Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

টাকার লোভে খুন!

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৯, ১২:১০ এএম


‘মামির কাছে ত্রিশ হাজার টাকা চাই। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় পকেট থেকে ছুরি আর খেলনা বন্দুক দেখিয়ে তাকে ভয় দেখাই। এতেও তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করি।’ এভাবে ব্যবসায়ী পতœী রোকসানা বেগম মণিকে নিষ্ঠুরভাবে খুনের বর্ণনা দেন মো. সোহেল (৩৫)। আলোচিত এই খুনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার গভীর রাতে মইজ্জ্যারটেক থেকে গ্রেফতার মো. সোহেল বুধবার বিকেলে মহানগর হাকিম মো. খাইরুল আমীনের কাছে জবানবন্দি দেন। পুলিশ তার দেখানো মতে রক্তমাখা ছুরি ও লুণ্ঠিত ১১ ধরনের মালামাল উদ্ধার করেছে।
বন্দরনগরীর বনেদি সওদাগরী পাড়া খাতুগঞ্জের কোরবানিগঞ্জে পাঁচতলা ভবনের চারতলার একটি বাসায় খুন হন রোকসানা বেগম মণি। ছুরিকাঘাতে আহত হন তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে আব্দুল আজিজ (২১)। রোকসানা গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এম এ কাশেম ট্রেডিংয়ের মালিক আবুল কাশেমের স্ত্রী। খুনের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে গেলে ছুরিকাঘাতে আহত হন তাদের এক প্রতিবেশী আবদুস সোবহান। গুরুতর আহত রোকসানার পুত্র আব্দুল আজিজের অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ব্যবসায়ী কাশেম জানান, সোহেল তার বোন জামাইয়ের চাচাত বোনের ছেলে এবং ৩৫ নম্বর বক্সীর হাটে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা হাজী নুরুল হকের আপন ভাগ্নে।
আত্মস্বীকৃত খুনি সোহেলের জবানবন্দির বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, সোহেল টাকার লোভে কোরবানিগঞ্জে আবুল কাশেমের বাসায় যান। যাওয়ার সময় তিনি একটি ছুরি ও খেলনা পিস্তল নিয়ে গিয়েছিলেন ।
আমেনা বেগম বলেন, টাকা না দেয়ায় সোহেল ছুরি ও খেলনা পিস্তলটি দেখিয়ে রোকসানাকে ভয় দেখান। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এসময় ঘরের আলমারি ভেঙ্গে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার, তেলের ডিও, রোকসানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে নেন।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ভবনটিতে সিসি ক্যামেরা ছিল। তার ফুটেজ দেখে সোহেলকে শনাক্ত করা হয়। তার আগে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাজের বুয়া ইয়াসমিন ও প্রতিবেশীদের বর্ণনার সাথেও আসামির চেহারার মিল পাওয়া যায়। সোহেলকে গ্রেফতারের পর তারা বাসা থেকে লুট করা একটি ল্যাপটপ, সিম, স্বর্ণের ও ইমিটেশনের অলঙ্কার, সিটি গ্রæপের ১২টি ডিও উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে রাস্তা থেকে ছুরি, নিউ পার্ক বিল্ডিং থেকে কাপড়, খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, খুনের পর সোহেল তার রক্তমাখা জামা-কাপড় পাল্টে পরনে থাকা গেঞ্জি, প্যান্ট, স্যান্ডেল ভবনের তৃতীয় তলার বাথরুমে রেখে দেয়। তার খোঁজে পুলিশ যখন আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল তখন সে ওই ভবনেই ছিল। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের পর সে ভবন থেকে নেমে তার সাথে থাকা ব্যাগটি নিচে ফেলে দেয়। ১০ টাকা দিয়ে একটি বাজারের ব্যাগ কিনে সে ব্যাগে লুট করা মালামালগুলো নিয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় চলে যায়। টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর অর্থকষ্টে পড়েন তিনি। ২৮ হাজার টাকা ঘর ভাড়াও বকেয়া হয়ে গিয়েছিল। সোহেল পুলিশকে বলেন, বছর দুয়েক ধরে তিনি ইয়াবায় আসক্ত। রোকসানার বাসায় খুন করতে যাওয়ার আগে তিনটি ইয়াবা সেবনের কথাও পুলিশের কাছে স্বীকার করে সোহেল। জবানবন্দি দেয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোহেল চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী গ্রামের ঈদ পুকুরিয়ার জামাল উদ্দিনের পুত্র। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ