Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা

১০ মাসে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম

বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.১৬ বিলিয়ন ডলার


প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছর শেষ করতে চলেছে বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রবাসীরা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এদিকে রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার ভান্ডারও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.১৬ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩০ লাখ (১৩.৩০ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ২০৯ কোটি ২৮ লাখ (১২.০৯ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে এই দশ মাসে প্রবাসীরা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
গত বছরের এপ্রিলে পাঠিয়েছিলেন ১৩৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এপ্রিল মাসে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে সাত দশমিক ৭২ শতাংশ।
টাকার বিপরীতে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ খুবই ভালো। প্রতি মাসেই বাড়ছে। প্রবাসীদেও বৈধ্য পথে রেমিটেন্স পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারই ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও রেমিটেন্সের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
২০১৯ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৫৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল এক মাসের হিসেবে রেকর্ড। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার; গত বছরের মে মাসে।
গত বছরে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ (১৫.৫৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই অংক ছিল ২০১৭ সালের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলেন, বেশ কিছদিন ধরেই আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ ভালো। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে অবদান রাখছে রেমিটেন্স। এভাবে বলা যায়, আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। একদিকে অবৈধ পথে রেমিটেন্স আসা ঠেকাতে হুন্ডির বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ানোরও কৌশল নিয়েছে। এ সবই রেমিটেন্স বাড়াতে অবদান রাখছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নি¤œগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছর রেমিটেন্স বাড়ে। খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল ১৭ দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রিজার্ভ ৩২.১৬ বিলিয়ন ডলার: এদিকে রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার ভান্ডারও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। ২০১৬ সালের পর অর্থনীতির এই সূচকটি ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নামেনি। আন্তর্জাতিক মানদÐ অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।
এবার আকুর বিল ১.২৪ বিলিয়ন ডলার: আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আকুর বিল হয়েছে ১২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। আকুর দেনা শোধের পর রিজার্ভ কমে আসবে।
২.১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি: মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও ৮৪ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ১ কোটি ৫০ লাখ (১৫ মিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২ মে পর্যন্ত (দশ মাসে) সবমিলিয়ে ২১৪ কোটি (২.১৪ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বেশিরভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ