Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুসল্লিদের অসন্তোষ

পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে পুলিশের কড়াকড়ি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এ ছাড়াও হিজরি সালের আরো কয়েকটি দিন মুসলমানদের জন্য খুবই তৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে শবে কদর, শবে মেরাজ, শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী- এই দিনগুলোর রাতে ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অনেক বেশি। ইসলাম ধর্মের এই গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলোয় দিবাগত সারা রাত দেশের তৌহিদী জনতা নামাজ পড়ে, জিকির-আজকার করে আল্লাহর কাছে পানাহ চান। এই প্রচলন শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এসব ঐতিহাসিক হিজরি তারিখের দিবাগত রাতে মুসলমানদের ঘরে ঘরে ইবাদত-বন্দেগি করেন নারী-পুরুষ। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদে মসজিদে রাত জেগে নামাজ আদায় করেন তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এই দিনগুলোয় মানুষ অজু করে পবিত্র হয়ে মসজিদে যান নামাজ আদায় করতে। কিন্তু এবার শবে কদরের রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে যেন তাতে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটেছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা টেলিফোন করে অভিযোগ করেন, তারা মসজিদে যাওয়ার সময় কেউবা আসার সময় নানা বাধা ও ঝামেলার মুখে পড়েছেন। এতে তারা মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে মুসল্লিদের বাধা কাম্য নয়।

পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তার অজুহাতে পুলিশের অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে সাধারণ মুসল্লিদের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এ শবে কদরের রাত্রিতে গুলশান জোনের পুলিশ মসজিদ কমপ্লেক্সে গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়নি। এতে শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় না করে ফিরে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যখন মক্কায় রয়েছেন, তখন নিরাপত্তার নামে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের অতি পদক্ষেপ ঢাকা মহানগর পুলিশের দীর্ঘদিনের সুনাম মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিরাপত্তার প্রয়োজনে গাউছুল আজম মসজিদে পুলিশি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সাধারণ মুসল্লিদের কথা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত কড়াকড়ি ও গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে না পেরে অনেক মুসল্লি নামাজ আদায় না করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্য কোনো মসজিদে এ ধরনের পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি প্রশ্ন করা হলে ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, গুলশানের আজাদ মসজিদেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মসজিদে গাউছুল আজম বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর একজন নিরাপত্তা কর্মী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত্রিতে শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও মুসল্লিরা আসেন ইবাদতের জন্য। পুলিশ তারাবির নামাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই মুসল্লিদের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এতে করে অনেক মুসল্লি নিজের গাড়ি চালিয়ে আসেন এবং চালক না থাকায় চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয়, পুলিশের অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে মসজিদের গেটেও গাড়ি থামতে দেয়নি। এতে অনেক মুসল্লি পুলিশের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করে চলে যান। তাছাড়া গুলশানের আজাদ মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদে খবর নিয়ে গাড়ি প্রবেশ করতে না দেয়ার কোনো তথ্য পাইনি। জানতে চাইলে রাজধানী ঢাকার একটি মসজিদের ইমাম বলেন, মহাখালীর গাউছুল আজম মসজিদ, গুলশানের আজাদ মসজিদসহ রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোতে কোনো দিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে বলে শোনা যায়নি। ওইসব মসজিদের পরিচালনা কমিটি ও দায়িত্বরতরাই মসজিদের নিরাপত্তা দেখভাল করেন এবং মুসল্লিরাই মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করেন। নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব হলেও মুসল্লিদের অসুবিধা হতে পারে, এমন কড়াকড়ি আরোপ উচিত নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ