Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নেপথ্যে সাহায্যকারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা

এটিএম বুথ জালিয়াতি

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

এটিএম বুথে জালিয়াতির সাথে জড়িত বিদেশী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের পর নেপথ্যে সাহায্যকারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় ইউক্রেনীয় ৬ নাগরিককে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় দেশের ভেতরে কারা জড়িত এবং নেপথ্যে থেকে কারা ওই চক্রকে সাহায্য করেছে তারও তথ্য সংগ্রহে তারা মাঠে নেমেছে।
একই সাথে দেশের সব ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুথগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রক্ষীদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি বুথগুলোকে রাখা হয়েছে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর আওতায়। অকেজো সিসি টিভি ক্যামেরা সচল রাখতেও বলা হয়েছে। তদন্তের সাথে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই স¤প্রতি জালিয়াত চক্রের ব্যাপারে আগাম সতর্ক করেছিল বাংলাদেশকে। ওই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর সংশ্নিষ্ট ব্যাংককে অবহিত করা হয়। জালিয়াতি রোধে করণীয় নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সিস্টেম হ্যাক করে এটিএম বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা রোধ করা যায়নি।
তদন্তে জানা যায়, এই ছয় আসামি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাক করেন। ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তোলার জন্য এই আসামিরা বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এদের সাথে বাংলাদেশী কেউ জড়িত না থাকলে এত সহজেই এরা এ কাজ করতে পারেনি। এ চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, টাকা উত্তোলনের সময় মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। চোখে ছিল সানগ্লাস ও মাথায় টুুপি। এদিকে অভিনব কৌশলে এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যাংকারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর আগে এটিএম থেকে যত টাকা চুরি হয়েছে প্রতিবার গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেছে জালিয়াত চক্র। এতে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের ঘটনায় পুরো এটিএম বুথের নিয়ন্ত্রণ নেয় জড়িত বিদেশিরা। এতে দেশের এটিএম সেবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দেয়। এমন বাস্তবতায় যে কোনো বিদেশি নাগরিক এটিএম বুথে ঢুকলে তার ওপর নজর রাখার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্ক (রেড অ্যালার্ট) থাকার জন্য এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারির পর ব্যাংকগুলো এ সিদ্ধান্ত নেয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, এটিএম বুথের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করছি। সাইবার ঝুঁঁকির বিভিন্ন নতুন দিক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে আইটি বিভাগগুলোতে এক্সপার্টদের যুক্ত করতে বলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। দেশের টাকা বিদেশিরা হাতিয়ে নিয়ে যাবে, এটি ভয়াবহ অবস্থা। কাজেই শুরুতেই যেহেতু আইডেন্টিফাই করা গেছে, এতে আমরা অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। তবে আশঙ্কা কিন্তু রয়েছেই। এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে।
রাজধানীর বেইলী রোডে ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের জন্য আলাদা কক্ষ নেই। সড়কের ওপরেই বুথ বসানো। সেই বুথের নিরাপত্তারক্ষী সাইদুর রহমান বলেন, এই বুথে প্রবেশের জন্য যেহেতু আলাদা কক্ষ নেই তাই টাকা তোলার সময় গ্রাহককে বাইরে থেকে মনিটরিং করা সহজ হয়। এরপরেও গ্রাহক কি করছে, কত সময় নিয়ে টাকা তুলছে, মুখ স্পষ্টভাবে সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে কি না ইত্যাদি তাদের নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
গত ২ জুন রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা থেকে ডাচবাংলা এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ইউক্রেনের একজন নাগরিককে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর পান্থপথ অলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে একই দেশের আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ