পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ফুঁসে উঠছেন কৃষকরা। বাজারে চালের দাম বেশি অথচ ধানের দাম একেবারেই কম। ধান চাষ করে প্রতিবিঘায় চাষিদের ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আগের মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন; এখন করেন প্রতিবাদী হচ্ছেন। পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন; রাস্তায় ধান ছিঁটিয়ে প্রতিবাদ করছেন।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ১২ মে এবং কালিহাতি উপজেলায় ১৩ মে কৃষক পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাদের এই প্রতিবাদ সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে যেন আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। সবখানেই প্রতিবাদ হচ্ছে। ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে গত ১৩ মে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজপথে ধান বিছিয়ে প্রতিবাদ করেছেন কয়েকশ ছাত্র। ঢাকসুর ভিপি সেই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
৯ দফা দাবিতে সারা দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। খুলনা, যশোর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকরা প্রতিদিন রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। পবিত্র রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের মতোই সারাদেশের কৃষকরা যেন উৎপাদিত ধানের ন্যায়্য মূল্যের দাবিতে তাঁতিয়ে উঠছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বিক্ষুব্ধ। কেউ হতাশা প্রকাশ করছেন; কেউ বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ করছেন। রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে আন্দোলন করছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন অঞ্চলের ধানচাষীদের সঙ্গে কথা বলে ধানের চাষের যে খরচের চিত্র পাওয়া যায় তা কমবেশি এমন। চার কাঠা (৬ শতক) জমিতে চাষাবাদে বীজ ১২৫ টাকা + রোপন ২০০ টাকা + নিড়ানো ১০০ টাকা + পানি ৩৫০ টাকা + সার ও কীটনাশক ৩৫০ টাকা + ধান কাটা ৫০০ টাকা= মোট খরচ ১৬২৫ টাকা। জমিতে ধানের জীবন চক্রে খরচের হিসেব মোটা দাগে এমনই। এই জমিতে সর্বোচ্চ ফলন জমি ও অঞ্চল ভেদে দুই থেকে তিন মণ। এ বছর ক্ষেতমজুরের মজুরি বেশি। এলাকা ভেদে ধানের বর্তমান বাজার দর ৫শ টাকা থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। ধানের সর্বোচ্চ ফলনে কৃষকের হাতে আসে ১৫শ টাকা। ফলে ৪ কাঠা জমিতে ধান চাষে লোকসান একশ ১৫ টাকা। এলাকা ভেদে এই লোকসান আরো বেশি। দিনাজপুরের অন্যতম বৃহৎ ধানের বাজার সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ ধানের হাটে ধান বিক্রি করতে আসা নশিপুর গ্রামের কৃষক হাফিজউদ্দীন জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা। আর একবিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৩৪ মন। এক বিঘা জমির ধান বাজারে বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার টাকা। এতে প্রতিবিঘায় লোকসান ২ হাজার টাকা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল কবির বলেন, এক কাঠা (এই অঞ্চলে ১০ শতাংশে এক কাঠার হিসাব) জমিতে ধান চাষে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে বীজে যাচ্ছে ৩০০ টাকা, চাষ ৩০০ টাকা, বপন ৫০০ টাকা, সার ৫০০ টাকা, কীটনাশক ২০০ টাকা, সেচ ৫০০ টাকা ও ধান কাটায় ১ হাজার ২০০ টাকা। ফলে কাঠাপ্রতি কৃষকের ক্ষতি ৬২৫ টাকা। জানতে চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরই কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে ধান কেনার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি নজরদারি করতে হবে। মিল মালিকদের কাছ থেকে না কিনে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। আর ধান মজুত রাখার জন্য জেলা-উপজেলাগুলোয় শস্য গুদাম করা যেতে পারে, পরবর্তী সময়ে কৃষকরা যেন সঠিক দামে ওই ধান বিক্রি করতে পারেন। তার মতে ধানের দামে কৃষকরা বঞ্ছিত হলে তারা পাটকল শ্রমিকদের মতোই ফুঁসে উঠতে পারে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর সারা দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এই জমিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৯৬ লাখ মেট্রিক টন।
১৩ মে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষোভে নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়েছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার। একই উপজেলার আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক ধানের দামের চেয়ে ক্ষেতমজুরের মজুরি বেশি হওয়ায় তার ক্ষেত্রের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। তার একদিন আগে পাকা ধান ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেন বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কাশিল গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম খান । তিনি বলেন, বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ টাকা। অথচ এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ এক হাজার টাকার ওপরে। এছাড়া বর্তমানে একজন ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। একজন শ্রমিক এক দিনে এক থেকে দেড় মণ ধান কাটতে পারে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকের দুশ্চিন্তা
বরেন্দ্র অঞ্চলে মাঠভরা বোরোর ধানের পোকা ক্ষেত। প্রচন্ড খরতাপ গায়ে মেখে চলছে ধান কাটাই মাড়াই। বিরাজ করছে ধান কাটা উৎসবের আমেজ। ঝড় বৃষ্টি আসার আগেই সবাই তাদের ঘাম ঝরানো ফসল ঘরে নিতে চান। যদিও গত সোমবার সন্ধ্যায় শেষ দফার কালবৈশাখী ঝড়ে ধান ক্ষেতেও আঘাত হেনেছে। তবে বৃষ্টি এনেছে খানিকটা স্বস্তি। গরম খানিকটা নরম হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ আটলাখ হেক্টরের কিছু বেশী জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও বাস্তবে হয়েছে বেশী। আর ফলন ধরা হয়েছে তেত্রিশ লাখ টনের বেশী চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ হওয়া আর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। যেটুকু কাটা হয়েছে তাতে ফলন মিলছে বিঘা প্রতি আঠারো থেকে কুড়ি মন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায় এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী, নওগা, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জে) সাড়ে তিন লাখ হেক্টরের বেশী জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। মাঠের ফসল দেখে বলা যায় সব ঠিকঠাক থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের যেখানে যাওয়া যাবে সেখানেই নজরে পড়বে ধান কাটা ক্ষেত থেকে ফসল গেরস্তের খৈলানে নিয়ে যাবার দৃশ্য। কোথাও মাঠের মধ্যে খৈলান বানিয়ে চলছে ধান মাড়াই। চারিদিকে এত ধান তবু আনন্দ নেই আবাদকারী প্রান্তিক চাষীদের চোখে মুখে। কারন হিসাবে জানাযায় ধানের বাম্পার ফলন তাদের জন্য ক্রমাগত বাম্পার লোকশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত আমন মওসুমের নায্য দাম মেলেনি। এবার বোরোর বাম্পার ফলনেও শুরুতে যে দাম তাতে আবাদকারীর চেহারায় আনন্দের বদলে দুশ্চিন্তা ভর করছে। না জানি বোরোতে কত লোকসান গুনতে হয়।
সবাই দ্রুত ধান কেটে ঘরে নিতে চায় বলে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরী। আগে ধান কাটার বদলে ধান দিয়ে মজুরী পরিশোধ করা হতো। ধানের দাম কম বলে শ্রমিকরা ধানের চেয়ে পরিশ্রম হিসাবে টাকা চাইছে। আর নগদ টাকার যোগান দিতে কৃষক ফড়িয়া দালালদের হাতে কমদামে ঘাম ঝরানো ফসল তুলে দিচ্ছে। কৃষকরা জানান একজন কৃষকের ধানকাটা মজুরী পাবে পাঁচ হতে ছয়শো টাকা। রয়েছে আনুষঙ্গিক খরচ অথচ ধান বেচতে গিয়ে সে দামও মিলছেনা। সরকারী দাম মনপ্রতি এক হাজার চল্লিশ টাকা হলেও সে দামে ধান বেচার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনা উৎপাদক। সরকারী গুদামে ধান চাল বেচা প্রান্তিক কৃষকের কাছে দু:স্বপ্ন।
এখন নগদ টাকা নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরছে ফড়িয়া দালালরা। স্বপ্নের সোনালী ধান কৃষকের গোলায় যাবার আগে মাঠে থেকে চলে যাচ্ছে মজুদদার আর মিলারদের গোডাউনে। এখন মাঠে সাড়ে পাঁচশো হতে ছয়শো আর ধানের হাটে সাড়ে ছয়শো টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। রয়েছে হাটে নিয়ে যাওয়া খরচ। সেখানে সিন্ডিকেট করে ধানের মান নিয়ে নানা কথা বলে কমদামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরকারী খাদ্য গুদামও সিন্ডিকেটের দখলে। আবাদকারীরা জানান, বোরো সেচ নির্ভর ফসল। তবে শুরুতে ভাল রকমের বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ কিছুটা কমলেও অন্যান্য খরচের কারনে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তারপর কাটাই ¤্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি ও দাম কম মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত।
এ অঞ্চলের জোতদারদের বেশীর ভাগ এখন নিজেরা আবাদ করেনা। তারা বর্গা চাষীদের কাছে জমির রকম ভেদে বিঘাপ্রতি ছয় সাত হাজার টাকায় লীজ দেয়। এরপর জমি চাষ থেকে শুরু কওে জমিচাষ সেচ বীজ কীটনাশক আর শ্রমিকের মজুরী ফসল কাটাই মাড়াই করতে আরো ছয় সাত হাজার খরচ হয়ে যায়। ফলন ভাল হলে বিঘাপ্রতি হয় আঠারো থেকে কুড়ি মন। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে মনপ্রতি সাড়ে সাতশো টাকা। আর এখন দাম মিলছেনা ছয় থেকে সাড়ে ছয়শো টাকার বেশী। মনপ্রতি লোকসান হচ্ছে এক থেকে দেড়শো টাকা। নিজের পরিশ্রমের মজুরী ধরলে লোকসানের পরিমান আরো বেশী।
যশোরে ধানের দামে কৃষকের অসন্তোষ
যশোরে ধানের মূল্য না পেয়ে ঘরে ঘরে কৃষকরা হাহাকার করছেন। বুক চাপড়িয়ে তারা কাঁদছেন। তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে কৃষক পরিবারের মাঝে। তারা জোটবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারেন এমন আশঙ্কা ঘণীভুত হচ্ছে। মাঠচিত্র হচ্ছে, কৃষকরা ভালো নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার জের টানতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন আবার ভোক্তারাও চালের মূল্য কম পাচ্ছেন না। মাঝখানে লাভের অংশ যাচ্ছে কাদের পেটে-এসব বিষয় যাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তারাই উৎকোচের বিনিময়ে মজুদদার, পাইকারী ব্যবসায়ী ও মিলারদের ফ্রিস্টাইলে কাজকর্ম করার সুযোগ দেয়। খাদ্য অধিদপ্তর এখনো ধান ক্রয় শুরু করেনি। তারা মিলারদের সুবিধার্থে চাল ক্রয়ে বরাবরই আগ্রহ দেখিয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।
ধানের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধরা ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, টাঙ্গাইলে ধানে আগুন ধরিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাড়াডোব মাঠে কৃষি বিভাগের মাঠ দিবসে স্থানীয় এমপি শহিদুজ্জামান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে কৃষকরা ‘আমরা বাঁচতে পারছি না, ধানের মূল্য পাচ্ছি না’ বলে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কৃষকদের কথা উৎপাদন খরচ উঠছে না-এটি দেখারও কেউ নেই।
গতকাল যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুস্টিয়া ও মেহেরপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা ধান প্রতমণ বিক্রি হয়েছে গড়ে মাত্র ৫শ’ টাকা। অথচ এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের ন্যুনতম খরচ হয় ৮শ’টাকা। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬শ’টাকা থেকে ৭শ’টাকা। শুধু এই অঞ্চল নয়, দেশের প্রায় সবখানেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। ধান নিয়ে এতটা বিপদ স্মরণকালে পড়েননি কৃষকরা। সরকার সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা দিলেও খাদ্য অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ে ধান ক্রয় এখনো পুরোদমে শুরু করেনি। সরকারী সংগ্রহ মূল্য প্রতিমণ ১হাজার ৪০টাকা। ওই মূল্য পেলেও এতটা হাহাকার লাগতো না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) কৃষিবিদ ড. আব্দুল মুঈদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে ৪৯লাখ ৩৩ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। চাল উৎপাদন হবে ১কোটি ৯৭লাখ ৩৫হাজার ৬শ’মেট্রিক টন। ধানের মূল্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা প্রোডাকশন দেখি, বাজারের বিষয়টি আমাদের নয়। তবুও আমার জানা মতে, পলিসি লেবেলে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, সবখান থেকেই কৃষকদের ধানের মূল্যের ব্যাপারে একই ধরণের রিপোর্ট পাচ্ছি। কৃষকরা ক্ষুব্ধ। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ড, আখতারুজ্জামান জানান, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে দারুণ অসন্তোষ। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, জরুরিভাবে কৃষকদের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দরকার। তার মতে, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবেই কৃষক শুধু ধান নয়, সব কৃষিপণ্যের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেহেরপুরের গাংনীর আরশাদ আলী ও যশোরের শার্শা উপজেলা ডিহি ইউনিয়নের মোঃ জসিম উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানালেন, তারা গত রোপা আমন ধান ও পাটের মূল্য না পেয়ে এবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন, কিন্থু ধানের মূল্য না পাওয়ায় হতাশ।
বাঁচাতে চায় দিনাজপুরের কৃষক
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বোরো’র বাম্পার ফলন ফলানোর কারিগর কৃষকেরা হায় হায় করছে। মৌসুমের শুরুতে বোরো ধানের দাম স্মরণাতীতকালের মত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দিনাজপুর অঞ্চলে এক মন ধানের দাম আর এক কেজি গরুর মাংশের দাম সমান সমান। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনালী আশ পাট বা আখের মতে একদিন ধানও হারিয়ে যাবে বাংলার কৃষি থেকে। ধানের উৎপাদন ধরে রাখতে হলে এবং কৃষক বাঁচাতে হলে ধানের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করতে হবে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মন দরে। বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষকের সাথে কথা বললে তারা জানালো এক বিঘা জমিতে সেচ, সার, কিটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি সর্বোচ্চ যত্ম নেয়ার মাধ্যমে বোরো ধান পাওয়া গেছে ৩৬ মন। দাম পাওয়া যাচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা। যা কিনা এক বিঘা জমি আবাদে খরচ হয়েছে। এক বিঘা জমির দাম ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। ব্যাংকে ফেলে রাখলেও পাওয়া যায় কম পক্ষে মাসে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বোরো আবাদকালীন তিন মাসে ব্যাংকে রাখলে এমনিতেই ১৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তাহলে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়ে কি লাভ হচ্ছে।
বংশীয়ভাবে কৃষক হলেও হালে ধান চাল ব্যবসার সাথে জড়িত এমন এক ব্যাক্তি নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানালো যে, সরকার বা রাজনৈতিক সচ্ছতা না থাকলে কৃষক বাঁচবে না।
লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে বোরো ধান কাটা-মারার এই ভরা মৌসুমে ধানের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এসময় ধান বাজারে বিক্রি করে থাকে প্রান্তিক চাষিরা- জোরদারেরা নয়। কৃষকেরা এখন ধান কাটা-মারার পর তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ থেকে স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় চোপড়ের ব্যবস্থা করে। এসময়ে চালও কিনে খেতে হয় না কৃষককে। কিন্তু আর দু’মাস পর আমন মৌসুম শুরু হওয়ার পর-পরই কৃষকের খরচ বেড়ে যায়। তখন বাজার থেকে চাল কিনে ভাত খেতে হয়। তখন কৃষকের ঘরে ধানও মজুদ থাকে না। অথচ তখন ধানের পাশাপাশি চালের দামও বেড়ে যায় অসহনীয়ভাবে। ফলে কৃষক পড়ে যাতাকলে। নিষ্পেষিত হতে থাকে দেশের কাছে। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে। এ জন্য দরকার কেবল রাজনৈতিক স্বদ্বিচ্ছা।
বগুড়ায় ধানের দামে হতাশ চাষী
বগুড়ায় হাট বাজারে ধানের নিম্নদরের কারনে চরম হতাশায় ভুগছে চাষীরা। কমকে কমতে ধানের দাম এখন ৪শ’ টাকায় নেমে এসেছে । এবার বোরো ধান চাষের সব ধরনের খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বাধিক বেড়েছে মজুরের দাম । এখন দৈনিক মজুরি কোথাও কোথাও ৭শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বগুড়ায় ধান চালের আড়তদার, মিল ও চাতাল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার ধানের বাজার যেভাবে নিচে নেমেছে । তাতে ভবিষ্যতে চাষীরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যা কৃষির জন্য অশুভ সংকেত হয়ে দেখা দেবে ।
এদিকে বগুড়ায় ধান ও চালের বাজার স্থিতিশীল করতে বগুড়ায় ৯১ হাজার মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যে সরকারিভাবে ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার চাল কেনা হচ্ছে ৩৬ টাকা কেজি এবং ধান ২৬ টাকা কেজি আর আতপ চাল কেনা হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। বগুড়ার খাদ্য বিভাগের সাথে ২ হাজার ১শ’৫০ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি করেছে। জেলায় ২৩টি স্থানীয় খাদ্য গুদামে (এলএসডি) ও ১টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণগার (সিএসডি) এর মোট ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। চুক্তি অনযায়ি এবছর চাল সংগ্রহ করা হবে ৭৮ হাজার ৩শ’৫৪ মেট্রিক টন। আর ধান সংগ্রহ করা হবে ৫ হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন। অন্যদিকে আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ৭ হাজার ৪৬ টন।
সরকারি নিয়ম মেনে এই ধান ক্রয় করা হবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এবং চাল কেনা হবে চুক্তিবদ্ধ মিলারের কাছ থেকে। বগুড়া জেলায় এবার ধান চাল কেনা হবে আগষ্ট পর্যন্ত।
ফলন ভাল দাম নেই
সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌর সভার কৃষকদের বছরের একমাত্র খোরাকী হচ্ছে বোরো ফসল। সকল ঝড়ঝঞ্জাট পেরিয়ে বোরো ধান গোলায় তুলতে পারলেও গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতো দাড়িয়েছে ধানের কম মূল্য। এবার জেলায় ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমি হচ্ছে হাওর এলাকায় এবং ৫২ হাজার হেক্টর হচ্ছে স্কিমের জমি (অর্থাৎ উচু জমি)।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার হাওর এলাকায় ১লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯২২ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও স্কিমের ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩০ ভাগ জমির ধান এখন কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার মসলঘাট গ্রামের কৃষক মাসুক মিয়া জানান, ১২ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। ফসলন যাই হোক না কেন। গ্রামাঞ্চলে প্রতিমণ ধানের মূল্য হচ্ছে, সাড়ের ৫ শত টাকা থেকে ৬ শত টাকা। তিনি জানান, এসব জমিতে যে পরিমান ধানা উৎপাদন হয়েছে সব ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ পাওয়া যচ্ছে না। একই বক্তব্য জেলার তাহিরপুর উপজেলার ঠাকুরহাটি গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমানের। সুনামগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা জানান, এবার জেলায় ৬ হাজার ৫ শত ৮ মেট্্িরক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে কেনা হবে। সরকারিভাবে ধান কেনার জন্য কৃষক বাচাই চলছে। চলতি সপ্তারের শেষের দিকে ধান কেনা শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।