Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শর্ত তুলে দেয়ার দাবি

আন্দোলনে যাচ্ছে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম

ছাত্রদলের দুই বছরের কমিটি পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রথাগত নিয়মনীতি থেকে বেরিয়ে প্রথমবারের মতো ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য জুড়ে দেয়া হয়েছে শর্ত। নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কাউন্সিলের। ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্বে আসতে হলে অবশ্যই ২০০০ সাল কিংবা তার পরবর্তী সময়ে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। যার ফলে ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক এমনকি দু’একজন সম্পাদক ছাড়া বাকীরা আর প্রার্থী হতে পারবেন না। যাদের সকলেরই এসএসসি ১৯৯৯ সাল এবং তার পূর্ববর্তী সময়ে। তাই প্রার্থী হওয়ার নতুন এই শর্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা। বিগত ১২ বছর ধরে রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলম সহ্য করার পর এমন অপমানজনক বিদায় (ছাত্র নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী) মেনে নিতে পারছেন না তারা। পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ভ্যানগার্ড ছাত্রদলকে ধ্বংস করতেই একটি চক্র মাঠে নেমেছেন বলে মন্তব্য পদপ্রত্যাশী নেতাদের। কোন শর্ত নয়, প্রথাগত নিয়মেই কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যত্থায় আন্দোলনে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্র নেতারা। ইতোমধ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা পারস্পরিক আলোচনা করেছেন। গতকাল (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ, করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেছেন তারা। 

গত ৩ মে রাতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। একইসাথে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে বলা হয়। যেটিকে ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতারাই স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যে যোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেটিকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নতুন কমিটিতে প্রার্থী হতে চাওয়া ছাত্র নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের প্রার্থী হওয়ার যে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো- ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। কেবলমাত্র ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ছাত্রদল নেতারা বলেন, প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ি প্রতিবারই সিনিয়রদের দিয়েই ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। তারাই রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জেল-জুলম, হামলা, নির্যাতনের সিংহভাগই যায় তাদের নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে। ২০১৪ সালে রাজিব-আকরাম কমিটি গঠনের পর পরবর্তী কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরাও একইভাবে গত পাঁচ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠন হলে ইতোমধ্যে আরও দুটি কমিটি পেত ছাত্রদল। এতে করে ছাত্রদলের যারা এখন সিনিয়র হিসেবে গণ্য হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই প্রত্যাশিত পদ-পদবি পেয়ে বিদায় নিতে পারতেন।
ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান বলেন, দল এবং দেশের ক্রান্তিকালে বর্তমান ছাত্রদলের নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন। সামনের দিনেও যে আন্দোলন-সংগ্রাম হবে সেটিতেই নেতৃত্ব দিতে হবে ছাত্রদলকেই। কিন্তু এমন সময়ে ছাত্রদলে অনভিজ্ঞ নেতৃত্ব আনলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেউ হয়তো আমাদের অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল তথ্য দিয়ে এমনটি করিয়েছে।
যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাসান বলেন, আমরাও চাই ছাত্রদল থেকে বিদায় নিতে। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি হঠাৎ করে বলা হচ্ছে তোমরা নেতৃত্বের অযোগ্য। এটা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর ২০১৬ ও ২০১৮ সালে যদি নিয়মিত কমিটি হতো তাহলে আমি নিজেই দু’বছর আগে বিদায় নেয়ার কথা। দল কিংবা সংগঠন নির্ধারিত সময়ে কমিটি করতে পারেনি এর দায়ভার কি আমরা বহন করবো। আমরা চাই একবারে নয়, ধীরে ধীরে ছাত্রদলের বয়স কমিয়ে আনা হোক। এবার বয়স তুলে দিয়ে প্রথাগত নিয়েমেই কমিটি করে ঘোষণা দেয়া হোক আগামীতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা দেয়া হবে।
এদিকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানান, কমিটি বিলুপ্ত করার পর নতুন কমিটির প্রার্থী হওয়ার জন্য যে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তা ছাত্রদলের কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তারা ক্ষুব্ধ। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন। দাবি মানা না হলে আগামীকাল থেকে আন্দোলনেও নামতে যাচ্ছেন তারা। দাবি না মান পর্যন্ত নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কিংবা আমরণ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হতে পারে। এই কর্মসূচি নির্ধারণে গতকাল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানান, গত ২৭ মে আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম। এখনো সেটিতেই আছি। এসব দাবিতে আমরা মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনে যাচ্ছি। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বয়সের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা না রেখে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের চিরাচরিত ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে একটি ধারাবাহিক কমিটি আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত গঠন করা। পরবর্তীতে স্বল্প মেয়াদি একটি ধারাবাহিক কমিটি গঠন করা। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও কলেজসমূহের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত করা।
গত ২৯ মে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গুলশানে স্কাইপি বৈঠক করেন তারেক রহমান। সেখানে সকলের কথা শোনার পর নেতৃত্ব নির্ধারণে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানান। এরপরই ৩ জুন রাজিব-আকরাম কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ওই কমিটি গঠন করা হয়।####

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ