পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধানের উৎপাদন খরচ উঠছে না। হাট-বাজারে চলছে বিশৃঙ্খলা। প্রতিক‚ল আবহাওয়া ও নানা সমস্যা সঙ্কটে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কৃষক ধান উৎপাদন করে অনবরত মার খাচ্ছে। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। এ অভিযোগ সাধারণ কৃষকের। এদের মধ্যে একজন আব্দুল মালেক শিকদার। বাড়ি তার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নে। ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বোরবার নিজের রোপণকৃত পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে দেন কৃষক মালেক শিকদার। তিনি জানান, দিন প্রতি একজন দিনমজুরকে দিতে হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। আর বর্তমান বাজারে ধানের ম‚ল্য ৫০০ টাকা মণ। এতে প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করে কৃষক একজন দিনমজুরকে মজুরি দিতে হচ্ছে।
এছাড়া রাজবাড়ির মধুখালীর রমজান আলী, সাতক্ষীরার কলারোয়ার ইউসুফ আলী সরদার ঝিনাইদহের বারোবাজারের সজীব হোসেন পলাশসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, আমরা সাধারণত এক ফসলের টাকা দিয়ে পরবর্তী আবাদ করি। পর পর কয়েকটি আবাদে উৎপাদন খরচ না ওঠায় ধারদেনায় জর্জরিত। ধানের বাজারে কোন তদারকি নেই। আমরা দারুণ মনোকষ্টে দিন কাটাচ্ছি। তার ওপর বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ফড়িয়া, পাইকার, মজুদদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের টানাহেঁচড়া চলছে। ধানের বাজারে এখন একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ মুনাফালোভীদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) কৃষিবিদ ড. আব্দুল মুঈদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ মেট্রিক টন হিসাবে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা। তার কথায় ফলন এবার বাম্পার হয়েছে। কৃষকরা ধানের দাম না পেয়ে বাম্পার ফলনেও খুশী হতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্ট শুধু উৎপাদন দেখে, বাজারের বিষয়টি আমাদের কিছুই করার নেই। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ধানের উপযুক্ত দাম যাতে কৃষকরা পান তার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, কৃষক ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় দিনে দিনে পিছিয়ে যাচ্ছেন, আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। সেজন্য সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। কৃষকরা ধানের মূল্য পাচ্ছেন কী পাচ্ছেন না তা তদারকি করা হয় না। কৃষক যখন মাঠ থেকে ধান কর্তন শুরু হয় তখনই তাদের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা দরকার।
সেচনির্ভর বোরো ধান আবাদে এবার তুলনামূলক উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। কৃষকরা জানান, বীজতলা তৈরী, জমি চাষ, রোপন, সার, পরিচর্যা, সেচ খরচ, ধান কাটা, মাড়াই ও বাজারে তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৮ মণ থেকে ২২ মণ পর্যন্ত। প্রতিমণ মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬০০ টাকা আর চিকন ধান গড়ে ৭০০ টাকা। অনেক জমির মালিক বা বিত্তশালী কৃষকদের কথা আলাদা। কিন্তু বর্গাচাষী, মাঝারি ও অল্পজমির মালিকদের জমির দাম ও নিজের পারিশ্রমিক খরচের সাথে যোগ করা হলে লোকসানের পাল্লা অনেক ভারি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, হেক্টরে হাইব্রিড জাতে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪ মেট্রিক টন চাল ও উফসী জাতে হেক্টরে ৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষকদের কথা বাম্পার ফলন হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি দাম না পাওয়া যায়।
ক্ষেতে আগুন দেয়া সেই কৃষকের ধান কিনবে স্বপ্ন
টাঙ্গাইলে ধানের দাম কম ও দিনমজুর না পাওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদকারী কৃষক আব্দুল মালেক সিকদারের ধান কিনবে সুপারশপ স্বপ্ন। রোববার অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজে প্রকাশিত ‘ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিলেন কৃষক’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ উদ্যোগ নিয়েছে স্বপ্ন।
স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম বলেন, কৃষকের খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তিনি আরও বলেন, আব্দুল মালেক সিকদারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা তার ১২৮ শতাংশ জমির ধান কিনে নেব। ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য মণ প্রতি ৫০০ টাকা হলেও আমরা ওই জমির ধান ৬৪০ টাকা থেকে ৬৬০ টাকা মণ হিসেবে কিনবো।
কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার বলেন, মণ প্রতি ধান কিনতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। ধান কাটতে মণ প্রতি দিনমজুরকে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। এরপরও ধান ঘরে তুলতে আরও খরচ। অন্যদিকে বেশি মজুরি হলেও কামলা পাওয়া যায় না। ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছি না। তাই এক দাগের ৫৬ শতাংশ ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরসহ ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ কিন্তু ধান পেকে গেলেও কৃষক দিনমজুরের অভাবে ঘরে তুলতে পারছে না। ফলে জমিতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখে তবে কয়েকদিন পরই অধিক মূল্য পাবে। তাপদাহসহ নানা কারণে কিছুটা শ্রমিক সঙ্কট থাকলেও তা তীব্র নয়। জেলায় গত বছরের তুলনায় এবার ব্যাপক পরিমাণ বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টরের ধানের প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে শ্রমিকদের অধিক মজুরি দিতে হয় এটা সত্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।