Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিহ্নিত দেশদ্রোহীদের তথ্য উদঘাটনের উদ্যোগ

ডিসিদের কাছে যাচ্ছে গোপন বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নতুন তালিকা প্রকাশে আইন সংশোধন হবে
রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আটকে আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা করার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তবে এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে স¤প্রতি অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠকের কার্যপত্র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক জাতীয় সংসদ ও সংসদের বাইরে একাধিকবার স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকি সাবেক নৌমন্ত্রী ও বর্তমানে এই কমিটির সভাপতিও এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি। আর তাদের তালিকা প্রকাশ না করায় সংসদ ও সংসদের বাইরে বারবার তোপের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। সূত্র জানায়, ১৯৯৭-৯৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অনুবিভাগে কোলাবোরাটর সেকশনে রক্ষিত ফাইলে ৪৪ হাজার রাজাকার, ৮ হাজার আল-বদর এবং ৩ হাজার আল-শামসের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছিল। কিন্তু এগুলো এখন আছে কিনা সে বিষয়েও জানে না মন্ত্রণালয়। তবে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে সংরক্ষিত ফাইলগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বলেছে সংসদীয় কমিটি। ওই সময়ে যেসব রাজাকার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বেতন-ভাতা নিত, তাদের তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে ডিসিদেরকে গোপন বার্তা পাঠানোর জন্য মু্ক্িতযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলেছে কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি বিষয়গুলো জামুকার বিদ্যমান আইন ও বিধিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গঠিত কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে তা সংশোধনের সুপারিশ করে। ওই আইন ও বিধিতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার পাশাপাশি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা করার বিষয়টি আলোচিত হয়। এক্ষেত্রে জামুকার আইন সংশোধন করা হলে বিদ্যমান বিধিতেও কোনো ধরনের সংশোধনের প্রয়োজন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের আসন অবৈধভাবে শূন্য ঘোষণা করে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় যাদের সদস্য করা হয়েছিল তাদের তালিকা করার বিষয়টি অ্যালোকেশন অব বিজনেসে অন্তর্ভুক্তির করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
এবিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামুকার আইনে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
১৯৯৭-৯৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অনুবিভাগে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইফতেখারুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতা বিরোধীদের যে তালিকা ছিল, তা এখনও আছে কিনা জানা দরকার। তারা পরবর্তীতে জ্বালিয়ে ফেলেছে কিনা তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম বলেন, ২০০১ সালের পর সেখানকার অনেক ফাইল ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে গোপন চিঠি দিয়ে ফাইলগুলো সংরক্ষণ করার অনুরোধ জানিয়েছি বৈঠকে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা পর্যায়ে রাজাকাররা ডিসিদের কাছে বেতন-ভাতা নিত বিধায় প্রতিটি জেলায় তাদের তালিকা রয়েছে। রাজাকারদের সেই তালিকাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক ইনকিলাবকে বলেন, মহান সংসদে রাজাকার, আল-বদরদের তালিকা প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু জামুকার বিদ্যমান আইনে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার কথা উল্লেখ থাকায় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তবে জামুকা’র আইনে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • মোহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ১০ মে, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছেন তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • স্বদেশ আমার ১০ মে, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি না করা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসিবুল ইসলাম ১০ মে, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    দেশের উন্নয়নের জন্য আমার মনে হয় এই ইস্যুটা দ্রুত শেষ হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ মাহাদী ১০ মে, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    একটা জাতির বিচার-আচার করতে যদিই অর্ধ শতাব্দি লেগে যায় তাহলে সামনে এগোবে কবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পাপিয়া ১০ মে, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    যারা দেশপ্রেমের আড়ালে ক্ষমতার চেয়ারে বসে দেশদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাদেরও তালিকা হওয়া উচিত। বিদেশি কোনো দালাল প্রাশসনের উপর স্তরে থাকা ঠিক নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১১ মে, ২০১৯, ২:৩৬ এএম says : 0
    ভারতীয় সকল দালালদেরকে চিহ্নিত করা সকল দেশপ্রেমিকদের দাবি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ