Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫০ বছরেই বিলুপ্ত হতে পারে বাংলার বাঘ

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকার কারণে বাঘের সর্বশেষ ও সর্ববৃহৎ আবাসস্থল বলে বিবেচিত সুন্দরবন চিরতরে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে সাবধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার অক্ষমতার কারণে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হবে। সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার অক্ষমতার কারণে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা স্থলভাগের প্রায় ৫ লাখ প্রাণী প্রজাতির মধ্যে বাঘ অন্যতম। বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার, চিতা ও পাহাড়ি চিতার মতো হিং¯্র প্রাণীগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে সবই ওই ‘মার্জার’ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, যারা ডোরাকাটা শ্রেণীর বিড়াল (স্পটেড ক্যাট) প্রজাতি থেকে বিবর্তিত।
বাংলাদেশ ও ভারতের দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। ইতোমধ্যে বিপন্ন হয়ে পড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুন্দরবনকে সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ এলাকা বলে বিবেচনা করা হয়। ফেব্রæয়ারিতে প্রকাশিত বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট-এর প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, সুন্দরবনের ৭০ শতাংশ ভ‚মির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক ফুট উপরে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকার কারণে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তা সেখানে বসবাসরত কয়েকশো বাঘ ‘কমিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট’। গবেষণা প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, ‘২০৭০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘদের জন্য উপযুক্ত কোনও আবাসস্থল থাকবে না।’
জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এর শনাক্তকৃত জলবায়ু পরিস্থিতি ও এর বিভিন্ন মডেলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ থেকে ২০৭০ সালের মধ্যে ৫.৪ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাঘের আবাসস্থল বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুন্দরবন সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক শরিফ এ মুকুল ও তার সহকর্মীরা বাঘের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বাইরে অন্য কোনও ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো সুন্দরবনের বাঘেদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। ১৯০০ সালের শুরু থেকে আবাসস্থল বিলীন হওয়া, শিকার ও বন্যপ্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবৈধ বাণিজ্যের কারণে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ থেকে ৪ হাজারের কিছু কমে নেমে এসেছে।
২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার পরিচালিত এক গবেষণায় আভাস দেওয়া হয়েছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১ ইঞ্চি বাড়লে কয়েক দশকের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৯৬ শতাংশ কমে যেতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষতির মাত্রা প‚র্ববর্তী ধারণার চেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এরইমধ্যে বিশ্বের বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রায় অর্ধেকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের বন বিভাগের কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমেদ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, নিম্ন এলাকাগুলোর সুরক্ষায় এরইমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বাঘেরা সেখানে থাকছে। উচ্চ পর্যায়ের লবণাক্ত পানিতেও টিকে থাকতে পারে এমন শস্য সেখানে লাগানো হচ্ছে। ঝড় প্রতিরোধক দেয়াল তৈরি করেছে সরকার। বিভিন্ন জায়গায় পলি ভাগ করে দেওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই কিছু দ্বীপের উচ্চতা বেড়েছে।
তবে ‘দ্য ভ্যানিশিং: ইন্ডিয়া’স ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইসিস’ এর লেখক প্রেরণা সিং বিন্দ্রা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা শিল্পোন্নয়ন যাই হোক না কেন বাঘের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে। তার মতে, অন্য একটি সুরক্ষিত ভ‚মিতে বাঘদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কোনও ‘টেকসই সমাধান’ হতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ