Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধান কৃষকের বোঝা মণপ্রতি লোকসান ২ থেকে ৩শ’ টাকা

খুলনাঞ্চলে বাম্পার ফলনেও হাসি ম্লান

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

খুলনাঞ্চলে বোরো চাষিদের মুখে হাসি নেই। বাম্পার ফলন হলেও বোরো ধানের ন্যায্য দাম নেই। গত কিছু দিন যাবত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় তড়িঘড়ি করে ধান ঘরে তুলতে খরচ গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ। চিংড়ি চাষ ফেলে পেশা পরিবর্তন করে ধান চাষে ফিরে আসা চাষিদের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
এদিকে স্থানীয় ফড়িয়া চক্র মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে মন প্রতি ৫৫০ টাকা দরে। আর একজন কৃষকের ধান কাটার জন্য শ্রমিকের পিছনে খরচ হচ্ছে দৈনিক ৭০০ টাকা। অর্থাৎ কৃষাণের মজুরি একমণ ধানের চেয়েও বেশি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে ফড়িয়া ব্যবসায়ী ছাড়াও কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা ও ইউপি সদস্যরা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের নিকট থেকে নামমাত্র মূল্যে ধান ক্রয় করছে। তারা আগেভাগে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের টাকা দাদন দিয়েছে। ওই টাকা কৃষকরা ধান রোপণ, পরিচর্যা, সার-কৃষাণ ও ধান মাড়াইসহ ধান ঘরে তুলতে খরচ করেছে। এতে করে অধিকাংশ কৃষক দেনায় জড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
এসব বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ জেনেও প্রতিকারে কৃষকের পাশে এগিয়ে আসছে না। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা কৃষি অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ধান ক্রয়সহ সার্বিক বিষয় তদারকি করার নিয়ম থাকলেও তাদের ফড়িয়াদের সাথে বেশিরভাগ সময় খোশগল্প করতে দেখা যায়। এমন কি একজন কার্ডধারী কৃষকের নিকট থেকে ৭০ মণ ধান ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করার নিয়ম থাকলেও তারা তা না করে রাতের আঁধারে মিল মালিকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে থাকে।
সরকার নির্ধারণ করেছে, প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা, গম ২৮ টাকা ও ধান ২৬ টাকা। এ হিসেবে ধানের মণ ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা মধ্যসত্ত¡ভোগীদের কারণে এ দাম পাচ্ছে না। সরকারি চাল কে বা কারা কোথা থেকে ক্রয় করে তা সাধারণ কৃষকরা জানেন না। জানলেও ফড়িয়াদের কারণে ওই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না কৃষকরা ।
ডাকাতিয়া বিল, পাবলা বিল, আড়ংঘাটা বিল, দেয়ানা বিল, রূপ রংপুর বিল, কৃষি কলেজসহ আশপাশ এলাকায় কৃষকরা জানান, তাদের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে বড় বড় ধান ব্যবসায়ীরা সরকারি দামে ধান বিক্রি করে। কিন্তু কৃষকরা কোনো সরকারি সুবিধা পায় না। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তা ছাড়া বোরো ধানের ফলন হয়েছে আশাতীত। আগাম জাতের ধান কাটা থেকে যে ফলন পাওয়া গেছে তা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া বর্তমানে ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা পড়েছে। কিছু ধান কাঁচাসহ শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে চলতি বছর বোরোর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে।
আব্দুল হালিম মিয়া। ডাকাতিয়া বিলের একজন কৃষক। এক বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। ধানের ফলন ভাল হলেও লাভের মুখ দেখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে। এ সুযোগে কৃষাণরা তাদের মজুরি বেশি নিচ্ছে। একজন কৃষাণের দৈনিক মজুরি ৬/৭শ টাকা। এ টাকা খরচ করে ধান ঘরে তুললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে লাভের পরিবর্তে লোকসানের বোঝা বইতে হবে বলে আশঙ্কা করছি।
কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলা কমিটির সদস্য প্রশান্ত রায় শিবু বলেন, বোরো ধান উৎপাদন করতে প্রতিমণ ধানের বিপরীতে খরচ হয়েছে ৮৫০ টাকা। কিন্তু বাজারে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা দাম দিচ্ছে মোটা ধান ৫৫০ টাকা, চিকন ধান ৬৫০ টাকা। মণ প্রতি লোকসান গুণতে হচ্ছে ২ থেকে ৩শ টাকা।
দৌলতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (এটিআই) অধ্যক্ষ কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন বলেন, তারা তাদের মাঠে প্রদর্শনীর জন্য প্রায় দু’একর জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। তিনি চেষ্টা করেও সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যদি এই ধান সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামে ক্রয় করে তাহলে কৃষকরা লাভবান হয়। তারা ধান চাষে আরও উৎসাহি হবে। দেশ হবে সমৃদ্ধ।

 



 

Show all comments
  • ash ১০ মে, ২০১৯, ৯:১৮ এএম says : 0
    DESHER KRISHOKDER ROKHA KORTE NA PARLE , DESHER VOBISHOT KHARAP HOBE , TATE KONO SHONDEHO NAI !!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ