পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর অভিপ্রায় হচ্ছে সুদকে ধ্বংস করা। আর জাকাতের দ্বারা সম্পদ ও বরকত বাড়িয়ে দেয়া। (আল-কোরআন)। দুনিয়াতে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ-সম্পদের মালিকেরা চোখের পলকে পথের ফকির হয়ে গেছে। এক দুই পুরুষের ব্যবধানে সুদীকারবারি ভিক্ষার থালা হাতে রাস্তায় নেমেছে। সুদভিত্তিক বিলিয়ন-ট্রিলিয়নের ব্যবসা অকল্পনীয়ভাবে ধ্বসে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে নামী-দামি ব্যাংক, কর্পোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রিয়েল এস্টেটওয়ালারা দেউলিয়া হয়ে গেছে।
অঢেল টাকার মালিক একটি মাত্র রোগে ধন-সম্পদ সব হারিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছে। পরস্ব অপহরণের দ্বারা ধনকুবের হয়ে যাওয়া লোকটি স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সান্নিধ্যসুখ কিংবা আত্মীয়-পরিজন এমনকি ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি থেকে ভীষণ রকম বঞ্চিত। অর্থের জোরে বা কৃত্রিম অহমিকাবোধ থেকে সে তেজ দেখালেও মানবিক দিক দিয়ে সে ভেতর থেকে ভয়ঙ্কর রকম ফাঁকা, যা পূরণের জন্য সে বোকার মতো মৌজমাস্তি, অপচয় বা মাদকের আশ্রয় নেয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এমন অর্থহীন জীবনের চিত্র আঁকতে গিয়ে বলেছেন, (ভাবার্থ) যারা সুদ খায় (হারাম টাকায় মিছে সুখ গড়ে তোলে) তারা যেন খেইহারা কোনো মাতাল। মনে করে আকাশে উড়বে, অথবা তাদের কেউ এসে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। অপরদিকে আল্লাহ দায়িত্ব নিয়েছেন হালালে বরকত দেয়ার। বলেছেন, যে আল্লাহকে ভয় করে চলে, তার ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। তিনি তাকে এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করে না। (আল- কোরআন)।
রমজানের আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। ঈদের চাঁদ ওঠা পর্যন্তই রমজান থাকবে। এমনিতে আল্লাহ যে কোনো মানুষকে একটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি নেকি দিয়ে থাকেন। তার নিয়ত ও আন্তরিকতা অনুযায়ী কাউকে সত্তরটি আর কাউকে ৭শ’টি, এরপর তিনি যাকে চান যত গুণ ইচ্ছা দিয়ে থাকেন। রমজানে একটি ফরজের সওয়াব কমপক্ষে সত্তর গুণ করা হয়।
যারা জাকাত দেন তারা এক টাকার বিনিময়ে সত্তর টাকার সওয়াব কমপক্ষে পাবেন। যার এক লাখ বা এক কোটি টাকা জাকাত এসেছে তিনি রমজানের ভেতর এ জাকাত দেয়ার নিয়ত করলে বা দিয়ে দিলে সত্তর লাখ বা সত্তর কোটি টাকার সওয়াব পাচ্ছেন। এ সুযোগ কোনো ঈমানদার বুদ্ধিমান ব্যক্তি হাতছাড়া করতে পারে না। আপনিও এ সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
জাকাতদাতার সম্পদের হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহর। হেফাজত শুধু নয়, আল্লাহ চান যে জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা সুসংহত হোক। বরকতময় হোক। জাকাত দিলে নিজ ও নিজ বংশধরের মধ্যে দীন-ঈমান টিকে থাকে। সুন্দর মন-মানসিকতা, মানবিক গুণাবলি সুরক্ষিত থাকে। মানবতা, সুস্থ অনুভূতি ও নৈতিক পবিত্রতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে জাকাত না দিলে সম্পদ বিষযুক্ত হয়ে যায়। অপবিত্র হয়ে যায়।
জাকাত শব্দের অর্থই হচ্ছে পবিত্র করা। জাকাত দিলে শারীরিক-মানসিক-আধ্যাত্মিক সুস্থতা বজায় থাকে। মন আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। কুচিন্তা, পাপচিন্তা, শয়তানের ধোঁকা ও নফসের প্ররোচনা থেকে মানুষ রক্ষা পায়। জাকাত না দিলে অর্থের দম্ভ বা মোহ মানুষকে যে কোনো সময় অধীর ও অবিবেচক বানিয়ে তোলে। যার ফলে সে বা তার স্ত্রী-সন্তান এমন কোনো কুকীর্তি করে বসে যা তার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। অতীত বংশীয় গৌরব ধ্বংস করে। অর্থ ক্ষয় করে। পারিবারিক সুখ বিনষ্ট করে। সামাজিক শান্তি ও মর্যাদা বিঘিœত করে। সর্বোপরি আখেরাত বরবাদ করে দেয়। যার চেয়ে বড় ক্ষতি মানবজীবনে আর কিছু হতে পারে না।
জাকাত চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাত এমনকি রাষ্ট্রের রোষানল থেকেও জাকাতদাতাকে রক্ষা করে। আল্লাহর রহমতের ফেরেশতারা জাকাতদাতাকে হেফাজত করেন। আর জাকাত না দিলে জমাকৃত এসব সম্পদই পরকালে তার শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ বলেন, যারা সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, হাশরের দিন এসবকে আগুনে গরম করে তাদের কপাল চেহারা ও দেহের নানা অংশে ছেঁকা দেয়া হবে। হাদিসে এসেছে, সম্পদ সাপের আকারে তাদের গলায় ঝুলবে আর ছোবল দেবে। বলবে, আমরা তোমার সে সম্পদ, যা তুমি পাওনাদার ও বঞ্চিতদের না দিয়ে কুক্ষিগত করে রেখেছিলে।
জাকাত খুব সহজ একটি আমল। চলতি রমজানে দৈনিক ইনকিলাবে জাকাত সংক্রান্ত যতগুলো তথ্য ও বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছে ডিজিটাল যুগের যে কেউ এক মুহূর্তের মধ্যেই এসব এক জায়গায় জমা করে নিজ আয়ত্তে নিতে পারেন। জাকাত বিষয়ে হ্যান্ডনোট তো বটেই একটি ভালো গ্রন্থ পেয়ে যাবেন। জাকাত দেয়ার তারিখ ঠিক করে নিয়ে, বছরে সে তারিখটিতেই নিজের জাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাব করে সেদিনের স্থিতির ওপর জাকাত দিতে হয়।
একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুখে মুখে হিসাব করলেও চলে। হিসাব একটু বিস্তারিত হলে কাগজ-কলম হাতে নিতে হয়। যারা বড় অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িত তারা অ্যাকাউন্টস যেভাবে মেইনটেইন করেন জাকাতের জন্য এরকমই একটি ফাইল রাখবেন। সব আয় সম্পদ তথ্য জমা হবে, জাকাত দিবসে হিসাব কমপ্লিট করে জাকাত দিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে জাকাত বিষয়ে বিজ্ঞ পরামর্শকের সাহায্য নেবেন। জাকাত আন্দাজ করে দিলে আদায় হয় না। নিখুঁত হিসাব করে দিতে হয়।
জাকাত দিতে মানুষ দ্বিধা করে কেন? কেন দিতে চায় না? বরং এ টাকাটি স্বয়ং আল্লাহকে দেয়ার মতোই। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ মর্মে বলেছেন, তোমরা যা কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় করো এসবই আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত থাকে। আল্লাহ এসব বাড়াতে থাকেন। বহুগুণে বৃদ্ধির পর সেসব তোমাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ মানুষের ছোট- বড় কোনো আমলই বিনষ্ট হতে দেন না। কোরআনের এ কনসেপ্ট থেকে দান, ছদকা ও জাকাতের গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারি।
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, হাশরের দিন আল্লাহ বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তোমরা আমাকে খেতে দাওনি। আমি রুগ্ন ছিলাম তোমরা আমার চিকিৎসা করোনি। আমি অভাবী ছিলাম তোমরা আমাকে সাহায্য করোনি ইত্যাদি। মানুষ তখন বলবে, হে আল্লাহ আপনি সর্বশক্তিমান ও সকলের স্রষ্টা। অপনি কিভাবে ক্ষুধার্ত, অভাবী ও রুগ্ন হতে পারেন? তখন আল্লাহ বলবেন, আমার অভাবী ও দুঃখী বান্দারা তোমার কাছে গিয়েছিল, কিন্তু তুমি তাদের কিছুই দাওনি। যদি দিতে তাহলে তা আমাকেই দেয়া হতো। আর এর বিনিময় আজ তোমরা আমার কাছে পেতে।
এ জন্যই হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর বৃহৎ পরিবার। সব চেয়ে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে মানুষের বেশি উপকার করে। যদি কেউ নিজের শত সহ¯্র কোটি টাকার বাড়ি-ঘর, কলকারখানা, খেত-খামার, নগদ টাকা একজনকে দিয়ে দেয় আর বলে আমার কিছু লোক আছে তাদের বছর শেষে তুমি তোমার প্রবৃদ্ধিশীল অংশ থেকে শতকরা আড়াই ভাগ দিয়ে দিও।
এটি আমি মালিকের অংশ। তাহলেই তোমাকে দেয়া আমার সব কিছুই তোমার জন্য বৈধ, স্থায়ী ও পবিত্র। আমার নিরাপত্তা ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তুমি পেয়ে যাবে। এরপর যদি অকৃতজ্ঞ এ লোকটি সব কিছু ভোগ করা সত্তে¡ও মালিকের ক্ষুদ্র অংশটি তার লোকদের না দেয়, তাহলে সে কি বিশ্বের সব চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ নয়? সে কি শাস্তি ও বিচারের যোগ্য নয়? জাকাতও ধনী লোকেদের জন্য এমনই একটি বিষয়।
অতএব, সব ধনসম্পদ স্বাস্থ্য সম্মান মেধা বুদ্ধি কৌশল সহায় সম্পত্তি সন্তান বিত্ত ইত্যাদির মূল মালিক ও মহান দাতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত সামান্য অংক যে বান্দারা দিতে চায় না, তাদের সুমতির জন্য আমরা সর্বশক্তিমানের দরবারে মোনাজাত ছাড়া আর কী করতে পারি। আল্লাহ যেন সবাইকে ঈমান, কৃতজ্ঞতাবোধ ও সঠিক জ্ঞান দান করেন।
রমজানের সময় বয়ে যাচ্ছে। আর কয়েকটি দিন রাত মাত্র। আল্লাহ সবাইকে দিনে রোজা রাখার, রাতে যথাসম্ভব অধিক নামাজ পড়ার, সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার, বেশি বেশি ভালো কাজ করার, বিশেষ করে সম্পদের জাকাত দেয়ার, ফিতরাসহ অন্যান্য দান ছদকা গিফ্ট-উপহার আত্মীয়স্বজনের হক আদায় ইত্যাদি অমূল্য ইবাদত করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ দিন। রমজানে যে অসংখ্য অগণিত বান্দাকে আল্লাহ জান্নাতে নেয়ার ফায়সালা করে থাকেন, তাতে যেন আমাদের সবাইকেও তিনি দয়া করে শামিল করেন। আসুন, জাকাতসহ সকল নেক কাজের এ সোনালি সময়টি কাজে লাগাই। জান্নাতি এ আহবানে সাড়া দেই। ইবাদতের ও সওয়াব লাভের এ মৌসুম কিন্তু খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।