পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আতঙ্কে কৃষকরা দিশেহারা। এমনিতে ধানের দাম কম; তারপর ঘূণিঝড় ফণী পাকা ধান দুমড়েমুচড়ে দেবে এই আশঙ্কায় কৃষকরা আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো কৃষক বাধ্য হয়েই কাঁচা ধানেই কাঁচি চালাচ্ছেন। সারা দেশের কৃষকদের প্রায় একই অবস্থা। যাদের ধান পাকা এবং আধা পাকা তারা বাধ্য হয়েই অধিক মজুরি দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে একই চিত্র।
বগুড়ার সোনাতলার কৃষক মোস্তফা হক প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিআর-২৮, মিনিকেট, সুবললতা, কাজললতা জাতের ধান। জমির অধিকাংশ ধান আধা পাকা। এ ধানগুলো আর সপ্তাহখানেক পর কাটতে পারলে ভালো হতো। মনে তৃপ্তি আসত। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বৈরী আবহাওয়া তাকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দেয়।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ধান জমিতেই রাখবেন নাকি গোলায় ভরবেন। আবহাওয়ার হাবভাব দেখে কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এর মধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। জমির চার পাশে একজনের ধান কাটা দেখে অন্যরাও নিজ জমির অনেকটা আধা পাকা ধান কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
বগুড়ার কৃষক মোজাম্মেল জানান, তিন দিন আগের কথা। জমির সে আধা পাকা ধান কাটার জন্য ৯ জনের একদল দিনমজুর ঠিক করে ফেলেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে তাদের প্রায় তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হবে। সে থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে দিনমজুররা দল বেঁধে ধানের গোড়ায় বিরামহীন কাস্তে চালিয়ে যাচ্ছেন। আর কৃষক মোজাম্মেল হক সবকিছু কখনও জমির আইলে কখনও জমির ভেতরে দাঁড়িয়ে বা বসে দেখভাল করছেন।
বগুড়া জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে বিআর-২৮, ব্রি ধান-৫৮, সুবললতা, কাজললতাসহ হাইব্রিড জাত অন্যতম। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০ মেট্রিক টন। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, বিআর-২৮ জাতের ধানে প্রায় পুরোপুরি পাক ধরেছে। এ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে অন্য জাতের ধানগুলো এখনো পুরোপুরি পাক ধরেনি। সামান্য কাঁচা রয়েছে। এসব ধান পুরো পাকতে আরও প্রায় সপ্তাহখানেকের মতো সময় লাগবে। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে জমির আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
রংপুরের পীরগাছার কৃষক মামুন হোসেন জানান, মানুষ বাধ্য হয়েই আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে মাইকিং ছাড়াও নানাভাবে কৃষকদের ধানকাটার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। ধানের দাম পড়তির দিকে অথচ ক্ষেতমজুরের দাম চড়া। একে তো চলছে তীব্র তাপদাহ। এরপর রয়েছে কালবৈশাখীর ভয়। আবার নাকি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। একসঙ্গে এত কিছু সামাল দেয়া কোনো কৃষকের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই জমির আধা পাকা ধান কাটা হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক আমানউল্লাহ জানান, আর সপ্তাহখানেক জমিতে ধান রাখা গেলে অনেক ভালো ফলন পাওয়া যেত। কারণ বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি বিঘায় ১৮-২০ মণ হারে ফলন হচ্ছে। তবে বাজারে ধানের দাম বর্তমানে অনেক কম। রকমভেদে প্রতি মণ ধান ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সবকিছু সামলে জমির ফসল ঘরে তোলায় এখন প্রতিটি কৃষক পরিবারের জন্য একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই কৃষক আরো জানান, আধা পাকা ধানে চিটা বেশি হয়। তারপরও ধান কাটতে হচ্ছে। কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু সূত্রধর জানান, বিআর-২৮ জাতের ধান পুরোপুরি কাটার সময় হয়েছে। কিছু জাতের ধান কাটতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে শতকরা ৮০ ভাগ পাকা ধান দ্রæত কেটে ফেলতে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মুঈদ বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে কৃষকদের ২১ শতাংশের মতো ধান কাটা হয়েছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছি ক্ষেতে ধান যদি ৮০ শতাংশ পেকে যায় তাহলেও কৃষক যেন তা কেটে ফেলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।