Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রস্তুতি এমন যে একটি প্রাণহানিও ঘটবে না : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

২৫ লাখ মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৯, ১২:৩২ এএম

রাত পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে
ঝুঁকিতে আছে ২১ জেলা এখনো


ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সম্ভাব্য আঘাতের আশঙ্কায় উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর ২৫ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হবে এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাত সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। এখনো ২১ জেলা ঝুঁকিতে আছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা কক্ষ রাখা এবং ডিসিদের কাছে বাড়তি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এতে করে একটি প্রাণহানিরও আশঙ্কা নাই। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৯টি জেলায় ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা আছে। তবে ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ যদি ২০০ কিলোমিটারের বেশি হয় তাহলে খুলনা অঞ্চলের ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সর্বশেষ অবস্থা ও প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, এই মুহূর্তে ঝড়টি ভারতে আঘাত হেনেছে। ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে এবং অগ্রসর হবার গতি ২৭ কিলোমিটার। এটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শক্তি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশে যখন আসবে তখন এর গতি ৯০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার হতে পারে। অগ্রসর হওয়ার গতি হবে ১৭ কিলোমিটার। ফলে সন্ধ্যায় শুরু হয়ে সারা রাতব্যাপী ঝড়বৃষ্টি চলবে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট জলোচ্ছাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেত রয়েছে বাংলাদেশ।
সভায় সচিব শাহ কামাল বলেন, সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনী , কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও স্বেচ্ছাসেবকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা একযোগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। সকাল ১০টা থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় এক লাখ, সাতক্ষীরায় ১২ হাজার, বাগেরহাটে ৪০ হাজার, পিরোজপুরে ৬ হাজার, বরগুনায় ৮০ হাজার, পটুয়াখালীতে ৩৭ হাজার ৫০০, বরিশালে ৫ হাজার, ভোলায় ৩৫ হাজার, নোয়াখালীতে ১৫ হাজার, ল²ীপুরে ১২ হাজার, ফেনীতে ৫ হাজার, চট্টগ্রামে ২০ হাজার, কক্সবাজারে এক হাজার, ঝালকাঠিতে ১০ হাজার, চাঁদপুরে ৫ হাজার, শরীয়তপুরে ৮ হাজার, মাদারীপুরে ৪ হাজার। তিনি বলেন, যারা ঝুঁকিতে আছে তাদের ২১ থেকে ২৫ লাখ লোককে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৪ হাজার ৭১টি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আজকাল গ্রামাঞ্চলে পোক্ত বাড়িঘর ও বহু প্রাইমারি স্কুলে দালান উঠে গেছে। সে কারণে সবাই আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে না। সবাই যে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসবে তা নয়। সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমাদের প্রথম লক্ষ্য হল আমরা জীবনের কোনো ক্ষতি হতে দেব না। এজন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার আগে সব মানুষকে নিয়ে আসা হবে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যতটা সম্ভব গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সহ প্রাণীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য। আশ্রয় কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রতিবন্ধী ও গর্ভবর্তী নারীদেরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,আশ্রয় কেন্দ্রে সুপেয় পানি ও খাবারের কোনো সমস্যা হবে না। আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক প্যাকেট শুকনো খাবার একটি পরিবার ৭ দিন থাকতে পারবে। সেই রকম ৪১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট আমরা পাঠিয়েছি। ডিসিদের নগদ ১০ লাখ টাকা করে দেয়া আছে। যেকোনো প্রয়োজনে খরচ করতে পারবেন তারা। এনামুর রহমান বলেন, ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। আমরা জেনেছি মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে। তাই আমরা মনে করি আমরা একটি জীবনও হারাবো না।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর যে ঝুঁকি সেটাকে খাটো করে দেখা সমীচীন হবে না। জনগণকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে সাইক্লোনটিকে নিতে হবে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, উপকূলের লোকজনকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ যেসব বিভাগের উপর ঝুঁকি আসতে পারে তারা সবাই কাজ করছেন। জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে– প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী মা ও শিশুদের। প্রতিবন্ধীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা কক্ষ রাখা হচ্ছে। ডিসিদের কাছে বাড়তি ১০ লাখ টাকা ও খাবার বরাদ্দ দেওয়া আছে। ২০০ টন করে জিআর চাল দেওয়া আছে। শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে ৪৫ হাজার। একটা প্যাকেটে একটি পরিবারের পাঁচ জন সদস্যের উপযোগী খাবার দেওয়া আছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ