যাত্রীদের প্রতিদিন এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন সরকারি বন্ধের সময়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, এ পথে চলাচলকারী বাসগুলো বিভিন্ন রুটে চলাচল করলেও প্রতিটি বাসেই কুয়াকাটা লেখা থাকায় বেশিরভাগ পর্যটকরাই না বুঝে বাসে উঠে বাস শ্রমিকদের প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে।

এ ধরনের প্রতারণার স্বীকার কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও তাদের পড়তে হয় বাস শ্রমিকদের রোষানলে। এ পথে চলাচলকারী পর্যটক ও যাত্রীরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বাস শ্রমিকদের এমন নৈরাজ্য দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। সূর্যোদয় সূর্যাস্তে কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের দক্ষিণাঞ্চলের বাস শ্রমিকদের প্রতি প্রতিনিয়ত নেতিবাচক ধারণা তৈরী হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে কুয়াকাটার উপর। পটুয়াখালী, বরিশাল ও বরগুনা বাস শ্রমিক ও মালিক সিন্ডিকেটের এমন প্রতারণা দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও প্রশাসন বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্য ও প্রতারণা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিবহনের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তিরা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বাস শ্রমিক ও মালিক সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। এ সংগঠনের নেতৃত্বের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। যার কারণে এদের অনিয়ম ও নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না কেউ।

গত ৮ মে আমতলী থেকে কুয়াকাটার কথা বলে বাসে তোলেন পর্যটক রতন খান, নুর আলম, সুমন, মাঈনউদ্দিন, শফিকুল ইসলামসহ আরো অনেককে। কলাপাড়া ব্রীজের কাছে এসে গাড়ী নষ্ট হয়েছে বলে পর্যটকদের নিউ মায়ের দোয়া পরিবহনে উঠিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বলে দেয়া হয় ভাড়া দেয়া লাগবে না। ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে চলন্ত বাসে অবস্থানকালে পর্যটকসহ যাত্রীদের ওপর বাসের চালক, সুপারভাইজর, হেল্পারসহ শ্রমিকরা হামলা ও রোলার দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। এ ঘটনায় পর্যটক রতন খান, শফিকুল ইসলাম ও অপর এক যাত্রী রহিম আহত হয়েছে।

এ ঘটনায় ওই বাস শ্রমিকরা পর্যটক ও স্থানীয়দের রোষানলে পরে এবং উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডায় পর্যটকসহ যাত্রীদের সাথে অসৌজন্য আচরণ এবং রোলার দিয়ে পেঠানোর ঘটনা ওইদিন কুয়াকাটায় অবস্থানরত কয়েক হাজার পর্যটকদের মাঝে জানাজানি হয়ে যায়। এ ঘটনায় রীতিমত বাসযাত্রী ও পর্যটকরা হতবাক হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কথা হয় পটুয়াখালী জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম রনি মৃধার সাথে। তিনি সড়কের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকা ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা পুলিশকে দুষলেন। রনি মৃধা বলেন, সড়কে পুলিশের দ্বায়িত্বহীনতার জন্য অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, অতিরিক্ত ভাড়া ও বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুলিশ বাস শ্রমিকদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বাস শ্রমিকদের অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসন সহযোগিতা না করায় বাস শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মইনুল হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের মারধর করা এবং সড়কে বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্যের বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ