Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবারও টার্গেট অধরা

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এবারও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্র আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ১১ মাসে ৪০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ঘাটতির আকার দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। নেতিবাচক এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে ঘাটতির আকার সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে টানা চার বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি এবং সেইসাথে জাহাজ আসা-যাওয়ার হার বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বড় ধরনের কোন জটও ছিল না। পণ্য পরিবহনে সড়ক, মহাসড়কে ছিল না কোন প্রতিবন্ধকতা। চলতি অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন হলেও রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা হয়নি। এরপরও রাজস্ব আদায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরায় তা অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে কাস্টম হাউস। তবে আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টদের মতে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্কফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এক্ষেত্রে কাস্টম হাউসের কতিপয় কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনাও অনেকাংশে দায়ী। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ার সাথে সাথে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। গেল ৩ জুন পর্যন্ত ১১ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতির আকার দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরের এ সময়ে রাজস্ব আদায় হয় ৩৮ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ১৭শ’ ৭০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪.৫৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১১ শতাংশ ছিল। অর্থবছরের শেষ মাস চলতি জুন মাসে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হলেও টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে না চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। রাজস্ব ঘাটতি ১৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে টানা তিন অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গেল অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৪ হাজার ৬শ’ ৭৭ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪২ হাজার ২শ’ ৪০ কোটি টাকা। আগের দুই অর্থ বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

কাস্টম সংশ্লিষ্টদের মতে, এক শ্রেণির অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করছে। এতে মোটা অঙ্কের শুল্কফাঁকি দেয়া হচ্ছে। সার্বিক রাজস্ব আহরণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা কিছু পণ্যের চালান মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে। তবে বড় বড় চালান পার হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে লোকবলও বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সপ্তাহে সাত দিন চলছে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম। আশা করা হয়েছিল এসব উদ্যোগের ফলে রাজস্ব আদায়ে গতি আসবে। লক্ষ্য অর্জনও সহজতর হবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থবছরের ১১ মাস পার হলেও কোন মাসেই টার্গেট অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ