Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেতন-ভাতার দাবিতে রোজা রেখে রাস্তায় পাটকল শ্রমিকরা

ষষ্ঠ দিনের মতো সড়ক অবরোধ : বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৬ষ্ঠদিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে গত সোমবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল নারায়ণগঞ্জের রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিল ও করিম জুট মিলের কয়েকহাজার শ্রমিক।
এদিকে, রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এসব সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ।
গতকাল সকালে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপর গাছ ও টায়ার জ্বেলে বিক্ষোভ করছেন দুটি পাটকলের কয়েকহাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক। শ্রমিকরা জানায়, প্রায় ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। যার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অনেকের সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গেছে।
শ্রমিকরা বলেন, রোজার মাসে অসহ্য গরমের মধ্যে তারা কাজ বন্ধ করে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়েও কোন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না।
শ্রমিকদের অভিযোগ, বিজিএমসি মিলের লোকসানের অজুহাত তুলে শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে না। যার কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। যতদিন পর্যন্ত দাবি না মানা হচ্ছে ততোদিন রাজপথে অবরোধ করে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে তারা জানান। আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের ৯ দফার মধ্যে অন্যতম তিনটি দাবি হলো- বকেয়া মজুরি পরিশোধ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও ঈদের আগেই উৎসব-ভাতা প্রদান করা।
ডেমরা শিল্পাঞ্চল পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আবুল হোসেন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের নামে ৪৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়ন করেনি। মজুরি কমিশন নিয়ে সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্ত সরকার ও সংশ্লিষ্টরা নানা আশ্বাস দিয়েও এখনও তা বাস্তবায়ন করছে না।
তিনি আরও বলেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের উপস্থিতিতে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেখানে শবে বরাতের আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির এক সপ্তাহের টাকা দেওয়া এবং ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সমস্ত বকেয়া মজুরি পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিজিএমসি তা করেনি। চুক্তি অনুযায়ী গত ৮ মে বিজিএমসির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের একটি সভা হওয়ার কথা ছিলো। বিজিএমসি সেটিও করেনি। যার কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে লাগাতার ধর্মঘট চলবে বলে এই নেতা হুশিয়ারি দেন।
স্থানীয় বাসীন্দারা বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে শ্রমিকরা সড়কে গাছের গুঁড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন করছে। এতে তাদেরকে সুলতানা কামাল সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে গিয়ে ছোট ছোট যানবাহন তথা অটোরিকশা, সিএনজিতে করে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। তারা অতি শীঘ্রই শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
মারজিয়া ইসলাম নামে এক নারী বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ঢাকায় যেতে হয়। কিন্তু পাটকল শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে প্রচন্ড রোদের মধ্যে রাস্তায় প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা হেঁটে পার হতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে অন্যদিকে অনেকে এই রোদে হেঁটে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ৯ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেন। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও ১৮ মের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই আশ্বাসের কোন প্রতিফলন না ঘটনায় তারা আবারও রাস্তায় নেমে আসে। একই দাবিতে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা লঙ্গরখানা খুলে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে।
ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মিয়া বলেন, শ্রমিকরা কোন বিশৃঙ্খলা না করায় তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বোজানো হচ্ছে। যে কোন পরিস্থিত মোকাবেলার জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ