Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের গরমে পাবলিক শরমে...

বগুড়ায় স্পট সামারি

বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বগুড়ায় ইদানিং এক শ্রেনীর পুলিশ সদস্যের আভিজাত্যবোধ (পাবলিকের ভাষায় গরম ) চরম আকার ধারণ করেছে কনস্টেবল থেকে উর্দ্ধতন পর্যায়ে । আর এতে বিভিন্নভাবে নাজেহাল অপমান ও অপদস্ত হচ্ছে সর্বসাধারন। শুধু সাধারণ মানুষই নয় সাংবাদিক থেকে শুরু করে সম্মানীয় শ্রেনী পেশার মানুষেরাও প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন পুলিশের হাতে।
বগুড়ার গাবতলী থানায় ডিউটিরত আরিফুল নামের একজন সেন্ট্রির হাতে নাজেহাল হওয়ার বর্ণনা দিয়ে ৭১ টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি শাজাহান আলী জানান , তিনি গত ৯ মে গাবতলী থানার ওসির সাথে দেখা করতে যান। থানা ভবনের বারান্দায় ওঠার পর তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসলে তিনি ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে একটু নিরিবিলি অংশে গেলে সেন্ট্রি আরিফুল হৈ চৈ করতে করতে তাকে বলেন ‘ওই ওখানে হাজত আছে সরে যান জলদি’, সেন্ট্রির কথায় সেখান থেকে সরে ফাঁকা জায়গায় কথা বলতে থাকেন। এবার সেন্ট্রি আবার ছুটে এসে বলে, এই আপনি থানায় কেন কার কাছে এসেছেন?
জবাবে ‘ওসির কাছে’ বললে সেন্ট্রি আরিফুল উচ্চস্বরে বলে ওসির কাছে আসলে উনার কাছে যান, এখানে কেন ? এটুকু বলেই খান্ত হয়নি আরিফুল নিজের পুলিশের পোশাক দেখিয়ে উত্তেজিত হয়ে এটার গরম জানিস ? ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব শাজাহান নিজের পরিচয় দিয়ে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করলেও আরিফুল তাকে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হয়। হৈচৈ এর শব্দে অন্যরা এগিয়ে এসে শাজাহানকে রক্ষা করেন। কর্মকর্তারা অবশ্য এজন্য শাজাহানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। দায়ী কনস্টেবল আরিফুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
১০ মে একটি নারীঘটিত বিষয়ে ছিনতাই ব্লাকমেইলের শিকার ২ যুবকের অভিযোগে বগুড়া সদরের কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হরিদাস মন্ডল দায়ি একজন আসামিকে ধরে ছেড়ে দিয়েছেন মর্মে খবর পেয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র সাংবাদিক ফোন করে ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা বা আটক হলে তার নাম কি বা তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে চরম দুর্ব্যবহার করে ওই সাংবাদিককে হরিদাস মন্ডল বলেন , আমরা কাকে ধরি বা ছাড়ি সেটা আমাদের ব্যাপার। যাকে ধরি তার নাম মনে রাখা আমাদের কাজ নয় বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সম্প্রতি বগুড়ার নামুজা রোডের একটি নিজেদের বাউন্ডারি ঘেরা আমবাগানে আম সংগ্রহের জন্য ভার্সিটি পড়–য়া এক ছাত্র তার সহপাঠিদের নিয়ে মোটর বাইকযোগে গেলে সিভিল ড্রেসে টহলরত উপশহর ফাঁড়ি ইনচার্জ আম্বার হোসেন তাদের পথ আটকে দেহ তল্লাশি করে। শার্ট প্যান্টের পকেট হাতড়ে কিছু না পেয়ে একজনের মাথার টুপি খুলেও দেখে কিছু আছে কিনা?
তাদের কাছে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে আম্বার হোসেন তাদের নাম ঠিকানা জানতে চান। আমবাগানের মালিক ছেলেটি তাদের বাড়ি উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির উল্টোদিকের বাড়িটা তাদের বলে জানালে, আম্বার হোসেন বলেন, কিরে আমার এলাকায় থাকিস আর আমাকেই চিনিসনা? মনে রাখিস আমার এলাকায় থাকলে আমাকে চিনতে হবে ....দিয়ে চলতে হবে।’
পুলিশের এ ব্যবহারের বিষয়ে ওই ভার্সিটি পড়–য়া ছাত্রের এক আত্মীয় বগুড়া সদরের ওসি বদিউজ্জামানকে বললে তিনি আম্বার হোসেনের কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক বলে জাস্টিফায়েড করে বলেন , আপনারা কি পুলিশকে কাজও করতে দেবেন না?
গত ৫ মে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, তার রিকশাচালক বড় ভাই আফছার আলিকে ডাকাতি মামলার আসামি করে জেলে পাঠিয়েছে কাহালু থানার দারোগা হেলালুদ্দিন। রিকশাচালককে ডাকাতি মামলার আসামি করার কারন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর জানায় নিজেদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের টাকা খেয়ে আফছারকে থানায় ধরে আনে দারোগা হেলাল।
এরপর আফছারকে ছেড়ে দেয়ার শর্ত হিসেবে দাবি করে ১ লাখ টাকা। ওই টাকা দিতে না পারায় দারোগা হেলাল পুরনো একটি ডাকাতি মামলার আসামি দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও ব্রজেস্বর বর্মন নামের একজন দারোগা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করে দারোগা হেলালকে। অভিযোগ রয়েছে দারোগা হেলাল বগুড়ায় তার অন্যান্য কর্মস্থলেও একই ধরণের কর্মকান্ডের সমালোচিত হয়েছে।
শুধু এ ধরণের কয়েকটি মাত্র বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নয় বগুড়ার থানা গুলোতে এখন জিডিসহ বিভিন্ন প্রকার কাজে এসে এক শ্রেনীর দারোগা কনস্টেবলের হাতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল অপমান অপদস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ এখন বিরোধি দলীয় নেতা বা সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সম্মানিত শ্রেনী পেশার মানুষসহ সরকারি দলের নেতাদেরও কথায় কথায় অপমান অপদস্ত করছে। বিভিন্ন মাদক স্পট উচ্ছেদ বা বন্ধ না করে রাত নামলেই ওই স্পটে মাদকসেবী বা অন্যদের ধরে ধরে ঘটনাস্থলেই টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত । এই ধরা ও ছাড়ার প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘স্পট সামারি’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ