Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘জয় পাকিস্তান’ লেখায় ক্ষমা চাইলেন এ কে খন্দকার

‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আত্মজীবনীমূলক বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ বইয়ের একটি অংশে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর সেই অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক ও সাবেক মন্ত্রী এয়ারভাইস (অব.) মার্শাল এ কে খন্দকার (বীর উত্তম)। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার লেখা ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ বইয়ের বিতর্কিত অংশটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে (লেখার ৫ বছর পর) বইয়ে উল্লেখিত ‘জয় পাকিস্তান’ অসত্য তথ্যের জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের কাছেও ক্ষমা চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এ কে খন্দকার। তিনি বলেন, আমার লেখা বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ ২০১৪ সালের আগস্টে ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশনার পর এর ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশ ও বইয়ের আরো কিছু অংশ নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ ওঠে। বইটির বিশেষ অংশটি হলো- ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই (৭ মার্চের ভাষণ) যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, ‘জয় পাকিস্তান’। তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাইয়ের এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে কখনোই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দু’টি বলেননি। আমি তাই আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার উল্লেখিত বিশেষ অংশ সংবলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমি জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী রূহের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। তারই বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে দেশ যুদ্ধাপরাধীমুক্ত। জীবনসায়াহ্নে দাঁড়িয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞ।
বক্তব্যের ইতি টেনে তিনি বলেন, আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার পুরো জীবনে করা কোনো ভুলের মধ্যে এটিকেই আমি একটি বড় ভুল বলে মনে করি। গোধূলি বেলায় দাঁড়িয়ে পড়া সূর্যের মতো আমি আজ বিবেকের তাড়নায় দহন হয়ে বঙ্গবন্ধুর রূহের কাছে ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আশা করি, প্রথমা প্রকাশনী আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনঃমুদ্রণ করবে। দেশপ্রেমিক সবার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কে খন্দকারের স্ত্রী ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘এটা যে কিভাবে আসলো, আর আসার পরে আমরা চেষ্টা করেছিলাম সংশোধন করার। কিন্তু আমাদের সংশোধন করতে দেয়া হয়নি। কারা এর জন্য দায়ী আমি তাদের নাম বলতে চাই না। কারণ, এই ৫ বছর আমরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি, আমি চাই না এই নামগুলো বলার কারণে তারা (জড়িতরা) আবার সেই যন্ত্রণা ভোগ করুক। আমি মতিউর রহমানকেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম- ভাই আপনি এটা পড়ে দেখেননি? তিনি বলেন, এটা আমি করি না, আমাদের লোক থাকে। তারা বানান ভুল, গ্রামার এসব দেখে। তারা এগুলো খেয়াল করেনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম যে সংশোধনীটা হয়ে যাক। কিন্তু আমাদের সেটা করতে দেয়নি।’
পাঁচ বছর পরে আপনাদের এই উপলব্ধি হলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘পাঁচ বছর পরে না। এটা তখনই হয়েছে।’ কারা তখন সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি জানতে চাইলে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘আমি নামগুলো বলতে চাই না। আমি চাই না তারা আমাদের মতো যন্ত্রণা ভোগ করুক। নামগুলো আমার জানা আছে। যদি সে রকম দরকার হয় তাহলে আমি সেগুলো প্রকাশ করব।’ তবে একপর্যায়ে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘মঈদুল হাসান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাজউদ্দীন সাহেবের প্রেস সেক্রেটারি। সেই মঈদুল হাসান এবং আরেকজন ওবায়েদ- এরা বইটির ভুল তথ্য সংশোধন করে সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি। সংবাদ সম্মেলন করে ভুল স্বীকার করব বুঝতে পেরে তারা কয়েক দিন ধরে আমাদের পাহারা দিয়ে রেখেছিল। আমাদের বলা হলো- ‘গুলি ছুড়ে দিয়েছ, এখন কি গুলির পেছনে দৌড়াবা?’
ফরিদা খন্দকার তার স্বামী এ কে খন্দকারের প্রসঙ্গে বলেন, ‘বইটা সংশোধন না করাতে উনি কিন্তু মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছেন একেবারে উন্মাদ পাগল হিসেবে। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। তিনি কানে কম শোনেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ।’



 

Show all comments
  • Kamal Hossain Khan ২ জুন, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 1
    আপনাকে জাতি ক্ষমা করবেনা। সুস্থ মস্তিষ্কে মিথ্যা লিখে শেখ হাসিনা কে হেয় করে এবং প্রেসার সৃষ্টি করি মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখের বেটি এইসব তোয়াক্কা করেনা। সত্যের জয় হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Showkat Anam ২ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    সত্য থেকে আবার ফিরে মিথ্যার পথে,,এবার টাকা নিশ্চিত.
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Ali ২ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    এরাই ইচ্ছাকৃত ভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে, জ্ঞান পাপী, বদমাইস, কে বলবে হয়ত এদের মাঝেই ঘাতক লুকিয়ে ছিল যুদ্ধের সময়।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamruzzaman Biplob ২ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    শেষ বয়সে এসে ইতিহাসের ধর্ষণ করবেন না।তখন সকলে পাকিস্তানের নাগরিক ছিলো। পাকিস্তান বলতেই পারে।। এতে করে মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি।।
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Hoque ২ জুন, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    এতোবড় একজন মানুষ, তিনিও ধরে রাখতে পারলেননা নিজেকে। এমন কাজটি করলেন যা একজন অধমেরি কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamsul Alam ২ জুন, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
    He fell in the traps of some goons who exploited his Advance age. He remains a respected living guard of our War of Liberation. I shall appeal to all to please forgive him.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ