Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে শিল্পায়নের হাওয়া

তিন সেতুতে বদলাবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জীবনযাত্রা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে নয়া দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় তিন সেতু। এ সেতুগুলোকে ঘিরেই স্বপ্নের সোনালী ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন এই অঞ্চলের ১৫টি জেলার মানুষ। রাজধানী ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর, যানজটের কারণে এতদিন পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প বিপ্লবের সাথে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কল-কারখানা। ফলে অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানও। বাংলাদেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চার লেনের এই মহাসড়কের যানবাহনগুলো এত দিন দুই লেনের গোমতী ও মেঘনা সেতুতে ওঠার সময় যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকত। প্রত্যেকটি গাড়িকে গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতো। এতে প্রতিদিনই লাখো যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হতো।
দেশের আমদানি-রফতানির সিংহভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে হওয়ায় এমনিতেই প্রচন্ড ব্যস্ত এই মহাসড়কটি। এর সাথে রয়েছে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার, টেকনাফ, সেণ্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রামগড়, কাপ্তাই আর চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম পাহাড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ছুটছে প্রকৃতির পানে। ফলে যানবাহনের চাপে মহাসড়কের ত্রাহি অবস্থা।
২০১৫ সালে থেকে চার লেনে উত্তীর্ণ হওয়া মহাসড়কটির কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু দুই লেন থাকায় প্রতিদিনই ফোর লেনের গাড়িগুলো সেতুতে এসে গতি হারিয়ে ফেলতো। গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পাইপলাইন খ্যাত মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুটি উদ্বোধন করেন। এর আগে চলতি বছরের মার্চে কাঁচপুর সেতুও খুলে দেয়া হয়। এতে বিশেষজ্ঞ, যানবাহনের চালক, যাত্রীসহ মেঘনার পূর্ব পাড়ের সবার মাঝে এরই মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়।
কুমিল্লার গোলাম মাজেদ ঢাকার একটি বিদ্যুত কোম্পানিতে চাকরি করার কারণে সে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। গতকাল সে দৈনিক ইনকলিাবকে বলেন, গুরত্বপূর্ণ দ্বিতীয় তিনটি সেতু উদ্ধোধনের ফলে এই মহাসড়কে আর যানজট থাকবে না। তাই আমি আগামী মাস থেকে ঢাকার বাসার ছাড়ার বিষয়ে বাড়ির মালিকে বলে দিয়েছি। আগামী মাস থেকে কুমিল্লা থেকেই ঢাকায় এসে নিয়মিত অফিস করতে পারব। শুধু গোলাম মাজেদ নয় এই রকম তার মতো অনেকেই কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকার শ্রমজীবীরা নিজ নিজ এলাকায় থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করার কথা ভাবছেন বলে জানান গোলাম মাজেদ। মহাসড়কে যানজট না থাকায় মেঘনা-গোমতীর কুমিল্লা অংশ থেকে ফেনী পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে নতুন অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল তৈরীরও বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন চীন, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা।
এছাড়াও কুমিল্লা অঞ্চলেও নতুন করে শিল্প প্রসারের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি মাসুদ পারভেজ ইমরান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় তিন সেতু নির্মাণের সাথে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শিল্প বিপ্লব ঘটবে। এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি আসবে, আয় বৈষম্যও দূর হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিভিন্ন শিল্প থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণেরও খরচ। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ১৪ জেলায় ‘শিল্পবিপ্লব’ ঘটবে।
এ অঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে, ইপিজেড আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। এবিষয়ে কুমিল্লা-২ হোমনা-তিতাস আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ মেরী সিআইপি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নানারকম শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে।
আরমান হক ডেনিম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এন আর তৌফিক জানান, আগামী ডিসেম্বরে কারখানায় উৎপাদন কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছি। এ কারখানায় বছরে ১০.৮ মিলিয়ন মিটার ডেনিম কাপড় তৈরি হবে। ইউরোপীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম কাপড়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এ কারখানাটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কাছাকাছি ও যানজটমুক্ত মহাসড়ক হওয়ায় মহাসড়কের পাশ ঘিরে কুমিল্লা অঞ্চলেও এরই মধ্যে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রাক প্রস্তুতি শুরু করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। কুমিল্লায় রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড)। এই ইপিজেডে আছে বিদেশি ৪৬টি, ও দেশি ১০টি শিল্প কারাখানা। মেঘনা-গোমতী ও মেঘনার দু’তীর ঘিরেও রয়েছে বেশ কিছু বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রামে বিসিক শিল্পনগরী, কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রামে বেশ কিছু বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রয়েছে প্রায় শত কিলোমিটার রাস্তা। এর আশপাশে স্বল্প দূরত্বে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী। এ সকল অঞ্চলেও রয়েছে লাখ লাখ কর্মক্ষম মানুষ। ফলে মহাসড়কের গতি স্বাভাবিক হলে কুমিল্লা অংশে শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এই অঞ্চলের শ্রমিকরা এখানকার কলকারখানায় কাজ করতে পারবে। কুমিল্লা ও আশপাশ এলাকায় শিল্পায়ন হলে সর্বোচ্চ ৩ বা সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময়ের ভিতর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে যেতে পারবে।



 

Show all comments
  • Masud Ahmed Nirob ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪০ এএম says : 0
    গ্রামে আর কই উন্নয়ন হলো, আওয়ামী লীগের 11 বছরে এখনো রাস্তাটাই পাকা হলো না
    Total Reply(0) Reply
  • Iqbal Hasan ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
    সেই মহাসড়কে কত লোক প্রাণ দিয়েছে... কত ইট চুরি হয়েছে, কত পাথর গায়েব হয়েছে?
    Total Reply(0) Reply
  • Rabiul Azim ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
    Joy bangla Joy Bangobandu Joytu Sheikh Hasina Bangladesh Chero Jibey Hoke.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdussamad Md Samad ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
    সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    এখন যে অর্জন, তাতে দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা এবং অবস্থান আরও সুসংহত হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ঋণবাজার থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৪৪ এএম says : 0
    এটা আমাদের সৌভাগ্য , জননেত্রী আমাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ