পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আশাতীত উৎপাদন চা শিল্পে সাফল্য ধরা দিয়েছে। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে চা-শিল্প। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে আগের রূপে ফিরতে পারে বাংলাদেশের চা। বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝেই চায়ের অগ্রগতিতে নতুন আশা জাগানিয়ায় ফুরফুরে মেজাজে চা সংশ্লিষ্টরা। অনুকূল আবহাওয়া ও বর্তমান সরকারের গৃহীত পথ নকশা অনুসরনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিতীয় রেকর্ড গড়ে চা উৎপাদন। চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে আশাতীত উৎপাদনের সম্ভাবনা উৎকর্ষ ছড়াচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এবারের বৃষ্টিপাত আনুপাতিক হারে কম হলেও চা বান্ধব আবহাওয়ায় খুশি সংশ্লিষ্টরা। ঘূর্ণিঝড় ফণি’র প্রভাবে বৃষ্টিপাতও শাপে-বর হয়েছে বিশেষ করে চা শিল্পে। গত বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাতের গড় হিসেব ছিল জানুয়ারী থেকে মে মার্চ পর্যন্ত ১০২৬.৬ মি.মিটার। চলতি বছর ৫ মে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮.২ মি.মিটার। তবে সিলেটে এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টিপাতের সহনশীল গড় পরিমান এপ্রিল মাসে ৩৭৬.৩ মি.মিটার ও মে মাসে ৫৬৯.৬ মি.মিটার। সেই তুলনায় গত বছর সহনশীলের চেয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান কম ছিল সিলেটে। এবারও হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সিলেটের জৈষ্ট্য আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ। তবে এ বৃষ্টিপাত চা উৎপাদনে সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে অতীতে চা উৎপাদন ছিল অনেক বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। যে কোনো পেশার মানুষের আপ্যায়নের প্রথম পছন্দে স্থানস পায় চা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে ব্যাপক হারে চায়ের চাহিদা। আগের তুলনায় উৎপাদন বাড়লেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না দেশে উৎপাদিত চা।
অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পুনরায় প্রবেশে সরকার গ্রহন করেছে চা-উৎপাদনে নানামুখি পদক্ষেপ। পথ-নকশার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় চা-শিল্পের বিকাশ ঘটবে তেমনটি আশা করছেন সবাই। চলতি বছর মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চা উৎপাদনে এবার নতুন রেকর্ড হবে। গত বছর ফেব্রæয়ারি-মার্চে অনাবৃষ্টিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন চা সংশ্লিষ্টরা। সেই শঙ্কা মাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে চা উৎপাদন। গত বছর ১৬৬টি বাগানে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়।
সিলেট জেলার ১৯টি চা বাগানে গত বছর প্রায় ১৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। এবারও সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় গাছে নতুন কুঁঁড়ি এসেছে। গাছের সতেজ অবস্থা আগাম স্বপ্ন দেখাচ্ছে চলতি মৌসুমে নতুন উৎপাদনের রেকর্ডের। বর্তমানে জেলার ২০টির মধ্যে ১৯টি বাগানে উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডোনা চা বাগান রুগ্ন তালিকায়। জেলায় ২৯ হাজার ৭৪৫ একর জমিজুড়ে চা বাগান। উৎপাদন হচ্ছে ২৮ হাজার ২১ একর জমিতে।
সিলেটের লাল মাটির টিলায় চা উৎপাদন ভালো হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে পরিচর্যার অভাবে উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে বলে জানালেন শ্রীমঙ্গল চা গাবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অসীম কুমার সাহা। তিনি বলেন, সিলেটের মাটি চা উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত। তাই সবল গাছ থেকে বেশি চা উৎপাদন করা কঠিন কাজ নয়।
চয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া বাগানে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সেই চা বিদেশে রপ্তানি হতো। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল চা। বিদেশে একচ্ছত্র বাজার ছিল বাংলাদেশী চায়ের। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজার হারায় চা। শিল্পের উন্নয়নে পথ নকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছিল। ১৫ বছর মেয়াদী এই পথ নকশায় চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে কমপক্ষে ২৫ হাজার মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে প্রবেশের রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের অর্থনীতিবিদ জিএম আহসান হাবীব বলেন, বৃহৎ চা বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র আয়তনের চা চাষ এখন ব্যাপকতা পাচ্ছে। পথ নকশা অনুসারে চা উৎপাদন সাফল্য ধরে রাখতে পারলে অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদা মিটিয়ে আবার রপ্তানিতে আয়ের পথে পা বাড়াঁতে পারে বাংলাদেশ!
চা বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে চা চাষ হচ্ছে দেশের ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করায় গত তিন বছরে গড়ে ১২ হাজার মিলিয়ন কেজি বেশি চা উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ চা এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন সভাপতি আখতারুল ভুইয়া বলেন, চা শ্রমিকরা নিবিড় পরিশ্রম করে যাচ্ছে এ শিল্পের বিকাশে। এখন সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তথা মালিক পক্ষের বাগান ও শ্রম বান্ধব পরিবেশ বজায়ে আন্তরিক হলে চা শিল্প দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।
মৌলভীবাজার কুলাউড়ার গাজীপুর চা বাগান ম্যানেজার এসকে কাজল মাহমুদ বলেন, খরার শঙ্কা নেই। প্রত্যাশিত বৃষ্টিতে চা বাগানগুলোতে প্রাণ ফিরেছে। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চা উৎপাদনে সাফল্য অক্ষুন্ন থাকবে। চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী গণমাধ্যমকে বলেন, পথ নকশা বাস্তবায়নে সফল হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিতে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশের সুযোগ হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ জানান, চা শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে পথ নকশার পথ ধরেই। সার্বিক ক্ষেত্রে মনিটরিংসহ চা-চাষে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া ‘চা বাগানে ভুর্তকি মূল্যে সরকার প্রদত্ত সারের ডিস্ট্রিবিউশন চা-বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে আসলে সার সরবরাহ আরো সহজতর হবে। একই সাথে সারের সুষম ব্যবহার চা-বোর্ড থেকে মনিটরিং করে নিবিড় তদারকির পথ সৃষ্টি হবে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।