পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিকূল অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ ও নিরাপত্তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত মুসলমান জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে
তাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা রুজুর বিষয়েও সবার সহযোগিতা কামনা করেন। গতকাল পবিত্র মক্কা নগরীতে ১৪তম ওআইসি সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের এবারের শিরোনাম ‘মক্কা আল মোকাররমা শীর্ষ সম্মেলন : ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে’। তিনি আরো বলেন, ওআইসি’র নিজস্ব সমস্যাগুলো মোকাবেলার সক্ষমতা থাকা উচিত। কেননা এটির বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ কৌশলগত সম্পদ এবং এর বেশির ভাগ তরুণ-যুবক রয়েছে।
ওআইসি সম্মেলনে সংগঠনটির ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের বাদশাহ, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। গত শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানান সউদী আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করলে বাদশাহ তাকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন সউদী বাদশাহ। সংস্থার মহাসচিবের বক্তব্যের পর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা একে একে বক্তৃতা করেন।
সম্মেলনে ওআইসির এশিয়া গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিপীড়িত হওয়া এবং তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমেই জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের আইনগত
অধিকার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ তৈরি হয়। তিনি বলেন, এই
প্রক্রিয়াকে এত দূর এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এই মামলা রুজুর বিষয়ে স্বেচ্ছা তহবিল সংগ্রহ এবং কারিগরি সহযোগিতার জন্য। তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বাংলাদেশ মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় প্রদান করেছে। কিন্তু তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত। কেননা মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে এসব রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য যে ধরনের অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন তা সৃষ্টিতে মিয়ানমার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেভাবে বাংলাদেশ কাজ করেছে, আসুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সে ধরনেরই একটি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করি; সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের দলকে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং উগ্রপন্থা বাস্তবায়নে বাধা দেই এবং জোটবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাই। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সন্ত্রাস বন্ধে রিয়াদ সম্মেলনে ঘোষিত মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রদত্ত তার ৪ দফা নীতির কথা স্মরণ করেন। ওই চার দফায় রয়েছে- ‘অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা, সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার বিভাজন দূর করা এবং সংলাপের মাধ্যমে যেকোনো প্রকার দ্ব›েদ্বর শান্তিপূর্ণ সমাধান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল অন্ধকার জগতের আলোকবর্তিকা হিসেবে। কিন্তু অপব্যাখ্যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের ভাবধারা হিসেবে ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, খ্রিষ্টান চার্চ আক্রমণের দুঃখভোগী পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছি। যে হামলায় আমার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও নিহত হয়।
ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতাহীন মানুষ যেভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে, সেসব অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণার সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জমি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরিয়ে আনতে উম্মাহর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ওআইসির জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সাত দশক পরও ফিলিস্তিনের সমস্যা এখনো বিদ্যমান এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ এখনো বিভক্ত। তিনি মুসলমানদের অমর্যাদা ও দুর্ভোগ অবসানের পথনির্দেশনা তৈরি করতে সউদী বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১শ’ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ওআইসির উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এটা খুবই আশাজাগানিয়া যে, নিজেকে ২১ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ওআইসি উন্নয়ন এবং সংস্কারের অতি প্রয়োজনীয় পথ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে তিনি এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ইসলামের মূল দর্শনকে মূল্য দেয়াসহ সংগঠন, সমতা এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সা:) নির্দেশিত পথ অনুসরণের পরামর্শ দেন।
এর আগে ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার বিকালে জাপান থেকে সউদী আরবে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। সউদী সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, নাহিম রাজ্জাক এমপি, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।