Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বোরো আবাদে কৃষকের ক্ষতি ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

ধানের দাম নিয়ে জাতীয় সংলাপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বর্তমান দামে যদি দেশের কৃষক তাদের ৬৫ শতাংশ ধান বিক্রি করে দেয় তাহলে কৃষকের ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী বাজেটে কৃষি খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হবে। এছাড়া সরকারীভাবে শস্য গুদাম ও মজুদাগার ২১ লাখ টন থেকে ৬০ লাখ টনে উন্নিত করতে হবে। পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে কমিউনিটি ভিত্তিক শস্যভান্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের মূল্য: চ্যালেঞ্জ ও করনীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তরা। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ত¡ করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, এখনও কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এজন্য এখনই ৫০ লাখ টন শুধু ধান কেনার ঘোষণা ও তা দ্রæত বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি বন্ধ করতে হবে। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো আমদানির বিষয়ে কৃষক বান্ধব যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিলার ও ব্যবসায়িদের ফাদ থেকে কৃষককে বাচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতিহারে কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, কৃষক হারলে দেশ হারবে। এজন্য কৃষক, কৃষি ও কৃষি শ্রমিক বাদ দিয়ে কোন কিছুই করা যাবে না। কৃষককে সংগঠিত করার পাশাপাশি স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। পাশাপাশি মজুদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। পাশাপাশি নীতি গ্রহন ও মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের মধ্যে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মধ্যে আরো সমন্বয় প্রয়োজন।

ভর্তূকির যৌক্তিকতা তুলে ধরে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, কৃষককে ভর্তূকি দিলে সরকারকে সেটা প্রত্যক্ষভাবে ফিরিয়ে দেয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ৬ হাজার কোটি টাকার মাধ্যমে ভর্তূকি চালু করেছিলেন বলেই পরের দুই অর্থ বছরের মধ্যে দানাদার খাদ্য শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিলেন। প্রয়োজনে এ ভর্তূকির পরিমান ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে।

যানিন্ত্রকীকরনে জোর দিতে হবে জানিয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, যান্ত্রিকীকরণ বিশেষ করে শস্য বোপন, রোপন, কর্তন, মাড়াইয়ে জোর দিতে হবে। এছাড়া পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আমদানিতে ওস্তাদ কিন্তু খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত হলে কি করা হবে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। চলতি মাসে যারা ধান কিনেছে শুধু সেসব মিলারদের নিকট থেকে চাল কেনা হবে এমন ঘাষনা দিলে কৃষক উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষনা পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান, কৃষক তাদের ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ পাচ্ছে না। কৃষকদের কথা বলার জন্য কৃষক থেকে রাজনীতিতে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ খাদ্য, গবেষনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আরো গবেষনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে।

মহসিন আলী বলেন, ক্ষুদ্র ও বর্গাচাষীদের যন্ত্রের সুবিধা দিতে ভাড়া ভিত্তিক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কৃষক পর্যায়ে কৃষি উপকরন বিশেষ করে সেচ, সার ও কীটনাশকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্প্রসারণ কর্মীদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। কৃষি নীতি বাস্তবায়নে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা এবং সময় উপযোগি পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

একশন এইডের পরিচালক আসগর আলী সাবরি বলেন, কৃষকের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বড়ই অভাব রয়েছে। গতকালের সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা ছাড়াও কৃষক প্রতিনিধি ও বেসরকারী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ