Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষ কলেজে আসন পাওয়ায় চ্যালেঞ্জ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু কাল

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কাল থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা চলতি বছর ভর্তির জন্য অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তুলনায় আসন সংখ্যা বেশি থাকায় ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে না শিক্ষার্থীদের। উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও প্রায় ১২ লাখ আসন খালি থাকবে। তবে পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিমশিম খেতে হবে ভালো ফলাফল করা ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ তালিকায় থাকা কলেজগুলোতে নজর থাকবে তাদের। এদিকে এবার ভর্তিতে বিড়ম্বনা এড়াতে সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৮২টি, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪৫টি এবং ৮৯৩টি কলেজের বাকিগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত কলেজের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যাতে বিভ্রান্তি ও প্রতারণার শিকার না হয়, সে জন্য কোন কলেজ কোন শ্রেণির তা নির্ধারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ‘এ’ ক্যাটাগরির কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা রয়েছে ৫৭ হাজার এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির কলেজে রয়েছে ৫২ হাজার। অন্যদিকে চলতি বছর সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী। আবার নিজ নিজ কলেজ থেকে কম জিপিএ পেলেও ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন এসএসসিতে উত্তীর্ণরা। সে হিসেবে রাজধানীর নামিদামি কলেজগুলোতে এবারও ভর্তির ক্ষেত্রে ভিড় থাকবে দেশ সেরা মেধাবীদের।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ জানান, সাধারণত ঢাকা মহানগরের কলেজে ভর্তিতে বেশি সঙ্কট তৈরি হয়। মেধাবীরা নির্দিষ্ট কিছু কলেজে ভর্তির আবেদন করে। এতে অনেকেই ভর্তি বঞ্চিত হয়। কিন্তু এসব কলেজের বাইরেও অনেক ভালো কলেজ আছে তা বোঝাতেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ নামে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ন্যূনতম ৬শ’ এবং পাসের হার ন্যূনতম ৭০ শতাংশ, সেসব প্রতিষ্ঠান ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬শ’ এবং পাসের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ সেগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং অবশিষ্ট কলেজ ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।
‘এ’ শ্রেণিতে থাকা ঢাকার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কলেজ হলো নটর ডেম কলেজ, ভিকারুননিসা ন‚ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বি এ এফ শাহীন কলেজ, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ।
সারা দেশের কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজটি হবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দেশে একাদশ শ্রেণিতে পড়ানোর মতো কলেজ ও মাদরাসা আছে ৭ হাজার ৩৬৩টি। এর মধ্যে কলেজ ৪ হাজার ৬০০টি। গত বছর এসব কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে আসন ছিল ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬০৫টি। এবারও প্রায় একই থাকছে। যদিও কোনো কোনো কলেজ আসন বাড়াতে আবেদন করেছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। ফলে প্রায় ১২ লাখ আসন খালি থাকবে। এগুলো শূন্য থাকবে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পাবে না।
তবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সবসময় সঙ্কট তৈরি হয় ঢাকা মহানগরির কলেজগুলোতে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের টার্গেট থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। তাই হাতোগোন কিছু কলেজেই প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাই এবার ভর্তিচ্ছুদের কলেজ পছন্দ সহজ করতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন জেলা শহরেও শিক্ষার্থীদের আবেদন সংখ্যা এবং পাসের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহীতে ৭, চট্টগ্রামে ১৯, খুলনায় ১৩ এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এ ছাড়া সারা দেশে অর্ধশত মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে আছে। এসব কলেজ-মাদরাসায় স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। শিক্ষার্থীদের অতীতের ভর্তির আবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বাইরে মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও ভর্তির আবেদন করবেন।
ভর্তিতে এনআইডি: বরাবরের মতো এবারও এইচএসসিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বনি¤œ ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। শিক্ষার্থীরা যাতে কলেজের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে এবার আবেদনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। কেবলমাত্র বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) দিয়েই আবেদন করা যাবে। একটি নম্বরের বিপরীতে একাধিক আবেদন করা যাবে না। মূলত ভূয়া আবেদন ও নিশ্চায়ন বন্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে বুঝে শুনে এবং পছন্দক্রমে কলেজ পছন্দ করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ভর্তিতে শিক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দিয়ে মেধাক্রম তৈরি হয়। সফটওয়্যারও সেভাবে তৈরি। শিক্ষার্থীরা যখন অনলাইনে একটি কলেজ পছন্দ করবে সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার তার মেধাক্রম জানিয়ে দেবে। পাশাপাশি কলেজে বা পছন্দের বিভাগে আসন সংখ্যাও ওয়েবসাইটে থাকবে। আবেদনের সময়ে দুই দিকে নজর দিলে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরে বাদ পড়ার কথা নয়।
আবেদনকারীদের বাছাইয়ে আরও কয়েকটি দিকে নজর দিয়ে থাকে বোর্ডগুলো। তা হচ্ছে- যদি একই সিরিয়ালের আসনের বিপরীতে সমান নম্বরপ্রাপ্ত একাধিক শিক্ষার্থী পাওয়া যায় তাহলে গণিত, ইংরেজি, বাংলা বিষয়ে কে বেশি পেয়েছে তা দেখা হয়। এতেও সুরাহা না হলে বিভাগ ভিত্তিক বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর দেখা হয়। বিষয়টি ভর্তি নীতিমালার ৩ নম্বর ধারায় রয়েছে। জানা গেছে, এ বছর কলেজ পছন্দ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীর মেধাক্রম দেখানো হবে। এতে কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাব্যতা সহজেই নিরূপণ করা যাবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, ভর্তিতে সঙ্কট সাধারণ চিত্র নয়। গ্রাম-গঞ্জের কলেজে আবেদনকারীর তুলনায় আসন সংখ্যা বেশিই থাকে। এ সমস্যা কেবল বড় কলেজগুলোর ক্ষেত্রে। তিনি আরও বলেন, সমস্যা এড়াতে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি কাজ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে অবশ্যই ১০টি কলেজ পছন্দ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মেধাক্রম আর ১০টি কলেজের আসন সংখ্যা হিসাবে নিতে হবে। না হলে আবেদনের প্রথম ধাপে সুযোগ মিলবে না।
ভর্তির সময়সূচি : তিনটি ধাপে এবার ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে। প্রথম ধাপে আবেদন করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। এই পর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই এদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ