পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমেই চলেছে চামড়াশিল্পে। তৈরি পোশাক ও কৃষিজাত পণ্য রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি করলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রফতানির এ অন্যতম শিল্পটি। যেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সেখানে ১০ মাস শেষে প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যার জন্য ব্যাবসায়ীরা বিশ্বে চামড়াশিল্পের বাজারের খারাপ অবস্থাকে দায়ী করছেন।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রফতানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এ খাতের রফতানি আয় কমেছে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৯ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ৮৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৯১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। ১০ মাসের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, গোটা বিশ্বব্যাপী এখন চামড়াশিল্পের খারাপ সময় যাচ্ছে। চীন বাংলাদেশ থেকে ফিনিস লেদার আমদানি করে তা দিয়ে পণ্য তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র রফতানি করত। বর্তমানে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ট্রেড ওয়্যারের কারণে। এছাড়া হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর ও সাভারে যাওয়ার পর অবকাঠামোগত নানা জটিলতার কারণে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কম হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস চামড়া শিল্পের খরা আরও প্রকট হয়েছে। অর্থবছরের দশ মাস পার হলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির ধারা থেকে বের হতে পারেনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের এই খাত।
এদিকে ইপিবির তথ্যানুযায়ী, প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। এই দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল তিন হাজার ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের এই দশ মাসে আয় হয়েছিল তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। তবে এপ্রিলে ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার রফতানি হয়েছে যেখানে মার্চে ৩৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। এই মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল ৩০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এপ্রিলে নির্দিষ্ট লক্ষমাত্রার ১.৫২ শতাংশ অর্থাৎ এ মাসে আয় কমেছে পাঁচ কোটি ডলার। গত বছরের এপ্রিলে আয় হয়েছিল ২৯৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ বছর এপ্রিলে গত বছরের তুলনায় শতকরা ২.৬৯ শতাংশ রফতানি বেশি হলেও এ মাসের লক্ষমাত্রা ছাড়াতে পারেনি রফতানি আয়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতিবেদন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৮ শতাংশেরও বেশি হবে। আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় এসেছে দুই হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সমেয়ের তুলনায় রফতানি এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পোশাক খাতে রফতানি আয় ছিল দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ডলার।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বড় খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ৪৫ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় কৃষিপণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ খাতে আয় হয়েছে আট কোটি ১১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।