পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম সংবলিত গাড়িতে পতাকা ব্যবহারের ক্ষমতা চান ডিসিরা। একই সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ঝুঁকিভাতা চান। ডিসিদের অধীনে সার্বক্ষণিক এক প্লাটুন পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের অধীনে প্রকৌশল ইউনিট গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। আসন্ন ডিসি সম্মেলনে আলোচনার বিষয়ভুক্তি করার জন্য ডিসিরা স¤প্রতি এমন সব দাবি-দাওয়াসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে শতাধিক প্রস্তাব পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। ডিসিদের পাঠানো সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মাঠ প্রশাসনকে চাঙ্গা রাখা, উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে গতি আনা, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরকে মুজিব বছর হিসেবে পালনের দিকনির্দেশনা, তৃণমূলপর্যায়ে সরকারের নীতি ও দর্শনের বাস্তবায়ন এবং পর্যালোচনা, সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আগামী ১৪ থেকে ১৮ জুলাই ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো এ সম্মেলন পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার মোট বৈঠক থাকছে ২৯টি। এর মধ্যে কার্য অধিবেশন ২৪টি। আর ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্থলে ৫৫টি। এবার নতুন করে সংযোজন হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করবেন। এরই মধ্যে সারা দেশের ডিসিরা প্রস্তাবনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন। এবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিসিরা। বৈঠকে তারা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরবেন। আলোচনা করবেন মামলা জটিলতা, কারাগার, সরকার ও জনস্বার্থ-সংশ্নিষ্ট বিষয়। সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতা আরো কার্যকর করতে তিন বাহিনী প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন তারা। জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ডিসিরা।
২০০৭ সালের পয়লা নভেম্বর উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়। এরপর সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীন বিচার বিভাগও প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাহী বিভাগের বিচারিক ক্ষমতা অনেকাংশে কমে আসে। তবে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর আওতায় নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা এখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা, ইভটিজিং নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। কিন্তু এরপরও বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে কয়েক বছর ধরে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে প্রকাশ্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের সব ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছে বলে অভিযোগও করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে তিনি আইনজীবীসহ বিচার বিভাগ-সংশ্নিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মোবাইল কোর্ট আইন অবৈধ ষোষণার ছয় মাস পর আবার বৈধ করা হয়। তবে এ নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে চরম বিরোধ রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪টি জেলার ডিসি তাদের দাবি বা প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবার ডিসিদের প্রস্তাবের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। সিআরপিসি বা ফৌজদারি কার্যবিধির বেশ কিছু ক্ষমতা ফিরে পেতে চেয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক, রাজশাহীর ডিসি, মেহেরপুর ডিসি, গাজীপুরের ডিসি, সিলেট এবং সাতক্ষীরার ডিসিসহ অনেকই। তাদের পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাৎক্ষণিকভাবে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯০ ধারায় অপরাধ আমলে নিতে পারছেন না। ফলে মাঠ প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন, অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ, পাবলিক পরীক্ষা তদারকি, নিরাপদ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ভেজালবিরোধী অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য তারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেসিতে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বাড়াতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৯০(১)(এ)(বি)(সি) (ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অপরাধ আমলে নেয়া তৎপরবর্তী কিছু ক্ষমতা), ১৯১ (আসামির আবেদনক্রমে মামলা হস্তান্তর), ১৯২ এবং মামলা বিচারে প্রস্তুত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি : ১৫৫, ১৫৬, ১৫৯, ১৬৪, ১৬৭, ১৯৫-১৯৯, ২০০-২০৪ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার চান ডিসিরা। ডিসিরা জানিয়েছেন, উল্লিখিত ধারায় ক্ষমতা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের অপর একটি প্রস্তাবে বলা হয়, জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে প্রশাসনে সরকারি প্রতিনিধিত্ব করেন এবং জেলার মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। পদাধিকার বলে প্রায় দুই শতাধিক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঠপর্যায়ের সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসকরা তাদের স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম সংবলিত বিশেষ পতাকা ব্যবহারের অনুমতি চান।
এ বিষয়ে কয়েকজন ডিসি, এডিসি ও ইউএনও ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাৎক্ষণিকভাবে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯০ ধারায় অপরাধ আমলে নিতে পারছেন না। ফলে মাঠ প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন, অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ, পাবলিক পরীক্ষা তদারকি, নিরাপদ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ভেজালবিরোধী অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেই জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে ডিসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করা সম্ভব নয়।
তারা জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আগের মতো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো ক্ষমতা না থাকায় পুলিশ জেলা প্রশাসনের কোনো কথা শুনতে চায় না। এতে করে অনেক ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জেলা পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। এ দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ঝুঁকিভাতা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ডিসি। এ দিকে এবার ২৬ জন জেলা প্রশাসক শিক্ষার মান্নোয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে মোট ৫০টি প্রস্তাব দিয়েছেন। এপ্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাঠপর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিচারে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অনুমোদন ও বিএড ডিগ্রির লাগাম টানা, প্রত্যেক জেলায় একটি করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বহনের জন্য প্রত্যেক জেলায় নিজস্ব একটি কাভার্ডভ্যান দেয়া, দেশের চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাদানের জন্য স্থানীয়ভাবে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন আরো সহজ করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য জেলা শিক্ষা কমিটি গঠন, গাইবান্ধায় কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও শিক্ষা টিভি নামে টিভি চ্যানেল চালু।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এ প্রস্তাব করে বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। এর ফলে তারা ক্লাসরুমে পাঠদানে সময় দিতে পারেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ দক্ষ জাতি তৈরিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।