পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ও কৃষি অর্থনীতির অবস্থা সাম্প্রতিককালের নাজুক পর্যায়ে। এক সময়ে কৃষি নিয়ে গর্ব করা ‘খাদ্য উদ্ধৃত্ত’ দক্ষিণাঞ্চলে ধান এখন কৃষকের গলার কাটা হয়ে উঠেছে। বিগত আমন ও বর্তমান বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হলেও তার মূল্য নিয়ে কৃষকের ক্ষোভ আর হতাশার শেষ নেই। পাশাপাশি সারা দেশের সিংহভাগ খেসারি ও মুগডাল উৎপাদনকারী দক্ষিণাঞ্চল এবারো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ায় কৃষি অর্থনীতির ভীত আরো নরবরে হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টিতে খেসারির উৎপাদন ব্যাহত হবার পরে ফণির বর্ষণে মুগ ও মরিচের ক্ষতি হয়েছে যথেষ্ট। এবার মাঘের বর্ষণে তরমুজ ও গোলআলুসহ অনেক রবি ফসল বিনষ্ট হবার পরে অনাবৃষ্টিতে আউশের আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ সারা দেশে আবাদকৃত মোট আউশের প্রায় ২৫ ভাগই আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে দক্ষিণাঞ্চলে। গত ফেব্রুয়ারিতে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হবার পর থেকে মার্চ ও এপ্রিলে অনাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আবার গত ২ ও ৩ মে ফণির প্রভাবে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ১শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও তা মাঠে থাকা উঠতি বোরো, খেসারি ও মুগডাল ছাড়াও মরিচের জন্য যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হয়েছে। চিনা বাদামসহ আরো বেশ কিছু ফসলের ক্ষতিও যথেষ্ট।
গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর মুগডালের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর, ১ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর খেসারি ডালের প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ গোল আলু, মিষ্টি আলু, সয়াবিন ও চিনা বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি তেলবীজের জমিও এ বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে ক্ষতির কবলে পরে। এছাড়াও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসলের বিপুল পরিমাণ জমিতে পানি জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় তরমুজের ক্ষতিও ছিল ব্যাপক। আর এ মাসের শুরুতে ফণির প্রভাবে অতিবর্ষণেও আরেক দফা বিপর্যয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি।
তবে ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানির কারণে কৃষকগণ মাঠে থাকা উঠতি বোরো ধান সময়ের আগেই কাটতে শুরু করায় ফরিয়ারা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখন প্রতি মণ বোরো ধান ৫শ’ টাকার ওপরে নয়। অথচ বীজতলা তৈরি থেকে পাকা ধান কর্তন পর্যন্ত প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৬শ’ টাকারও বেশি। ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কটসহ অতি মজুরি বোরো ধানের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ফলে কৃষকের এখন মাথায় হাত। অপরদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন ব্যয়ের ২৮%-ই সেচ খরচ। যা সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক।
সমাপ্ত প্রায় রবি দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমিতে বেরো আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টন। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৬৫% বোরো ধান কাটা শেষ হলেও দক্ষিণাঞ্চল সে হার ৮৫%। অথচ ভাটির দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ হয়ে থাকে উত্তর ও মধ্যঞ্চলের দেড় থেকে দু’মাস পড়ে। সে নিরিখে ধানা কাটতেও যথেষ্ঠ বিলম্ব ঘটে থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। অন্যান্য এলাকার চেয়ে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান কাটায় ২০% এগিয়ে আছে। মূলত ঘূর্ণিঝড় ফণির বৃষ্টিপাতের কারণেই দক্ষিণাঞ্চলে এবার আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। যা কৃষকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
আর এ কারণে একসাথে বিপুল পরিমাণ ধান কৃষকের গোলা ও দক্ষিণাঞ্চলের ধানের হাটগুলোতে আসায় কারসাজি করে দর পতন ঘটিয়েছে ফরিয়া ও মিল মালিকরা। ফলে ধান এখন কৃষকের গলার কাটা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রের মতে, কৃষকের ঘরে এখনো বিগত মৌসুমের আমন ধান মজুদ রয়েছে। বিগত মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকার মধ্যে। ফলে একটু অবস্থাপন্ন কৃষক আমন ধান বিক্রি করেননি ভাল দাম পাবার আশায়। কিন্তু এরই মধ্যে আগাম বোরো ধান উঠতে থাকায় বেকায়দায় কৃষকগণ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে মিল মালিক ও তাদের ফরিয়ারা।
তবে ধানের ব্যাপক দর পতন হলেও দক্ষিণাঞ্চলে চালের দাম তুলনামূলকভাবে কমেনি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত একমাসে ধানের দর প্রতি মণ দেড়শ’ টাকা কমলেও চালের বাজারে কোনো সুবাতাস নেই। এখনো সর্ব নিম্নমানের চালের মণ ১ হাজার টাকার ওপরে। নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ‘বিআর-২৮’ বা আঠাশ বালাম চালের কেজি ৩৫ টাকা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে ধান ও চালের দরে এ বিস্তর ফারাকও মিল মালিক ও ফরিয়াদেরই কারসাজি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক, সাথে ভোক্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।