Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাওনা মজুরি চাই

কাল থেকে ৬ ঘণ্টা অবরোধ আশ্বাসে পাটকল শ্রমিকদের বিশ্বাস নেই

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতে পেট ভরে না। ক্ষুধার জ্বালায় ঘরে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে না খেয়ে চোখের পানি ফেলছে। যা একজন বাবা হয়ে বসে বসে দেখা যায় না। তাই কোন প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। দিনরাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করেছি। আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাইছি না। শুধু আমাদের কষ্টের পাওনা টাকা চাই।
রোজা রেখে তীব্র রোদে ক্লান্ত ও কান্নাজড়িত কন্ঠে বয়স্ক পাটকল শ্রমিক আলী হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে ফিরে যাবে না। তাতে যতদিন আন্দোলন করার প্রয়োজন হয় ততদিন করবেন। গত শনিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন শ্রমিকদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি শ্রমিকদের বলেন, সরকার দু’একদিনের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করবে এবং অন্যান্য দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া দেয়নি শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক খলিলুর রহমান জানান, ক্রিসেন্ট জুটমিল সিবিএ কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকল শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বুধবার থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া তার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকালে ৩ ঘণ্টা করে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বকেয়া মজুরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে উৎপাদন এখনও বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। বিভিন্ন নাগরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও শ্রমিকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনে নেমেছে।
এদিকে পবিত্র রমজান ও প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে শ্রমিকরা রাস্তায় কেন ? সারা বিশ্বে যেখানে পাটের চাহিদা বাড়ছে সেখানে দেশে পাটকল বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না কেন ? সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং তাদের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বেতন না পেয়ে পাটকল শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পাটকল শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘট চললেও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা উত্তরণে কোনো ঘোষণা নেই। অবিলম্বে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়াসহ পাটশিল্প রক্ষার দাবি জানান তিনি। এ সময় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আজিজুল হাসান দুলু, শফিকুল আলম তুহিন, কে এম হুমায়ুন কবির প্রমুখ। মানববন্ধনে মহানগর বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সোমবারও শ্রমিকরা ৩ ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে। পাটকল শ্রমিকরা জানান, সোমবার পাটকল শ্রমিকরা প্রথমে নিজ নিজ মিল গেটে সমবেত হন। এরপর ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর ও স্টার জুটমিল শ্রমিকরা মিছিল সহকারে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে গিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, বিআইডিসি রোড ও নতুন রাস্তা মোড় থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা মহাসড়কের ওপর আসরের নামাজ আদায় এবং পরে একই স্থানে বসে ইফতার করেন ও মাগরিব নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তারা চলে যান। এছাড়া আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিল শ্রমিকরা রোববার আটরা শিল্প এলাকায় এবং জেজেআই ও কার্পেটিং জুটমিল শ্রমিকরা রাজঘাট এলাকায় একই কর্মসূচি পালন করেন।
অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি সরকারি পাটকল। প্রতিদিন গড়ে একশো মেট্রিক টন করে ১২শ’ টন পণ্য উৎপাদনে ক্ষতি হওয়ায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোকসানে পড়ছে পাটকলগুলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও পাট মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে হাহাকার চলছে দাবি শ্রমিক নেতাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ