পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন চলছেই। এর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও উৎপাদন ও বিপণন থেমে নেই। গত দুই মাসে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট, চকবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কয়েকটি কারখানা বন্ধ করেছে। অভিযানে ৩০ টনেরও বেশি পলিথিন ব্যাগ ও পলিমার (পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল) জব্দ করা হয়েছে। অর্ধকোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন কর্মচারীকে আটকও করা হয়েছে। তারপরও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেক অবৈধ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোক এবং পুলিশের সহযোগিতায় অবৈধ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবিÑ পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা থাকলেও অধিদপ্তরে আছে মাত্র ১ জন। একমাত্র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহমেদ মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ে দেড় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে দিনাজপুর, নরসিংদী, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছেন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইটভাটা, পলিথিন ও বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে ১২০টি অভিযান চালিয়ে ৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। মামলা হয়েছে ২৩৩টি। পলিথিন উদ্ধার হয়েছে ৬০ হাজার ৯০০ কেজি। অধিদপ্তরে আরো ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে মামলার সংখ্যা ও জরিমানার পরিমাণ আরো বাড়ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, সব সময় নজরদারিতে রাখতে পারলে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি উপাদান। এটি অপচনশীল হওয়ায় মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে বিকল করছে। তাই পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে আমারা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি র্যাবও অভিযান পরিচালনা করছে। খুব শিগগির আমাদের লোকবল সঙ্কট কেটে যাবে। এরপর পলিথিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সূত্র মতে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানা রয়েছে, যার বেশির ভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। শুধু পুরান ঢাকার অলিগলিতে আছে নিষিদ্ধ ৩০০ কারখানা। সংস্থাটির দেয়া তথ্য মতে, কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানা আছে। আর যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা।
পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আছে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পলিথিন বাজারজাতকরণে ‘পরিবহন সিন্ডিকেট’ নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটটি এই পলিথিনগুলো ‘জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত’ লেখা ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়। এমনকি পণ্য বহনে পরিবেশবান্ধব পাটজাত ব্যাগ ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করার কথা থাকলেও আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, উৎপাদন, মজুদ, বাজারজাত ও ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানিযোগ্য কিছু পণ্য, প্যাকেজিং, নার্সারির চারা, রেণুপোনা পরিবহন ও মাশরুম চাষের জন্য পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পলিথিন ব্যাগ তৈরি করছে।
লোকবল সঙ্কটের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে না পারায় এবার র্যাবের নেতৃত্বে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান। রাজধানীর সোয়ারীঘাট এলাকায় গত মার্চে ১৭টি অবৈধ পলিথিন কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া কারখানাগুলোকে সিলগালা করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাব-১০ এর একটি টিম সোয়ারীঘাটের বিভিন্ন কারখানায় অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন ভবনে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকে মালামালও জব্দ করা হয়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, যেকোনো সময় পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এ ধরনের কারখানায়। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ কারখানায় অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
চকবাজারের ছোট ছোট গলির ভেতর মানুষ বাস করে না, এমন অনেক ভবনের এক বা দোতলায় পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানার দরজা বাইরে থেকে তালা দেয়া থাকলেও ভেতরে পলিথিন তৈরি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কারখানার মালিক বলেন, পলিথিন ব্যবসা অবৈধ হলেও স্থানীয় নেতা ও পুলিশের সহায়তায় তারা ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর লোকবল সঙ্কটের এই পুরনো রেকর্ড বাজিয়ে তাদের দায় এড়াতে চায়। মাঝে মধ্যে তারা লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। প্রকৃত অর্থে তাদের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ কারখানায় অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোক এবং পুলিশও এতে জড়িত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।