Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরে ফল পাকা গরম

বোরো চাষিদের কামনা আরো ক’টা দিন রোদ!

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বৈশাখের শেষ প্রান্তিকে এবং মধুমাস জ্যৈষ্ঠের ঠিক প্রাক্কালে গরমে চলমান নাগরিক জীবনের হাঁসফাসের মধ্যেই উত্তরের বোরোধান চাষিরা মনে মনে চাচ্ছে আরও কয়েকটা দিন যেন বৃষ্টি না হয়, পরিবেশ থাকুক রৌদ্রকরোজ্জ্বল। তারা চায় আরও কটা দিন রোদ !
ক’দিন আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে চলা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল উত্তরের বোরো চাষিরা। তবে ফণির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও বাতাস দু’দিনের মাথায় মিলিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছে বোরো ধান। কৃষি বিভাগের হিসেবে ফণির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় বাতাসের তীব্রতা, ব্যাপকতা ও দীর্ঘায়িত না হওয়ায় বোরো ধান বা অপরাপর খরিপ মওশুমের ফসলহানি হয়নি। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে যদিও বলা হয়েছে , ফণির প্রভাব মিলিয়ে যাওয়ার পরপরই দেশে আরও একটি বা দুটি নিম্নচাপ দেখা দিতে পারে। যার প্রভাবে দেশে হালকা মাঝারি বা ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রামপুর ভালুঞ্জা গ্রামের তালুকদার পাড়ার আব্দুর রশিদ জানান, তিনি তার লাগানো ১৫ বিঘা জমির বোরো ধানের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধেক জমির ধান কাটতে পেরেছেন। তিনি জানান. কিষাণের সঙ্কট কিংবা তাদের উচ্চ পারিশ্রমিক জনিত সমস্যার কারণে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। তবে এরমধ্যে ফের বৃষ্টি নেমে আসলেই সর্বনাশ। আব্দুর রশিদের মতোই উত্তরের হাজার হাজার বোরো ধান চাষিরা চাচ্ছে আরও কয়েকটা দিন যেন রাজশাহী ও বগুড়া বিভাগের সব জায়গায় আবহওয়া শুকনো ও খটখটে থাকুক, যাতে ধান কাটা মাড়াই, সেদ্ধ ও শুকানোর কাজটা ভালোই ভালোই শেষ হয়ে যায়।
পরিস্থিতির কারণে বগুড়ার অনেক অটোরাইস মিল মালিক ও ধান চালের বৃহত্তম ব্যবসায়ীরা বোরো ধান চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অর্থ সহায়তা নিয়ে। মজুর বা কামলাদের উচ্চ পারিশ্রমিকের অংশটা তারাই পরিশোধ করছে। যেন রোদ থাকতে থাকেতেই ধান কাটামাড়াই শেষ করে সেগুলো তাদের মিল বা চাতালে পৌঁছে যায়।
বগুড়ার বৃহত্তম কাঁচামালের আড়ত আজমির ভান্ডারের সত্বাধিকারি ও অটোরাইস মিল মালিক আলহাজ¦ আব্দুল গফুর বলেছেন , তার মিলের চাহিদা মোতাবেক ধান সংগ্রহের জন্য তিনি নিজে ও তার লোকজন প্রত্যন্ত গ্রাম জনপদে চষে বেড়াচ্ছেন এবং চাষিরা যাতে রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশ থাকতে থাকতেই ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজটা শেষ করতে পারে। কারণ রোদ থাকতে থাকতেই যদি কৃষকরা তা’ কেটে ঘরে তুলতে না পারে তাহলে বৃষ্টি হলে বা আবহাওয়া স্যাঁত স্যাঁতে হলে জমিতে থাকা ধান লেট ব্লাইট’ বা পাতা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হবে।
কৃষি বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের ১৬ জেলায় ফি বছর গড়ে ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে।প্রায় এক যুগ ধরে লাগাতারভাবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। চলতি মওশুমেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখন পর্যন্ত। সূত্র জানায়, খরিপ মওশুমি ফসলগুলোর মধ্যে বেগুন, ঢেঁড়শ, পটল, করলা, পুঁইসহ বিভিন্ন ধরণের শাক সব্জির আবাদের জন্য বৈশাখ মাসে শুষ্ক আবহাওয়া উপযোগী। চলতি গরমের কারণে তাই বাজারে সব্জির অঢেল সরবরাহ রোজার মাসে দেশি আলু, পিয়া , রশুন, আদা ও কাঁচামরিচের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে ।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ একেএম জাকারিয়া বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিকে এখন পর্যন্ত মাইল্ড ওয়েভ পর্যায়ভ‚ক্ত বলে উল্লেখ করে বলেন এখন পর্যন্ত গড়ে ৩৬ ডিগ্রির মধ্যেই তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ আছে। তবে ৪০ ডিগ্রির পেরিয়ে গেলে তা’ হিট ওয়েভ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তখন তা’ আম কাঁঠাল লিচু জামসহ সব ধরনের দেশি ফলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কৃষিবিদ জাকারিয়া দ্রুত গতিতে বোরোধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, দিন দিন যেভাবে মজুর সঙ্কট চলছে তাতে এখন থেকে ধান কাটামাড়াইয়ের কাজটা যান্ত্রিকভাবে করার বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় উত্তরের কৃষি বেশিদুর অগ্রসর হতে পারবেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
এদিকে আগতপ্রায় মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মধুফল আম, কাঠাল, লিচু, বেল ও জামের লাল বরণ (লালাভ বর্ন) ধারনের জন্য বর্তমান গরম বেশ উপযোগী বলে মন্তব্য করে কৃষিবিদ বজলুর রশিদ রাজা বলেছেন, এবার রোজার মাসে দেশীয় ফলের সমাহার হবে বাজারে, কেননা গরমের কারণেই আম ও লিচু পেকে লালাভ হয়ে উঠবে একটু আগে ভাগেই ।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ আলম জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই একটি ও পরবর্তীতে আরও ২/১টি নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টির শীতল পরশ পাবে প্রকৃতি। যা’ নাগরিক জীবনের জন্য স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ