পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সোনার হরিণ খুঁজতে অবৈধভাবে বিদেশ গিয়ে অর্থের সঙ্গে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা দেশের বাইরে যাবে নিজের ভাগ্য লক্ষী খুলতে, সোনার হরিণ পাওয়ার জন্য। এটা ঠিক যে বাইরে আসার ফলে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের দেশেরও উন্নতি হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নাই। তবে আমি মনে করি- অবৈধভাবে আসার (বিদেশ যাওয়া) কোনো প্রয়োজনই নাই।
গতকাল জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেখেছি অনেকে নিজের ঘর বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে প্রবাসের পথে যাত্রা শুরু করে। এতো অনিশ্চয়তার মধ্যে সে জানে না কোথায় যাবে, কোথায় কী? হয়তো কিছু দালাল থাকে তারা খুব ভালো স্বপ্ন দেখায়, সেই স্বপ্ন দেখে সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে যেয়ে নিজেদের জীবন দিতে হয়।
বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ও প্রবাসীদের সুরক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আমরা যেটা করেছি আমাদের প্রত্যেকটা ডিজিটাল সেন্টারে সকলে রেজিস্ট্রেশন করবে। এই রেজিস্ট্রেশন করার পরে তালিকাটা থাকবে, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোথায় চাকরি পাবে, সেই চাকরির কি কি সুবিধা পাবেন, ঠিক মতো চাকরিটা হবে কি না, বেতনটা হবে কি না? সেই বিষয়ে তথ্য নিয়ে তারপরে যেতে হবে। যারা বাইরে কাজ করতে যাবে তাদের ট্রেনিং এরও ব্যবস্থা করা আছে। তাই প্রয়োজনীয় ট্রেনিং নিয়ে বিদেশ যেতে হবে। এতে বেতনও ভালো পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, জমি বিক্রি না করে ওই ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নিয়েও বিদেশ যেতে পারেন। যারা হতদরিদ্র তাদের কোনো জামানতও দিতে হয় না। আমরা তাদের সহযোগিতা করি এবং খুব অল্প পয়সায় তারা প্রবাসে যেতে পারে।
অজ্ঞানতায় বা ভুল স্বপ্নের বিভোর হয়ে যারা বিদেশ যেতে জীবনের ঝুঁকি নেন তাদের প্রতি করুণা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এত সুযোগ থাকা সত্তে¡ও কেন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যায়! যখন আমরা দেখি সাগরে মানুষ মারা যায়, আট লাখ টাকা ব্যয় করে গিয়েছে। আমার কথা হলো এই আট লাখ টাকার মধ্যে যদি দুই লাখ টাকাও দেশে ব্যয় করতো, দেশে কিন্তু অর্থ উপার্জন করতে পারতো। এভাবে জীবনটাও দিতে হতো না, টাকাটাও নষ্ট হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে, সেই সুযোগটা আছে। এভাবে নিজেকে ধ্বংস করার পথে যেন কেউ না যায়। এখন দেশে কাজ করলেই টাকা। কেউ একটু কষ্ট করে কাজ করতে চায় তাহলে তারা কিন্তু কাজ করতে পারে।
প্রবাসীদের দেশে বিনিযোগ করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, প্রবাসীরাও আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করলে নিজেরাও উন্নত হবেন, দেশও উপকৃত হবে।
নতুন নতুন পণ্যের রপ্তানি বাজার খুঁজতে প্রবাসীরা ভ‚মিকা রাখতে পারেন-এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পণ্য বাজারজাতকরণে, কোন দেশে কোন কোন পণ্যের চাহিদা সেটা আমরা উৎপাদন করতে পারি, বাজারজাত করতে পারি। সেই সুযোগ যথেষ্ট আছে। নতুন পণ্যের বাজার ক্ষেত্রে প্রবাসীরাও ভ‚মিকা রাখতে পারে।
প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা ও বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী বাংলাদেশি শাকুরা সাবের, সালেহ মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।
এর আগে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে এবং টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। গতকাল সকালে ৯টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী জাপানের রাজধানী টোকিও’র উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধানগণ, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রী সফরের প্রথমে জাপানে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ফিউচার এশিয়া শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ভাষণ দেবেন। তিনি সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। শেখ হাসিনা সেখানে তার সম্মানে বাংলাদেশী কমিউনিটির দেয়া একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। এছাড়াও, তিনি হোলি আর্টিজানে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন এবং জাপানি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সফরের প্রথম দিনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী জাপানি সময় ৮টা ৩০ মিনিটে হোটেল ওকুরাতে বাংলাদেশী কমিউনিটি অভ্যর্থনায় যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। আজ সকালে হোটেল নিউ অটনিতে প্রধানমন্ত্রী জাপানী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ গোলটেবিল সভা করবেন। একই দিন বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানে ক্ষতিগ্রস্ত জাপানিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে তিনি জাপানি প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে’র সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা সভায় মিলিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছলে সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। আলোচনা শেষে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত এবং যৌথ ঘোষণা পাঠ করা হবে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বাসায় রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী ইমপেরিয়াল হোটেলে নিক্কেই সম্মেলনে যোগদান করবেন। সেখানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন। শেখ হাসিনা পরে একই স্থানে ভবিষ্যৎ এশিয়া বিষয়ক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। পরে জাইকা’র সভাপতি শিনিচি কিতাওকা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নিক্কেই কনফারেন্স নৈশভোজে অংশ নেবেন। এখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন প্রধান বক্তা।
আগামী শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে (জাপান সময়) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মক্কায় ওআইসির ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেদ্দার উদ্দেশে হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।
এফবিসিসিআই প্রতিনিধিদল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল সকালে জাপানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে। এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ৫১ সদস্য বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান হয়।
এতে আরো জানান হয়, জাপান সফরকালে এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার ও গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী দেশ জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরো স¤প্রসারণের জোর উদ্যোগ নেবেন। এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ জেট্রো নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং টোকিও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এফবিসিসিআই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দরা হলেন- এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ, সহ-সভাপতি হাসিনা নেওয়াজ, রেজাউল করিম রেজনু, দিলিপ কুমার আগরওয়ালা, নিজামুদ্দিন রাজেশ, এফবিসিসিসিআই পরিচালক মাহবুবুল আলম, সালাউদ্দিন আলমগীর, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, মো. খায়রুল হুদা, সুজীব রঞ্জন দাস, খন্দকার রুহুল আমিন, মাসুদ পারভেজ খান, আমজাদ হোসেন, ড. কাজী এরতেজা হাসান, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, মো. আতাউর রহমান ভ‚ইয়া, খন্দকার মাইনুর রহমান, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, শমী কায়সার, প্রীতি চক্রবর্তী, বেনজীর আহমেদ, মোহাম্মদ ফারুক, আব্দুল হক, কাজী শোয়েব রশিদ, মোহাম্মদ রিয়াদ আলী, মেহেদী আলী, হুমায়ুন রশিদ খান পাঠান রুমেন, এম এ রাজ্জাক খান, মো. মুনির হোসেন, মোহাম্মদ মনজুর রহমান পিটার এবং মোহাম্মদ নুরুন নেওয়াজ।
এ ছাড়া এফবিসিসিআই বাণিজ্য প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি, রুবানা হক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টি সভাপতি নিহাদ কবির। জাপান সফর শেষে এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ আগামী ৩১ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হিসেবে সউদী আরব সফর করবেন। তারা মক্কা ও মদিনা সফর করবেন এবং পবিত্র ওমরাহ হজ্ব পালন করবেন। পাশাপাশি এফবিসিসিআই সভাপতি এবং সিনিয়র সহ-সভাপতির অনুপস্থিতিতে সংগঠনের সহ-সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।