পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে বাড়ি-স্কুল-মাদরাসা বিধ্বস্থসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুঠিয়ায় ঝড়ের সময় দেয়ালের ইট ধসে মাথায় পড়লে নিহত হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা, বড়াইগ্রামে গাছচাপায় আহত হন চার ব্যবসায়ী। গতকালের এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আমচাষিরা। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন :
বড়াইগ্রাম (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানায়, পৌরসভাসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি ও ১২ টি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া কয়েকশ হেক্টর জমির উঠতি ধান, ভুট্টা, কলাক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ঝড়ে কমপক্ষে ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার ইফতারের আগ মূহুর্তে আকস্মিক ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গাছের নীচে চাপা পড়ে চার ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
ঝড়ে বড়াইগ্রাম পৌরসভার বড়াইগ্রাম উত্তরপাড়া, মৌখাড়াসহ কয়েকটি এলাকার কমপক্ষে ত্রিশটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এছাড়া উপজেলার বড়াইগ্রাম ও মাঝগাঁও কয়েকটি গ্রামের কমপক্ষে আরো বিশটি কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি এবং ভবানীপুর হিফজুল কোরআন শিশু সদন ও হাফেজিয়া মাদরাসাসহ ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ে প্রায় ৫শ হেক্টর জমির পাকা ইরি ধান, উঠতি কলা ও ভুট্টা নষ্ট হয়েছে। এদিকে, শুক্রবার উপজেলার সবচেয়ে বড় ব্যবসার কেন্দ্র মৌখাড়া হাটে বহু পুরনো একটি কড়ই গাছ মূলসহ উপড়ে পড়লে ১২টি দোকান বিধ্বস্থ হয়। এসময় এসব দোকানে থাকা চার ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লক্ষীকোল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ হাসান মাহমুদ জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মৌখাড়া, লক্ষীকোল ও জোনাইল বাজারসহ কবলিত এলাকায় প্রায় ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। এছাড়া ১৫-২০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে অতিরিক্ত জনবলসহ সারাদিন কাজ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
পুঠিয়া (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা জানায়, পুঠিয়া উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার বিকাল ৫টার সময় পুঠিয়া উপজেলার প্রায় সবকয়টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যায় এই কালবৈশাখি ঝড়। এতে পুঠিয়া উপজেলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে টাওয়ারটি ভেঙে পড়ে। ঝড়ের পর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ অনেক এলাকায় বন্ধ রয়েছে। তবে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি এলকায় প্রায় ১০ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে এলাকার আম চাষিদের মাথায় হাত দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। কালবৈশাখীর তান্ডবে বাগানের প্রায় ৭০ ভাগ আম ঝড়ে পড়েছে। পুঠিয়া কৃষ্ণপুরের আম ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, তার ৭টি বাগান কেনা আছে, গতকালের ঝড়ে বাগানের প্রায় সবগুলো আম ঝড়ে পরেছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি। এছাড়াও উঠতি ফসলে মধ্যে কলা চাষিদের ক্ষতি হয়েছে বেশি বলে এলাকার কৃষকেরা জানিয়েছেন। উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিন, সীমানা প্রাচির ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া, ঝড়ে দেওয়ালের ইট ধসে মারা গেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলহাজ্ব আব্দুস সোবহান মন্ড (৮৫)। গত শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৫টার সময় এ মর্মাান্তিক দুর্ঘনাটি ঘটে। মহরহু আব্দুস সোবহান মন্ডল বানেশ্বর গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে। মরহুম আব্দুস সোবহান মন্ডল ঝড়ের সময় তিনি তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বানেশ্বর ধান হাটায় মুড়ির মিলে অবস্থান করছিলেন। সে সময় মিলের দেওয়ালের একটি ইট ধসে আব্দুস সোবহান মন্ডলের মাথায় পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। সে সময় তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত আব্দুস সোবহান মন্ডল বানেশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
আদমদীঘি (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পৌর এলাকার ওপর পোঁওতা, নামা পোঁওতা, বশিপুর, কলস, তারাপুর কাজীপুর এবং আদমদীঘি উপজেলার সান্দিড়া, কদমা, করজবাড়ী, আমপুরা মন্ডফপুরাসহ ছাতিয়ানগ্রাম, নশরতপুর, চাপপুর কুন্দুগ্রাম ইউনিয়নের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টিও হয়। প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী এই কালবৈশাখীর তান্ডবে বহু ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়েছে আম, জাম, লিচুও কাঠালসহ পাকা আধাপাকা ধান। এছাড়া ও বিদ্যুৎ এর তারের ওপর গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরে। ফলে কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধছিল।
পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রংপুরের পীরগাছায় শুক্রবার ভোর রাতে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের পর রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এরমধ্যে শুক্রবার রাতে ও গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও ২০ হাজার গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎহীন রয়েছে। ঝড়ের পর দীর্ঘ সময় বিদুৎ না থাকায় রমজান মাসে গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ঝড়ে ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। ২০টি হেলে পড়ে এবং ৩০/৪০ স্থানে ক্যাবল ছিড়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় বেশকিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে গেছে।।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পীরগাছায় মোট ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের রাত থেকে এসব গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। ঝড়ের পরে সমিতির কর্মীবাহিনী রাত-দিন কাজ করে শুক্রবার রাত ও শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৪০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।