Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ড্রাইভারের আঁৎকে ওঠা জবানবন্দি

চলন্ত বাসে নার্সকে গণধর্ষণ হত্যাকারীরা কেউ ছাড় পাবে না : ডিআইজি

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূরুজ্জামান ওরফে নূরু নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে নূরু জানিয়েছে সে ছাড়াও তার খালাতো ভাই বোরহান ও বাসের হেলপার লালন মিয়া নাস তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে বাসের চালক নূরুজ্জামানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন। আদালত ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ করে হত্যাকারীরা এবং সহযোগিদের কেউ ছাড় পাবে না। গতকাল বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ বিভাগের আয়োজনে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অচিরেই এ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপস্ এন্ড ইন্টেলিজেন্ট) মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম। এর আগে তিনি দুপুরে ঘটনাস্থল (বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়া ) পরিদর্শন করেন ।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে নূরু জানিয়েছে, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় রাস্তার পাশে প্রথমে চালক নূরুজ্জামানের খালাতো ভাই বোরহান তানিয়াকে বাসের ভেতরে ধর্ষণ করে। পরে চালক নূরুজ্জামান এবং শেষে হেলপার লালন নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের সময় বাসের হেলপার লালন নার্স তানিয়ার ঠোঁটে কামড় দিলে তানিয়া তাকে সজোরে লাথি মেরে বাঁচার জন্য বাসের ভেতর ওঠে দাঁড়ান। এ সময় চালক নূরুজ্জামান হঠাৎ ব্রেক করে। এতে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে বাস থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান তানিয়া।
এ অবস্থায় হেলপার লালন তানিয়াকে ফেলে যাওয়ার জন্য বললে চালক তাতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় চালক বাস থামিয়ে দিলে রাস্তায় চলাচলকারী দুটি মোটরসাইকেল ও একটি অটো সেখানে আসে। তাদের জানানো হয়, মেয়েটি বাস থেকে পড়ে গেছে। পথচারীদের সহযোগিতায় তানিয়াকে আবারও বাসের ভেতর তোলা হয়। তখনো জীবিত ছিলেন তানিয়া।
চালক, হেলপার ও বোরহান মিলে তানিয়াকে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজারে সততা ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যায়। ফার্মেসির মালিক তানিয়ার শরীরের রক্ত মুছে দিয়ে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ভাগলপুর জহুরুর ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ঘটনাটি পিরিজপুরে স্বর্ণলতা বাসের কাউন্টার মাস্টার আলামিনকে জানানো হয়। আলামিন, বোরহান ও অন্য আরেক ব্যক্তি মেয়েটিকে কটিয়াদী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আবারও বাসে উঠায়। এ সময় হেলপার লালন পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পালিয়ে যায়।
চালক জানায়, মেয়েটিকে ধর্ষণের সময় তার মাথা পেছনের দিকে এবং পা বাসের সামনের দিকে ছিল। চালকের খালোতো ভাই ধর্ষণের সময় চালক নূরুজ্জামান পেছনে এবং হেলপার লালন সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত ১১টার দিকে জানতে পারি মেয়েটি মারা গেছে।
দীর্ঘ জবানবন্দিতে মামলার প্রধান আসামি নূরুজ্জামান জানায়, ৬ মে ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে তানিয়া তার বাসে ওঠে। রাত ৮টার সময় বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখানে ২০-২২ জন যাত্রী নেমে যায়। আমি বাসের পেছনের সিটে বসে সিগারেট খেতে থাকি। লালন তখন মেয়েটিকে পেছনের সিট থেকে সামনের সিটে এসে বসার জন্য বলে। মেয়েটি তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে সামনের সিটে যাওয়ার সময় বোরহান তাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়।
মেয়েটি তখন বোরহানকে গালি দিলে বোরহান মেয়েটিকে জাপটে ধরে বাসের মাঝখানে যাত্রীদের চলাচলের পথে ফেলে দিলে মেয়েটি কান্নাকাটি শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ না করতে চাই পা ধরে কান্না শুরু করে। কিন্তু বোরহান আকুতি-মিনতি না মেনে মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে থাকে। এ সময় হেলপার লালন বাস চালাচ্ছিল। সে গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় একটি কলা বাগানের কাছে বাস থামিয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, রাজধানী ইবনে সিনা হাসপাতালে কর্মরত নার্স তানিয়া গত সোমবার বিকালে নিজ বাড়িতে আসার জন্য স্বর্ণলতা পরিবহণের একটি বাস যোগে রওনা হন। বাসটি কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে পৌঁছার সময় বাসের চালক ও সহকারীসহ অন্যান্যরা ধর্ষণ করে।



 

Show all comments
  • Kamrul Asif ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    Justice delay Justice denied
    Total Reply(0) Reply
  • Noman Tanvir ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    বিএনপি জামাত এর বিচার ঠিকি করতে পারে,,, খালি এই মানুষ রুপি জানোয়ার গুলার বিচার করতেপারেনা।।
    Total Reply(0) Reply
  • Piash Haq ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    প্রতিটি অপরাধের বিচার হবে। যতো দিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Razia Sultna ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৭ এএম says : 0
    ৮ বছরে ৪ হাজার ধর্ষণের বিচার হয়েছে মাত্র ৫ টির। যে দেশে বিচার নাই সে দেশে ধর্ষণ প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকবে। এসব আন্দোলনে কোন কাজ হচ্ছে বলে মনে হয়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahsan Faruk ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৮ এএম says : 0
    বুঝিনা ধর্ষন কারিদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিলে সরকারের কি সমষ্যা?
    Total Reply(0) Reply
  • সরল পথে চলো ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৮ এএম says : 0
    তারা একজন নারীকে যেভাবে অসহায় পেয়ে বাঘ বা সিংহের মতে খুবলে খুবলে খেয়েছে তেমনি তাদের শাস্তি দেয়া হোক বাঘ বা সিংহের খাঁচায়।খুবলে খাওয়ার মজা মরে টের পাবে তখন।একটি নারী, পুরুষের মতোনই একজন মানুষ তাদের দেখলেই যারা খাওয়ার পণ্য মনে করে চোখ বুলায় ও ধর্ষন করে তাদের সবাইকে মেয়ে বানিয়ে তাদের মনস্ক পুরুষের মাঝে ছেড়ে দিলে তারা বুঝবে তাদের মাংস ছিড়ে মারলে কত চরম আঘাত লাগে। তাই নারীজাত ভোগ্য পণ্য নয় তারা মায়ের জাত অতি মূল্যবান রত্ন। তাদের গায়ের আচর দিলে বা তাদের অপমানিত করে খুন করলে সকল মা'কেই অমানিত করা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Rahman Afrouz ১৩ মে, ২০১৯, ২:২৯ এএম says : 0
    অসুস্থ মানুষের সেবা করা ছিল সেবিকা শাহিনুর আক্তারে কাজ। এ সমাজের নরপিশাচরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ