পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পিছিয়ে পড়েছে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের কাজ। কাজ কম হওয়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফেরত যাচ্ছে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূগর্ভস্থ মাটির স্তরে ভিন্নতা থাকায় সংশোধন করতে হয়েছে পদ্মা সেতুর মূল নকশা। এ কারণে পিছিয়ে পড়েছে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের রেলপথের নিচে একটা নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত পাইলিং করতে হবে। পাইলিংয়ের কাজ শুরুর আগে সেখানে মাটির ভার বহনের ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
এ পরীক্ষায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের চারটি পাইল উত্তীর্ণ হতে পারেনি। মাটির তলদেশে, যেখানে পাইলের শেষ প্রান্ত থাকবে, সেখানকার স্তরে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। এ সমস্যাকে পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের পাইলিংয়ের সময় সৃষ্ট জটিলতার মতোই বলে অভিহিত করেছেন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে রেলপথের জন্য সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার পাইল করতে হবে। মূল নকশায় পাইলের গভীরতা ধরা হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৮ মিটার। কিন্তু তলদেশে মাটির স্তরে ভিন্নতা থাকায় মূল নকশা এরই মধ্যে সংশোধন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেড (সিআরজিএল)। সংশোধিত নকশায় এসব পাইলের গভীরতা ধরা হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ মিটার। বর্তমানে সংশোধিত নকশার আলোকে পুনরায় পাইলের লোড টেস্টের কাজ চলছে।
পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই ট্রেন চালানোর লক্ষ্য থাকলেও নকশা জটিলতার কারণে ধীরগতিতে চলছে কাজ। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ টাকায় প্রকল্পের ১১ শতাংশ কাজ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে নকশা জটিলতায় অর্থবছরের ৯ মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে কোনো কাজই হয়নি। কাজ না হওয়ায় প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ টাকার বড় একটা অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর প্রকল্পটির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর প্রকল্পের বরাদ্দ কমেছে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
এদিকে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ২ হাজার কোটির বেশি টাকা ফেরত যাওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আরএডিপিতে বড় ধরনের কাটছাঁট হয়েছে। চলতি অর্থবছর রেলওয়ের ৪৫টি বিনিয়োগ ও তিনটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে ১১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। কাটছাঁট করে বর্তমানে টাকার অংক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৪৭ কোটিতে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ পাওয়া টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পর সবচেয়ে বেশি টাকা ফেরত যাচ্ছে দোহাজারী-রামু-ঘুনদুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সেটি সংশোধন করে মাত্র ৫২৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ফেরত যাচ্ছে ৯২২ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে।
বরাদ্দ অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত গেলেও এর সঙ্গে নকশা জটিলতা বা কাজে ধীরগতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নকশা জটিলতার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা এরই মধ্যে সে জটিলতা প্রায় সমাধান করে ফেলেছি। নতুন করে পাইলের লোড টেস্টের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ কিছুটা বেশি ছিল। এ কারণেই কিছু অর্থ ফেরত যাচ্ছে। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগের কাজ। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে রেলপথ সংযুক্ত হবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শুরু হয় সেতুর সংযোগ এলাকায় পাইলের লোড টেস্টের কাজ। এখন পর্যন্ত চারটি পাইলের লোড টেস্ট করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরজিএল। সবক’টি পাইলের লোড টেস্ট ‘ফেল’ করেছে। এতে নকশা সংশোধন করতে গিয়ে কাজে ধীরগতির অব্যয়িত টাকা ফেরত যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ২৬ কিলোমিটার রেলপথ যাবে উড়ালপথে। এ উড়ালপথের জন্য যে পাইলগুলো হওয়ার কথা, সেগুলোয় কিছুটা সমস্যা আছে। এগুলো সংশোধন করা হচ্ছে চীনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে। তিনি বলেন, কাজটা করতে গিয়ে আমরা প্রকল্পের কাজে কিছুটা পিছিয়ে আছি। তবে আগামী অর্থবছরে বাড়তি কাজ করে পিছিয়ে পড়া অবস্থান থেকে আমরা বেরিয়ে আসব।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।