পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে এর যথোপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে গত বৃস্পতিবার রাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এই অপপ্রচারের ‘যথোপযুক্ত জবাব’ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে হেলসিংকির হোটেল কেম্প এ অল ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা তার ত্রিদেশীয় সফরের শেষ ধাপে ৫ দিনের সফরে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছেন। এর আগে তিনি জাপান ও সৌদি আরব সফর করেন। বিএনপি-জামায়াত তাদের বিদেশে পাচার করা বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের দ্বারা বিত্তশালী হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই অর্থের সাহায্যে তারা বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, যারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সফল হবেন তাদেরকে দলে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
শেখ হাসিনা যে যেখানে বসবাস করছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি পরামর্শ দেন। ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দের সঙ্গে বলেন, লাখ লাখ মানুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আপনজনের সঙ্গে নিরাপদে পবিত্র ঈদ উদযাপন করেছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রায় জনগণ প্রায় যানজট মুক্ত পরিবেশে রাস্তায় চলাচল করেছে, একইসঙ্গে রেলপথ, নদীপথ এবং আকাশ পথেও তাদের চলাচলের সুবন্দোবস্ত ছিল।
অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আলী রমজান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে একটি কনসুলেট অফিস খোলার প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনে ঢাকা-হেলসিঙ্কি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ড মঙ্গলবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১১ লাখ রোহিঙ্গা মানুষকে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন কামনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম এখানে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে যাবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি মোকাবেলায় তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজের সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেছেন। শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূল বরাবর সবুজ বেল্ট নির্মাণ এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছাসের মতো প্রভাবগুলি মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত করেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, জলবায়ুু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উত্থান ঘটলে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতি হ্রাস করার জন্য বৈশ্বিক সতর্কবাণী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং রোহিঙ্গা জনগণের বিপুল সংখ্যক লোককে আশ্রয় প্রদান করা খুব কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, মিয়ানমার চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও রোহিঙ্গা জনগণকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মায়ানমার কর্তৃপক্ষ ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নির্বাসনের পরেও মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়নি। তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে।
প্রধানমন্ত্রী তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করার জন্য ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ জানান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে আইওএমের মহাপরিচালক নির্বাচিত করার জন্য ফিনল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন।
আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। গতকাল ৭ জুন ফিনল্যান্ডের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে কাতার এয়ারলাইনসের একটি বিমানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে হেলসিংকি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে তার ১২ দিনের ত্রিদেশীয় সফরের উদ্দেশে ২৮ মে ঢাকা ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সফরের প্রথমে জাপানে ২৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ফিউচার এশিয়া শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ভাষণ দেন। তিনি সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। জাপানের সফর শেষ করে শেখ হাসিনা জেদ্দার উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেন এবং ৩ জুন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে মক্কাতে ৩১ মে ‘মক্কা সামিট: টুগেদার ফর দি ফিউচার’ শীর্ষক ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। মক্কায় প্রধানমন্ত্রী পবিত্র উমরাহ পালন করেন এবং মদীনাতে মহানবী হয়রত মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা জিয়ারত করেন। সউদী আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ জুন ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ৪ জুন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।