পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশেই সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে- দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং দেশকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা। গতকাল শনিবার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য হ্রাসের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি... আমাদের সর্বদা একটি লক্ষ্য দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা, তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করা।
নবনির্মিত সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খুবই সহায়ক হবে। সেতুগুলো আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বর্তমান বিশ্ব এখন একটি বৈশ্বিক গ্রাম। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সকলের সঙ্গে মিলে চলতে হবে। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো শুধু আমাদের জন্য নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও অনেক অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সরকার সড়ক, নৌ, রেলপথ ও বিমান যোগাযোগ উন্নয়ন করছে এবং দেশের জনগণ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির সুফল পাচ্ছে। ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ কমাতে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন থাকবে এবং এতে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে। একবার এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে, ভোগান্তি থাকবে না। দেশের উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, উন্নয়ন সহযোগী, সর্বোপরি দেশের জনগণের সকল ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে সরকার। সড়কে চলাচলের সময় বিশেষ করে রাস্তা পারাপারের সময় জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সকলকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। সকলকে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে স্বল্প বিরতির আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব দিকে দৃষ্টি দিয়েছি এবং উন্নয়ন করে যাচ্ছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, বিএনপি সরকারের আমলে পুরো রেল যোগাযোগটাই বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। রেলটাকে সম্পূর্ণভাবে বিএনপি ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ঢাকায় মেট্রোরেল চালুর পর বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনও ডিজেলচালিত ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। এরপর দূরপাল্লায়ও বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল যেমন চালু করতে যাচ্ছি, সেইসাথে আমরা বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন, যা একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব, সেই বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও চালু করব। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তেলচালিত ট্রেনে দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় উন্নত দেশগুলো এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশেও তেলের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে একসময় হাহাকার ছিল। আজকে প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছি। যেসব মেগা প্রকল্প এবং যেসমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মিত হচ্ছে, তাতে আমাদের বিদ্যুতের কোনো অভাব থাকবে না। তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে রেল আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। মানুষ এখন রেলে বেশি চড়তে চায়। চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের আরও বেশি যাত্রীবাহী কোচ দরকার। কাজেই আরও বেশি কোচ আমাদের কিনতে হবে। কাজেই এভাবে আমরা রেলের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আলাদা মন্ত্রণালয় গড়ে তুলে সার্বিকভাবে রেলকে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়ার হয়। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব রেল সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে সেগুলো চালু করা হচ্ছে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশ যেন সংযুক্ত হয় সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলের ডিজিটাইজেশন, দেশের দক্ষিণবঙ্গে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে যমুনার উপর একটি রেলসেতু নির্মাণের উদোগসহ নানা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পঞ্চগড় প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। গত ১৬ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত একই প্রকল্পের আরেকটি সেতু- দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
জাপানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, শিমঝু করপোরেশন, জেএফএফ করপোরেশন ও আইএইচআই ইনফ্রা সিস্টেমস কোম্পানি লি: ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতীর সঙ্গে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতু তিনটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জুলাইতে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার কারণে নির্মাণ কাজ চার মাস বন্ধ থাকে। পরে সরকার নির্মাণ কাজের সময়সীমা ছয় মাস বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাত মাস আগেই সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ নতুন কাঁচপুর সেতু নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এটি পুরানোটির চেয়ে প্রস্থে ২ মিটার বেশি। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই পুরানো সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করেছে। ৯৩০ মিটার দীর্ঘ মেঘনা সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয় এক হাজার ৭৫০ কোটি এবং ১ হাজার ৪১০ মিটার গোমতী সেতুর নির্মাণ ব্যয় এক হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কাড্ডা-১, সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে বিমাইল সেতুরও উদ্বোধন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।