Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জটের কবলে চট্টগ্রাম বন্দর

ঈদের টানা ছুটির ফাঁদ, বন্দর ব্যবহারকারীদের কাজে ফিরতে আরও দেরি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জটের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কন্টেইনারসহ খোলা সাধারণ (ব্রেক বাল্ক) কার্গোর জট দিন দিন বাড়ছেই। সেই সাথে জেটি-বার্থ, মুরিং ও বহির্নোঙরে আমদানি-রফতানিমুখী সারি সারি জাহাজের আগমনে সৃষ্টি হয়েছে জট। এবার ঈদে টানা নয় দিনের ছুটিতে থমকে গেছে স্বাভাবিক বন্দর কার্যক্রমের গতি। এর সাথেই চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরগুলোতে দেখানো হচ্ছে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত।
লঘুচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উপক‚ল উত্তাল রয়েছে। এতে করে বহির্নোঙরে জাহাজের মালামাল লাইটারিং খালাস ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের মন্দা অবস্থা চলতে পারে পুরো সপ্তাহ জুড়ে। বন্দরের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন নির্জীব।

পোর্ট শিপিং সার্কেলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট উপচে পড়ছে। এর সমানতালে বেড়ে চলেছে খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রীর স্তুপও। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনারের মজুদ প্রায় ৫০ হাজার টিইইউস (বিশ ফুট সাইজের একক হিসাবে)। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ৩৬ হাজার টিইইউস কন্টেইনার মজুদ থাকে। কন্টেইনার বাহিত ও খোলা পণ্যবোঝাই আমদানি-রফতানিমুখী ৭০টি জাহাজে অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া চলতি সপ্তাহের মধ্যে আমদানি ও রফতানি উভয়মুখী জাহাজের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমদানিকৃত পণ্য ক্রমাগত খালাস হতে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দরে।
অন্যদিকে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সার্বক্ষণিক (২৪/৭) খোলা বা সচল রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও পণ্য খালাস, ডেলিভারি দিতে পুরোদমে প্রস্তুত। বন্দরে আমদানি পণ্যসামগ্রী খালাস কাজ দিনে-রাতে চলছে অব্যাহতভাবে। অথচ সেই তুলনায় ডেলিভারি পরিবহন হচ্ছে খুবই কম হারে এবং ঢিমেতালে। ডেলিভারি, পরিবহনের কার্যক্রমে জড়িত ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট, ঠিকাদারগণ এবং তাদের শ্রমিক-কর্মচারী বেশিরভাগই পবিত্র ঈদুল ফিত উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়িঘরে ব্যস্ততায় রয়েছেন। তাছাড়া শিপিং-কাস্টসম, সিএন্ডএফ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস, গার্মেন্টস খাত, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা মালিক ও কাঁচামাল আমদানিকারক, কনসাইনিসহ আমদানি-রফতানিকারক মিলিয়ে বন্দর জগতের স্টেক হোল্ডার বা বন্দর ব্যবহারকারীরা বন্দরের কার্যক্রমে ঈদের ছুটির ফাঁদে প্রায় অনেকেই অনুপস্থিত রয়েছেন।

বন্দর-নির্ভর এসব খাত-উপখাতের অফিসগুলো কোনটা আগামীকাল (রোববার) খুলবে। আবার অনেকগুলো এ সপ্তাহজুড়ে অঘোষিত ছুটির ফাঁদে অনেকটাই থাকবে কর্মহীন। বন্দর-শিপিং খাতের অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে ঈদের অবকাশ যাপন করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকদের কাজে ফিরতে আরও দেরি হবে। এ অবস্থায় শুধুই বন্দর চালু থাকলেও বন্দর ব্যবহারকারীদের একযোগে পণ্য খালাস ও ডেলিভারি পরিবহনের তেমন ‘গরজ’ না থাকায় বন্দরে একের পর এক জমছে কন্টেইনার এবং খোলা পণ্য। এর প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে জাহাজজট।
বন্দর কার্যক্রমের সাথে ওতপ্রোত জড়িত বেসরকারি স্থল কন্টেইনার ডিপোগুলোতে (আইসিডি) তথা অফ ডকে ঈদের পূর্বে যেখানে ছিল কর্মব্যস্ততা সেখানে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। অফডক সচল না হওয়া পর্যন্ত রফতানির চাকা গতিশীল হচ্ছেনা। যার ফলে ঈদের ছুটির ফঁদে আটকে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রফতানি চালান। তাছাড়া বন্দরজটের কারণে বন্দরে তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বেসামাল অবস্থার। এরফলে বন্দর-ব্যয়ও বেড়ে যাবে। বাড়তি অপচয় ঘটবে সময়ের। এ কারণে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যখন তা পুষিয়ে তুলবেন তার খেসারত গুণতে হবে ভোক্তা সাধারণকেই।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় সার্ভিস প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষ সবসময়ই প্রস্তুত। বন্দর সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। কন্টেইনার জট হ্রাসের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের ঈদের ছুটিতে এবং তার আগে-পরে পণ্যসামগ্রী ডেলিভারি নিতে বলা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময়ই ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত। তবে সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীরা ছুটিতে পণ্য সময়মতো ডেলিভারি নিতে অনাগ্রহের কারণেই বন্দরে জটের চাপ তৈরি হয়। তবে কর্তৃপক্ষ জটের তীব্রতা এড়ানোর ব্যাপারে সজাগ রয়েছে।

জানা গেছে, ঈদের ছুটিতেও বন্দরের সব বিভাগে কাজ চলছে। শুধুই ঈদের দিন নামাজের সুবিধার্থে গত বুধবার ১২ ঘণ্টা ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বন্দর ব্যবহারকারী সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে শিল্প-কারখানায় এখন টানা ৯ দিনের ছুটি চলছে। ঈদের আগে ৩ দিন ও পরের ৩ দিন মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে। এতে করে গত ও চলতি সপ্তাহে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি হয়ে মহাসড়কে পণ্য পরিবহন কমে গেছে। জট তৈরির পেছনে এটি অন্যতম কারণ।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক গড়ে অন্তত ৩ হাজার ৬শ’ টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারির স্থলে বর্তমানে এ সংখ্যা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। রফতানি পণ্য বোঝাই সাড়ে ৫ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি অলস অপেক্ষায় রয়েছে। আমদানিকৃত পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরে একমুখী খালাস অব্যাহত থাকায় জট আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক, কনসাইনিদের সময়মতো পণ্য খালাস বুঝে নিয়ে ডেলিভারি গ্রহণের জন্য তাগাদা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ