Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিম্নমুখী গ্রামীণ অর্থনীতি

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত: কৃষিনির্ভর। ফসল উৎপাদনের রেকর্ড অনুযায়ী ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে বিপরীত। উৎপাদক কৃষকের অর্থনীতির স্বাস্থ্য মোটাতাজার বদলে রুগ্ন হচ্ছে। জলবায়ূ পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে মাত্রাতিরিক্ত খরচে ধান, পাট ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

কৃষকরা বোরো ধানের উপযুক্ত দামের জন্য পথেও নেমেছেন। কোন ফল পাননি। বর্তমানে সামগ্রিক গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরাজ করছে চরম মন্দাভাব। কৃষকের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড কার্যত ভেঙ্গে পড়ছে। এই চিত্র সবজি, রেণুপোনা, ফুল, সাদাসোনা চিংড়ি, ধান ও পাট উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টির বিরাট সম্ভাবনাময় যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। ব্যবস্থা না নেয়ায় কৃষক পরিবারে মনোকষ্ট বাড়ছেই।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় কৃষক ক্রমাগত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। তার মতে, সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ সেক্টরটির দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি মৌসুমে বেশিরভাগ কৃষক দিনরাত পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে প্রত্যাশা করেন উপযুক্ত দাম পাবেন, সংসারের খরচাদি এবং পরবর্তী ফসল উৎপাদনের ব্যয় বহন করবেন। কিন্তু এর বত্যয় ঘটছে। তাই জরুরিভাবে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দরকার। তা না হলে কৃষি অর্থনীতি দুর্বল বা নিম্নমুখীতা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা প্রবল হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ভূমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মাধ্যম ও বড় চাষির সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৪ লাখ ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। যার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় কোটি মানুষ।

এ অঞ্চলে সাত হাজার ৮৩০টি গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামেই গড়ে প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত দাম না পাওয়া এবং কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও কৃষি উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবারে আশার আলো ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।

কৃষিবিদ ডক্টর আখতারুজ্জামান জানান, গ্রামীণ জনগোষ্ঠির জীবন-জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অথচ কৃষি কী অবস্থায় চলছে, কৃষিপণ্যের উপযুক্ত দাম কী কারণে এবং কেন কৃষক পাচ্ছেন না তা চিহ্নিত করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেই। কৃষকের আয় ও ব্যয়ের হিসাবের গরমিল কোথায় তাও দেখা হয় না। যার কারণে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের কথা, গ্রামীণ অর্থনীতি যে হারে দ্রুত নিম্নমুখী হচ্ছে, তাতে কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনাময় অঞ্চলটির ভবিষ্যত নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, এখনো সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সর্বাগ্রে অঞ্চলটির কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প অর্থনীতির দিকে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সংশিষ্ট বিভাগগুলোতে মাঠপর্যায়ে নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে কোথায় কী সমস্যা তা খুঁজে বের করে দ্রæত সমাধান করতে হবে। দেখতে হবে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ কেন ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক।

একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধান, পাট, সবজিসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সাধারণ কৃষক ভালো নেই। সাতক্ষীরার কলারোয়ার সরদার মোস্তফা, যশোরের শার্শার জসিম উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের কথা, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য মাঠের প্রকৃত চিত্র সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। নানা কারণে চাঙ্গা হচ্ছে না গ্রামীণ অর্থনীতি। বরং দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ